• বঙ্গবন্ধু বিপিএল
  • " />

     

    শেষ ওভারের রোমাঞ্চের পর চট্টগ্রামকে আটকে দিল কুমিল্লা

    শেষ ওভারের রোমাঞ্চের পর চট্টগ্রামকে আটকে দিল কুমিল্লা    

    পুরো স্কোরকার্ড দেখুন


     

    চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৫৯/৬, ২০ ওভার 
    কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ১৬১/৮, ২০ ওভার 
    কুমিল্লা ২ উইকেটে জয়ী 


    লিয়াম প্লাঙ্কেটের শেষ বলে চার মেরে রোমাঞ্চকর জয়ে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সকে টিকিয়ে রেখেছেন মুজিব উর রহমান। শেষ ওভারে প্লাঙ্কেট দিয়েছেন ১৬ রান, মুজিবের আগে শেষ ওভারে কুমিল্লার নায়ক ছিলেন আবু হায়দার রনি। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক বদল করতে হয়েছিল থিতু ব্যাটসম্যান ডাভিড মালানকে, দ্বিতীয় বলে নাসুম আহমেদ ক্যাচ ধরতে এসেও চেষ্টা করেননি রনির ক্যাচ নিতে, উলটো হয়ে গিয়েছিল চার। পরের বলে প্লাঙ্কেটকে টেনে ছয় মেরে কুমিল্লাকে আশা জুগিয়েছিলেন রনি। 

    প্লাঙ্কেট ফিরে এসেছিলেন, অফস্টাম্পের বাইরে সরে গিয়ে খেলতে গিয়ে মিস করে বাই নিয়েছিলেন রনি। অবশ্য পরের বলে মালান রান-আউট হয়ে গেলে কুমিল্লার শেষ ব্যাটসম্যানের জন্য হয়ে যায় অল-আউট গেম। সানজামুল নামতে নামতেও শেষ পর্যন্ত সেখানে নেমেছেন মুজিব। কুমিল্লার চেয়ে অবশ্য বেশি দ্বিধা ছিল চট্টগ্রামের, ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান যেন ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিলেন মাঠ ও মাঠের বাইরের বার্তা সামলাতে গিয়ে। 

    শেষ বলটা বেশ তাড়াহুড়া করেই করলেন প্লাঙ্কেট, লেগ-মিডলের ফুলটস ঘুরিয়ে দিলেন মুজিব। ডিপ মিডউইকেট ছিল ফাঁকা, ওয়াইড লং-অনের ফিল্ডার নাগাল পাননি সেটির। কুমিল্লাও পেয়েছে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ জয়, টেবিলের শীর্ষে থাকা চট্টগ্রামকে হারিয়ে টিকে রয়েছে তারা। 

    তবে রানতাড়ায় মালান-সাব্বিরের জুটিতে বেশ ভাল অবস্থাতেই ছিল কুমিল্লা, শেষ ২৪ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। রায়ান বার্লকে টেনে মারতে গিয়ে সাব্বির রহমান ক্যাচ দিয়েছেন ১৭তম ওভারের প্রথম বলে, এরপর থেকেই বদলাতে শুরু করেছিল চিত্রটা। এরপর ডেভিড ভিসে বোল্ড হয়েছেন রুবেল হোসেনের বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে, ৭ বলে ১ রান করে। মাহিদুল অঙ্কন এসেছেন, রুবেলের শর্ট বলে ক্যাচ তুলে ফিরেছেন। ১৯তম ওভারে রানা দিয়েছিলেন ৮ রান। আর এরপরই তো শেষ ওভারের ওই রোমাঞ্চ। 

