মাহেদী-রাঙা বিকেলে রুদ্ধশ্বাস জয় পেল ঢাকা
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ১৬০/৩, ২০ ওভার
ঢাকা প্লাটুন ১৯.৫ ওভারে ১৬১/৫
ফলঃ ঢাকা ৫ উইকেটে জয়ী
শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ৮ রান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিলেন মুমিনুল, ক্রিজে আফ্রিদি। সৌম্যের পরের বলটা ওয়াইড ইয়র্কার, কোনো রান হলো না তাতে। আর বলে দরকার ৭ রান, সৌম্যের পরের বলটা লো ফুলটস। সেটি সীমানার ওপারে আছড়ে ফেললেন আফ্রিদি, পরের বলে আবার ডট। দুই বলে যখন ১ রান দরকার, সেটি পেয়ে গেলেন আফ্রিদি। ঢাকা প্লাটুন পেল ৫ উইকেটের জয়।
শেষটা আফ্রিদি আর মুমিনুল করলেও ঢাকার আজকের জয়টা অনেকটাই মাহেদীময়। বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট, কিন্তু আসল ঝলকটা দেখিয়েছেন ব্যাট হাতে। শুরুর চমকটা দিয়েছে কুমিল্লা, বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচে বল করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট পেয়ে গেছেন রবি। উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়েছেন বিজয়, ফিরেছেন কোনো রান না কর। প্রথম ওভারে ১ রান দিয়ে উইকেট পেয়ে গেলেন রবি।
তৃতীয় ওভারে মাহেদী চার-ছয় মেরেছিলেন রবিকে। কিন্তু ঝড়টা জমিয়ে রেখেছিলেন পঞ্চম ওভারের জন্য। প্রথম বলে কোনো রান হয়নি, পরের বলে চার রান। এরপরের বলটা ছয় মারলেন মাহেদী, রাউন্ড দ্য উইকেটে এলেন রবি, তাতেও লাভ হলো না। পরের দুই অল লেগ স্টাম্পের ওপর, দুই বলেই ছয়। শেষ বলে আবারও ছয়, এক ওভার থেকে ২৮ রান নিলেন মাহেদী। ৫ ওভার শেষেই ঢাকার স্কোরকার্ডে ৬০ রান।
তখন ঢাকা এই রান হেসেখেলে টপকে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। মাহেদী মাত্র ২২ বলেই পেয়ে গেলেন ফিফটি, ৮ ওভার শেষে ৭৮ রান উঠে গেছে ঢাকার। এরপরেই ২৯ বলে ৫৯ রান করে আল আমিনের বলে আউট হয়ে গেলেন মাহেদী। এর পরেই ম্যাচে ফিরল কুমিল্লা। পরের ওভারে মুজিবের প্রথম চার বল ডটের পর ইনসাইড এজে বোল্ড আসিফ আলী, পরের বলে এলবিডব্লু জাকের আলীও। তামিম ও মুমিনুল এরপর একটু সতর্ক হয়ে গেলেন, রান রেট তাই বাড়ছিল। সেই চাপেই ৪০ বলে ৩৪ রান করে সৌম্যের বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিলেন তামিম। আফ্রিদি এলেন, সঙ্গে মুমিনুল। শেষ ৩ ওভারে দরকার ২৬ রান। মুজিবের বলে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। হ্যাটট্রিকের উদযাপন করছিলেন আফগান স্পিনার, কিন্তু রিভিউতে দেখা গেল বল স্টাম্পে লাগেনি। সুযোগটা কাজে লাগালেন আফ্রিদি, ওই ওভারে ৬ মেরে সমীকরণটা সহজ করে ফেললেন। এরপর শেষ ওভারে ম্যাচটা জমলেও সেটি ঢাকার পক্ষেই গেছে।
আজ অবশ্য চট্টগ্রামের উইকেট যেন বদলে গেল, অন্তত শুরুর সময়ে উইকেট ছিল বেশ ধীরগতির। তবে সেখানেই নিজের টাইমিং খুঁজে নিলেন ভানুকা রাজাপাকসা। সেঞ্চুরি না পেলেও ৬৫ বল খেলে অপরাজিত থাকলেন ৯৬ রানে। রাজাপাকসা ছাড়া বাকি কুমিল্লা ব্যাটসম্যানরা ৫৭ বল খেলে করেছেন ৪৯ রান, রাজাপাকসের ইনিংসের মাহাত্ম্য কুমিল্লার কাছে তাই বেড়ে যাচ্ছে আরও। সব মিলিয়ে ঢাকাকে আটকাতে বোর্ডে ১৬০ রান তুলেছে কুমিল্লা।
