২২ গজের সেলুলয়েড : জ্যোতিষী নাঈম আর 'বল' দাও মোরে 'বল' দাও
ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে!
‘বল দাও মোরে বল দাও’
মোস্তাফিজকে মিডউইকেট দিয়ে মারা ছয়টা গিয়ে পড়ল গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের ওপরের তলায়। তবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না সেটি। চতুর্থ আম্পায়ার গাজি সোহেল বলের বাক্স হাতে ছুটে এলেন, সেখান থেকে একটা বল বেছেও নিয়েছিলেন অন-ফিল্ড আম্পায়ার মাসুদুর রহমান। তবে এরই মাঝে স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো তানভীর আহমেদের কাছে এসে পড়েছে সেই হারিয়ে যাওয়া বল, সোহেলকে তাই আবার সেটি ফিরিয়ে দিলেন মাসুদুর। দাসুন শনাকা এরপর ওয়াইড লং-অন ও লং অন দিয়ে আরও দুটি ছয়ের পর ফ্রি হিটে খেললেন মিডউইকেটের ওপর দিয়ে। এবার আর গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের ওপরের তলায় নয়, গিয়ে পড়লো ছাদে। এক, দুই ড্রপের পর বল হারিয়ে গেল দৃষ্টিসীমা থেকে। সোহেল আবারও বলের বাক্স হাতে ছুটলেন, এবার আর তাকে ‘নিরাশ’ করলেন না মাসুদুর!
ড্রোন ওড়ে, স্পাইডার-ক্যাম নড়ে না
প্রথম ম্যাচের তখন মিনিট দুই-তিনেক বাকি। এক টেকনিশিয়ান তখনও কিছু একটা ঠিকঠাক করার চেষ্টা করছেন স্পাইডার-ক্যামের। সেটি নিচে নেমে এসেছে, সেই টেকনিশিয়ান তার গায়ে হাত বুলিয়ে ঠিকঠাক হতে বলছেন! যেন হ্যারি পটার ও প্রিজনার অফ আজকাবানের সেই হিপোগ্রিফ বাকবিক সেটি- তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে বিপিএলের প্রথম ম্যাচে ‘বাকবিক’ বা ‘স্পাইডার ক্যাম’ উড়লো না, ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল এক জায়গায়। আদতে দাঁড়িয়ে থাকা বলাটা ভুল হলো, সুতোর ওপর ঝুলে রইল এক জায়গায়। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য সেটি দাপিয়ে বেড়ালো পুরো মাঠই।
স্পাইডার ক্যাম অর্ধেকটা সময় ব্যস্ত থাকলেও ড্রোন ব্যস্ত থাকলো পুরোটা সময় জুড়েই। আর জিং বেল ও স্টাম্প প্রথম ম্যাচে দিনের আলোয় তেমন দৃশ্যমান না হলেও পরের ম্যাচে জ্বলজ্বল করলো ঠিকই। বিপিএল জ্বলতে পারবে এবার?
যদি কাগজে লিখো নাম…
টসের সময় একাদশের একটা তালিকা ম্যাচ রেফারির কাছে জমা দেন দুই অধিনায়ক। সেটা পরে আসে সংবাদকর্মীদের কাছে। প্রথম ম্যাচে সিলেট-চট্টগ্রামের ম্যাচেও হলো তেমনই। তবে চট্টগ্রামের তালিকায় চোখ পড়ে জাগলো বিস্ময়। সেটি যেন একধাক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে গেল পাড়ার টুর্নামেন্টে, যেখানে হাতে লিখেই হতো সব! ম্যানেজার ফাহিম মুনতাসিরের সই করা সেই কাগজটিতে ক্রিকেটারদের নাম হাতে লেখা, প্রিন্ট করা আর হয়ে ওঠেনি। শুধু তাই নয়, প্রথা অনুযায়ী ম্যানেজারের সঙ্গে অধিনায়কের স্বাক্ষর থাকলেও এখানে ছিল না পরেরটি।
জ্যোতিষী নাঈম
নাঈম শেখ টিকে ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ, ততক্ষণে রংপুর অবশ্য হারিয়ে ফেলেছে প্রায় সবকিছুই। সৌম্য সরকারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে শেষ মুহুর্তে রিভিউ নিয়েছিলেন। টিভি আম্পায়ার শরফউদ্দৌলা স্নিকো দেখছেন যখন, নাঈম তখন হাঁটা দিলেন। মাঠে বড় পর্দায় তখন স্পন্সর ভেসে আছে- মানে রিভিউয়ের রিপ্লে দেখানোর কথা থাকলেও দেখানো হচ্ছে না। নাঈম কেন হাঁটা দিলেন, সেটা অবশ্য স্পষ্ট নয়, হয়তো হুট করে বুঝে গেছেন- আউট হওয়া ছাড়া কপালে আর কিছু নেই তার। শুধু যে নাঈম উঠে গেছেন তা নয়, নেমে পড়েছেন পরের ব্যাটসম্যান তাসকিন আহমেদও। মাঠের দুই আম্পায়ার ডেকে যাচ্ছেন নাঈমকে, এবার তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন চতুর্থ আম্পায়ারও। ছুটে গিয়ে নাঈমকে থামালেন তিনি, ততক্ষণে অবশ্য শরফউদ্দৌলা তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন তানভীরকে।
এমন যে হবে, নাঈম তো আগেই বুঝে গিয়েছিলেন।
হাত ফসকায়, পা ফসকায়
ক্রিসমার সান্টোকি নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে যে ওয়াইড দিলেন, সেটি শুধু সীমিত ওভারে নয়, দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেটেও আম্পায়ারকে দুই হাত প্রসারিত করতে বাধ্য করতে পারে। রিটার্ন ক্রিজের ওপর স্টাম্প বসালেও যে লেগস্টাম্পের বাইরে দিয়ে যাওয়ার কথা সেই বলের! হাত ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল নিশ্চয় বলটা। তবে ফসকানোর এই শেষ নয়। পঞ্চম বলে গিয়ে সান্টোকির পা-ও ফসকে গেল যেন। এবার তার ল্যান্ডিং ফুট ল্যান্ড করলো বিপদসীমানার প্রায় একহাত বাইরে- আম্পায়ার এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এটি যে নো তা যেন বুঝতে পারবেন! সান্টোকি এরপর একটা উইকেট নিলেন, পরে ওয়াইড দিলেন আরও তিনটি।
আর শেষ পর্যন্ত তো সান্টোকির হাত-পায়ের মতো ফসকে গেল সিলেটও।