রিয়াজের ৮ রানে ৫ উইকেটে বিধ্বস্ত রাজশাহী
ঢাকা প্লাটুন ১৭৪/৫, ২০ ওভার
রাজশাহী রয়্যালস ১০০ অল-আউট, ১৬.৪ ওভার
ঢাকা ৭৪ রানে জয়ী
বোলিংয়ে প্রথম ১৪ ওভার আর ব্যাটিংয়ে প্রথম ৩ ওভার রাজশাহী এগিয়ে ছিল ঢাকার চেয়ে। তবে প্রথম ইনিংসে শেষ ৬ ওভার, আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪র্থ ওভারে বদলে গেল চিত্রটা। ৫ উইকেটে ৯৫ রান থেকে আসিফ আলির সঙ্গে তামিম ইকবালের ঝড়ে ১৭৪ রান তোলা ঢাকা প্রথম ৩ ওভারেই পরে দিয়ে ফেলেছিল ৩৯ রান। ওয়াহাব রিয়াজ ইনিংসে চতুর্থ ওভারে এসে ট্রিপল উইকেট মেইডেন নিলেন, রাজশাহী ম্যাচ থেকে ছিটকে গেল যেন তখনই।
মাশরাফির প্রথম ওভারে ১৮ রান তুলেছিলেন লিটন দাস ও আফিফ হোসেন। পরের ২ ওভারে তারা তুললেন আরও ২১ রান। রিয়াজ এলেন, তাদের ব্যাটিংয়ের মধুচন্দ্রিমা শেষ হয়ে গেল। ওভার দ্য উইকেট থেকে তার ন্যাচারাল অ্যাঙ্গেলের ডেলিভারিতে খোঁচা দিয়ে ফিরেছেন লিটন, এক বল পর কট-বিহাইন্ড কাপালিও। শোয়েব মালিক দুই বল খেললেন, এরপর ডাউন দ্য লেগে হলেন গ্লাভড। সে উইকেটটা ঢাকা পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। ৩৯ রানে ০ উইকেট থেকে ৩৯ রানে ৩ উইকেট- ৬ বলের ব্যবধানে লড়াই থেকে রাজশাহীকে ছিটকে দিলেন রিয়াজ।
তার বোলিং এমনই আত্মবিশ্বাস আনল ঢাকা ক্যাম্পে, ১৩তম ওভারের আগে রিয়াজকে দ্বিতীয় ওভারের জন্য আনাই হলো না! রিয়াজ ফিরলেন, নিলেন আরেকটি উইকেট। নাহিদুল ইসলাম হলেন কট-বিহাইন্ড, বদলি হিসেবে উইকেটকিপিং করতে নেমে রেকর্ড করে ফেললেন জাকেরও। বিপিএলে এর আগে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫টি ডিসমিসাল ছিল মোহাম্মদ শাহজাদ ও উমর আকমলের। নাহিদুলের ক্যাচ নিয়ে জাকেরের ডিসমিসাল হলো ৬টি- সবগুলিই ক্যাচ।
রাজশাহী অবশ্য রিয়াজের বোলিংয়ে ফেরার আগেই শেষ হয়ে গেছে মোটামুটি। রিসের বলে স্লগ করতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে ২৩ বলে ৩১ রান করে ফিরেছেন আফিফ, নাহিদুলের সঙ্গে ক্রিজের মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগে রান-আউট হয়েছেন বোপারা। আর হাসান মাহমুদের বলে রাসেল এজড হয়েছেন, দারুণ রিফলেকশনে সে ক্যাচ নিয়েছেন জাকের। আর রেজা হয়েছেন রান-আউট।
তাইজুল ফিরেছিলেন শাদাবের বলে, আর শেষে রাব্বিকে বোল্ড করে পাঁচ পূর্ণ করেছেন রিয়াজ। ৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি, এর আগে টি-টোয়েন্টিতে তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ছিল ১৭ রানে ৫ উইকেট। বিপিএলে রিয়াজের চেয়ে ভাল বোলিং ফিগার আছে শুধু মোহাম্মদ সামির, ২০১২ সালে ৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।।