রাজাপাকসা অবশ্য খেলেছেন ‘দ্বিতীয়’ জীবনে, ২০ রানে ব্যাটিংয়ের সময় ওয়াহাব রিয়াজকে ফ্লিক করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন, চলে গিয়েছিলেন ড্রেসিংরুমেই। আম্পায়ার নো-বল চেক করে রিয়াজের ফ্রন্ট ফুট লাইনের ভেতরে পাননি, ফলে ডেকে পাঠানো হয়েছিল রাজাপাকসাকে। নতুন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি রাব্বি ক্রিজে এসে গিয়েছিলেন, তাকে ফিরিয়ে দিয়ে রাজাপাকসা এসে যখন আবারও ঢাকা ক্রিকেটারদের আম্পায়ারদের সঙ্গে আলোচনা পেরিয়ে আবার খেলা শুরু করলেন, পেরিয়ে গেছে বেশ কিছুটা সময়।
ফিরে এসে শুরুতে ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় নিয়েছিলেন। তবে ধীরে ধীরে এ উইকেটে ব্যাটিংয়ের ছন্দটা খুঁজে পেয়েছেন, খেলেছেন দারুণ এক ইনিংস। ইয়াসির রাব্বিকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে তুলেছেন ১০৩ রান, মাত্র ১০.৩ ওভারে। শেষ বলে ৪ রান প্রয়োজন ছিল রাজাপাকসার সেঞ্চুরির জন্য, বলে ব্যাট লাগাতে পারেননি তিনি। তবে ৯৬ রানের ইনিংসে ৪টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৭টি ছয়। রাব্বি ২৬তম বলে গিয়ে পেয়েছিলেন প্রথম বাউন্ডারি, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ২৭ বলে ৩০ রান করে।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মাশরাফির প্রথম ওভারেই কুমিল্লা তুলেছিল ১৪ রান, সৌম্য সরকারের দুই চারের কল্যাণে। পরের ওভারে মাহেদি হাসান এলেন, বদলে গেল খেলার চিত্র। মাহেদি শেষ পর্যন্ত বিপিএলের এ আসরের সবচেয়ে কিপটে বোলিং করেছেন, ৪ ওভারে ৯ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট।
সৌম্য স্লগের চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে হয়েছিলেন বোল্ড, ৭ বল খেলে কোনও রান না করে স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন সাব্বির রহমানও। ডাভিড মালানও খুব একটা স্বস্তির সময় কাটাননি মাঝে, ১৭ বলে ৯ রান করে তিনি ফিরেছেন শাদাব খানের বলে বোল্ড হয়ে। তবে এরপর আর উইকেট হারায়নি কুমিল্লা, রাজাপাকসার সেই ইনিংসের সঙ্গে রাব্বির সাথে তার জুটির কল্যাণে।
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স
ভানুকা রাজাপাকসে, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, ডাভিড মালান, দাসুন শনাকা (অ), ইয়াসির আলি রাব্বি, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (উ), রবিউল ইসলাম রবি, মুজিব উর রহমান, আল-আমিন হোসেন, সুমন খান
ঢাকা প্লাটুন
তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক, এনামুল হক বিজয় (উ), জাকের আলি, আসিফ আলি, মাহেদি হাসান, শাদাব খান, শাহিদ আফ্রিদি, হাসান মাহমুদ, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অ), ওয়াহাব রিয়াজ