'ইয়র্কার হারিয়ে ফেলেছে মোস্তাফিজ'
সময়টা আসলেই ভালো যাচ্ছে না মোস্তাফিজুর রহমানের। বেশ কিছুদিন ধরে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে। বিপিএলের প্রথম ম্যাচেও কাল রংপুরের হয়ে শুরুটা ভালো করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক ওভারে গড়বড় করে ফেলেছেন সবকিছু। রপুর রেঞ্জার্সের মেন্টর ও জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশারও বলছেন, মোস্তাফিজ এখন আর আগের মতো ইয়র্কার দিতে পারেন না।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কাটারের সঙ্গে ইয়র্কারটাও ভালোভাবে ব্যবহার করতেন মোস্তাফিজুর। ২০১৬ আইপিএলে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে রাসেলের স্টাম্প উড়িয়ে নেওয়ার দৃশ্যটা অনেকের চোখে লেগে থাকার কথা। কিন্তু গত কিছুদিনে সেটা দিতে গিয়ে ফুলটস না হয় হাফ ভলি হয়ে যাচ্ছে মোস্তাফিজের। দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ আর ভারত সফরেও খুঁজে পাওয়া যায়নি আগের মোস্তাফিজকে, আটের বেশি গড়ে ইকোনমি রেটও সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। আজ মিরপুরে হাবিবুলের কন্ঠে যেন একটু হতাশাই, ‘মোস্তাফিজ এক বছর ধরে মিসিং হয়ে যাচ্ছে। মোস্তাফিজের বোলিংয়ে এখন ইয়র্কার নেই। সে ইয়র্কার পাচ্ছে না। আগে একটা দারুণ ইয়র্কার ছিল বোলিংয়ে। স্লোয়ার বল এখনও আছে। পেসও আস্তে আস্তে বাড়ছে। এখন মোটামুটি ভালো পেসেই বল করছে। ইয়র্কার মিসিং। সে একটু বেশি প্রেডিক্টেবল হয়ে যাচ্ছে। এটাই আমার কন্সার্ন। মনে হছে আমার কাছে। ব্যাটসম্যানরা ওকে পড়ে ফেলছে যে ও কী করতে যাচ্ছে।’
আরেকটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটু পরিষ্কার করলেন আরেকটু, ‘আগে একজন জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানের সঙ্গে যখন আমার কথা হচ্ছিল, মুস্তাফিজের ব্যাপারে। আমি তখন তাকে বললাম তুমি সামনে গিয়ে দাঁড়াও। সে তো প্রধানত কাটার দিবে। আমি তাঁকে সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাটিং করতে বললাম। তখন ও ১৪০ এ ইয়র্কার মারে। মুস্তাফিজ নিয়ে চিন্তাভাবনা তখন এমন ছিল। যে সামনে দাঁড়াবো, সে অনেক জোরে ইয়র্কার মেরে দিবে। ওইটা এখন আর নেই।’
কিন্তু সমস্যাটা কী হচ্ছে মোস্তাফিজের? হাবিবুলের মনে হচ্ছে, মোস্তাফিজ নিজেকে নিয়ে যথেষ্ট ভাবছেন না,
‘আমার মনে হচ্ছে ওকে চিন্তা করতে হবে। আমরা ব্যাটসম্যানরা, বোলাররা চিন্তা করি ম্যাচ শেষে যে কী হচ্ছে। ইটস হাই টাইম ফর হিম ভালো করছি বা এসব চিন্তা না করে ব্যাটসম্যান আমাকে পড়ে ফেলছে বা আমাকে দ্বিতীয় পরিকল্পনায় যেতে হবে। কোচ হয়তো তাকে বলবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্রিকেটারদেরও বোঝা উচিত আমার কীভাবে বোলিং করা উচিত। কাল যদি দেখি দুই ওভার সে দারুণ বোলিং করেছে। শেষ দুই ওভারে সে অনেকটা প্রেডিক্টেবল। একই লেন্থে বোলিং করছে, একইভাবে মার খাচ্ছে। এমন তো হবেই। টি-টোয়েন্টিতে শানাকা তো দারুণ ব্যাটসম্যান। মোস্তাফিজ ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা করছিল না।’ কাল অবশ্য শুরুটা দারুণ হয়েছিল মোস্তাফিজের। প্রথম তিন ওভারে দিয়েছিলেন ১২ রান। এরপর শানাকা তার এক ওভার থেকেই নিলেন ২৫ রান। এর মধ্যে একটি ছয় আছড়ে ফেলেছেন মাঠের বাইরে।
মোস্তাফিজের ফর্ম যে সবার জন্য দুশ্চিন্তা, সেটাও স্বীকার করলেন হাবিবুল, ‘সবার জন্যই তো সমস্যা। সে কিন্তু উইকেট পাচ্ছে। এখনও কিন্তু পাঁচ উইকেট পাচ্ছে। শেষ এক বছরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ও। কিন্তু সে খরুচে বোলার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ডেথ বোলার কিন্তু মুস্তাফিজ। সে যদি খরুচে বোলিং করে তাহলে কিন্তু পুরো দলের ওপরেই চাপ চলে আসে। সে স্পেশাল বোলার। চাওয়াটা একটু বেশি থাকে। ও যদি খরুচে হয় তাহলে বাকিদের দিয়ে কভার করা মুশকিল।’
হাবিবুল এখনো বিশ্বাস করেন মোস্তাফিজ স্পেশাল একজন বোলার, ‘সে স্পেশাল বোলার এটা আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু তাঁকে এটা দিন দিন প্রমাণ করতে হবে। সে কিন্তু পাঁচ উইকেট পাচ্ছে। মানে উইকেটও পাচ্ছে। কিন্তু আগে ইকোনমিক্যাল থাকতো। এখন খরুচে হয়ে যাচ্ছে।’