এর আগে আসিফ আলির ২৮ বলে ৫৫, তামিম ইকবালের ৫২ বলে ৬৮ রানের ইনিংসে ১৪ ওভারে ৯৫/৫ থেকে উড়াল দিয়ে ১৭৪ রান পর্যন্ত গেছে ঢাকা। মূলত ঝড়টা শুরু করেছিলেন আসিফ, তামিম যোগ দিয়েছিলেন পরে। আর তাতেই এলোমেলো হয়ে গেছে রাজশাহী, একসময় যারা ছিল দারুণ পজিশনে। অবশ্য আসিফ ও তামিম- দুজনের দেওয়া সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছে রাজশাহী।
১৩তম ওভারেই ছয়ে উঠে আসা মাশরাফি গোল্ডেন ডাকে ফিরেছিলেন, আগের বলে আরিফুল হকের উইকেট দিয়ে হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন ফরহাদ রেজা। এর আগে রবি বোপারাকে ছয়ের পর তার বলে ক্যাচ দিয়ে মাহেদি হাসান ফিরেছিলেন। ৭২ রানে ২ উইকেট থেকে হুট করেই ঢাকা পরিণত হয়েছিল ৮৪ রানে ৫ উইকেটে। মুমিনুলের আগে আসিফ-মাশরাফি এসেছিলেন এদিন। অবশ্য এরপর আর উইকেট হারায়নি তারা, ৬ষ্ঠ উইকেটে তামিম-আসিফ যোগ করেছেন ৯০ রান, মাত্র ৪৬ বলে।
১৫তম ওভারে রেজার কাছ থেকে ১৭ রান তুলেছিলেন আসিফ-তামিম, আসিফই মেরেছিলেন দুই চার ও এক ছয়। সে ওভার থেকেই উড়ান শুরু হয়েছিল ঢাকার। ২৩ রানে আসিফ রাব্বির বলে ক্যাচ তুলেছিলেন, তবে কল করেও শেষ পর্যন্ত সেটার ধারেকাছে যাওয়া থেকে অদ্ভুত কারণে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন রাব্বি নিজেই।
রেজার করা পরের ওভারে উঠেছে ২৩ রান। লং-অফ দিয়ে ছয়, কাভার দিয়ে চার, স্কয়ার লেগ দিয়ে ছয় মেরেছিলেন আসিফ, প্রতিটিই ছিল দারুণ টাইমিংয়ে। এরপর মিডউইকেট দিয়ে ছয়ে তামিম পার্টিতে যোগ দিয়েছেন, সে শটেই ৪৪ বলে ফিফটি হয়েছে তামিমের।
শুরুতে বেশ ধীরগতির থাকা তামিমের ইনিংসে প্রথম ছয় ওটিই। অবশ্য ফিফটির পরই রাসেলের বলে ক্যাচ তুলেও আফিফের কাছ থেকে বেঁচেছেন তামিম, শেষ পর্যন্ত তার ইনিংসটি ঢাকার জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে দারুণ মূল্যবান। আর আসিফ ফিফটি পূর্ণ করেছেন মাত্র ২৪ বলে, তামিমের মতো তিনিও মাইলফলকে গেছেন ছয় মেরে। শেষ ওভারে রাসেলকে তামিম আরেকটি ছয় মারলেও ৯ রানের বেশি তুলতে পারেনি ঢাকা। তবে টালমাটাল অবস্থা থেকে তারা গেছে দারুণ পজিশনে।
এর আগে শুরুতে কট-বিহাইন্ড হয়েছিলেন এনামুল হক বিজয়, রাসেলের বলে। লুইস রিসের বিপক্ষে রিভিউ খরচ করে ফেলেছিল রাজশাহী, রিস অবশ্য বোপারাকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন মিড-অফে। ১১ বলে ২২ রানের ক্যামিওর পর ফিরেছিলেন মাহেদিও।