জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে ভাবনা নেই, 'ব্রো' ডাকের মাঝে ভালবাসা খুঁজে পাচ্ছেন ইমরুল
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার চলাফেরা থাকলে ইমরুল কায়েসের একটা সরব উপস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ে নজরে আসতে পারে আপনার। অবশ্য ইমরুল জিমি নিশামের মতো কিছু করে সরব, ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। বরং ইমরুলকে নিয়ে সরব থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ইমরুল কায়েসের ক্যারিয়ার অনুসরণ করলেও আপনি জানবেন- জাতীয় দলে যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকেন তিনি। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে ৩৯ টেস্ট, ৭৮ ওয়ানডে, ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
টেস্টে সর্বশেষ ভারত সফরেও খেলেছেন, তবে ওয়ানডে শেষ খেলেছেন ২০১৮ সালে। টি-টোয়েন্টি তারও আগে, ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। গত বিপিএল চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অধিনায়ক ছিলেন, তবে ১৪ ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ১৮৩ রান। এবার ৮ ম্যাচেই করে ফেলেছেন ২৮৯ রান। ডাডিভ মালানের ৩০০ রানের পর এবার সবচেয়ে বেশি রান তারই।
ইমরুল অবশ্য এবার শুরুতে অধিনায়ক ছিলেন না। মাহমুদউল্লাহর চোটের কারণে প্রথমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়ক করা হয়েছিল রায়াদ এমরিতকে, পরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইমরুলকে। অধিনায়কত্ব পেয়ে নিজের পারফরম্যান্সে গতবার কিছু ভুলত্রুটি ছিল স্বীকার করে ইমরুল বলছেন, এবার ব্যাপারগুলিকে ভিন্নভাবে সামলানোর চেষ্টা করছেন। তবে জাতীয় দলে বিপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে ফিরবেন- এমন কিছু ভাবছেন না তিনি। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সেই উপস্থিতি? ইমরুল সেখানে খুঁজে পাচ্ছেন শুধুই ভালবাসা!
ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ইনিংসের পর যখন সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ইমরুল এসেছেন, মাশরাফি তখন কথা বলছেন। তার সামনেই ইমরুলের প্রশংসা করে মাশরাফি জানালেন শুভকামনা, আবার যদি জাতীয় দলে ফিরতে পারেন ইমরুল, তাহলে যাতে এই পারফরম্যান্সটা নিয়ে যেতে পারেন সেখানে।
ইমরুল মাশরাফির সে কথাকে প্রেরণা হিসেবে নিচ্ছেন। তবে আপাতত জাতীয় দলে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা বা এরকম কিছু নিয়ে ভাবতে চান না, “ভাই দেখেন, আমি টি-টোয়েন্টি খেলবো, এই করবো ওই করবো- এসব আমি বলতে চাইনা। একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমি যেখানেই খেলি, জাতীয় দল, বিপিএল, প্রিমিয়ার লিগ সব জায়গায় রান করার চেষ্টা করি। কখনো সফল হই কখনো হইনা। একজন ক্রিকেটারের সবসময় ভালো যায়না।
“আমি আসলে ওইভাবে চিন্তা করছিনা যে এখানে ভালো করলে জাতীয় দলে সুযোগ পাবো। আমি আমার কাজটা করে যাই, এরপর টিম ম্যানেজমেন্ট যদি মনে করে, উনারা যদি ভাবে এখন আমাকে দিয়ে হবে, তখন নিলে নিবে। না নিলেও আমার কোনো সমস্যা নাই।”
চট্টগ্রামে বিপিএলের উইকেটের সঙ্গে অন্তত মিরপুরের আজকের দিনের উইকেটে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে ছিল বেশ পার্থক্য। তবে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে মূলত ইমরুলের ওই ইনিংসই, যে ইনিংস চট্টগ্রামকে আটকে রেখেছে ধস থেকে। ইমরুলের পরিকল্পনাও ছিল তেমনই, “এটাই চিন্তা করছিলাম একজন থিতু ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলে ম্যাচটা শেষ করে আসা সম্ভব, ম্যাচ বের হয়ে যায় (এসব ক্ষেত্রে)। কিন্তু আমরা স্নায়ুচাপে আতঙ্কিত হয়ে গেলে বা থিতু ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলে কঠিন হয়ে যায়। আমি যখন আজ ব্যাটিং করতে গিয়েছি তখন চিন্তা করছিলাম যে কতো বল খেলছি বা আমার স্ট্রাইক রেট কত- এসব নিয়ে মাথা ঘামাব না। আমার পুরো পরিকল্পনা ছিল, আমি ম্যাচ শেষ করবো।”
জাতীয় দলে ফেরা, নিজের পারফরম্যান্স, অধিনায়কত্ব, এমনকি ইনিংসের শেষদিকে মারা ছয়টি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় কিনা- সেসব প্রশ্নের উত্তরের মাঝে ইমরুল দিলেন সেই প্রশ্নের উত্তরও। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে ‘ট্রল’ করছেন, তাদের জন্যও ইমরুলের পারফম্যান্স জবাব কিনা।
“কেউ যদি আমাকে ইমরুল ব্রো বলে মজা পায়, পাক না। আমার কোনও আফসোস নাই। ভালবেসে ইমরুল ব্রো ডাকছে, সমস্যা কী?”
সমস্যা নেই তাহলে। ইমরুল বলছেন।