    রানতাড়ায় ১২ বলে ২২ রানের ঝড়ো ইনিংসের পর প্লাঙ্কেটকে টেনে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন স্টিয়ান ভ্যান জিল। মালানের সঙ্গে ৩১ রানের জুটির পর অদ্ভুতভাবে আউট হয়েছেন রবিউল ইসলাম রবি। মেহেদি হাসান রানার শর্ট বলটা নামিয়েছিলেন, তবে সেটি ইনসাইড-এজের পর যাচ্ছিল স্টাম্পের দিকে। রবি সেটি আটকাতে উদ্যত হয়ে যেন ধন্দে পড়ে গেলেন, ব্যাট, হাত নাকি পা ব্যবহার করবেন। এরই মাঝে তার পায়ে লেগে বল গিয়ে আঘাত করেছে স্টাম্পে। 

    বোলিংয়ে ভাল দিনটা ব্যাটিংয়ে অনূদিত করতে পারেননি সৌম্য, জিয়াউরকে স্লগ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। ১০ ওভারে ৭০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে মোতামুটি সাম্যাবস্থায় ছিল কুমিল্লা। মালান ঝড়টা শুরু করেছেন ১৪তম ওভারে গিয়ে। জিয়াউরকে লং অন ও লং-অফ দিয়ে দুই ছয়ের পর চার মেরে সে ওভারে তুলেছিলেন ২০ রান। প্লাঙ্কেটকে ছয় মেরে ফিফটি পূররণ করেছিলেন ৩৯ বলে। এরপরই সাব্বির রহমানের উইকেটে উলটো পথে হাঁটা শুরু করেছে কুমিল্লা। 

    বোলিংয়ে যেমন শেষে এসে চেপে ধরেও কুমিল্লাকে আটকাতে পারেনি চট্টগ্রাম, এর আগে ব্যাটিংয়ে দারুণ ভিত পেয়েও গড়তে পারেনি বড় স্কোর। লেন্ডল সিমন্স ও জুনাইদ সিদ্দিকের ১০৩ রানের ওপেনিং জুটির পরও ১৫৮ রানে আটকে গেছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স, শেষ ৯ ওভারে তুলতে পেরেছে মাত্র ৫৬ রান। ৩৪ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা লেন্ডল সিমন্সকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেকথ্রু দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার, টেবিল ঘুরে গেছে এরপরই। ১৩ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারানোর ক্ষত আর পূরণ হয়নি তাদের। 

    টসে হেরে ইমরুল কায়েসকে ছাড়া ব্যাটিংয়ে নেমে চট্টগ্রামের শুরুটা দারুণ করেছিলেন সিমন্স ও জুনাইদ, মুজিব উর রহমানের আঁটসাঁট ২ ওভারের স্পেলের পরও। পাওয়ারপ্লেতেই উঠেছিল ৫৪ রান, সে গিয়ারে ব্যাটিং চালিয়ে গেছেন আরও কিছুক্ষণ। প্রথম ২ ওভারে ১৬ রান দেওয়া সৌম্য ঝলক দেখিয়েছেন তৃতীয় ওভারে এসে, সিমন্সের সেই উইকেট নিয়ে। 

    ৩৭ বলে ৪৫ রান করা জুনাইদ রান-আউট হলে চট্টগ্রাম আরেকটু স্লাইড করে গেছে, পরের ২ ওভারে সৌম্যর বলে রায়ান বার্ল ও সানজামুল ইসলামের বলে চ্যাডউইক ওয়ালটন ফিরলে চট্টগ্রামের ধস যেন পূর্ণতা পেয়েছে। জিয়াউর রহমান নেমে গিয়ার বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন, ৪টি ছয়ে ২১ বলে তিনি করেছেন ৩৪ রান, এর মাঝে আল-আমিনকে এক ওভারেই মেরেছেন দুটি ছয়। মুজিবের বলে আবার জীবনও পেয়েছেন একটি। 

    তবে তার ইনিংসের পরও ১৫৮-এর বেশি তুলতে পারেনি কুমিল্লা। ৭ বলে ৪ রান করা অধিনায়ক নুরুল বোল্ড হয়েছেন ডেভিড ভিসের ইয়র্কার সামলাতে না পেরে, আর ৪ বলে ৪ রানের পর আল-আমিনকে হোয়্যাক করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন লিয়াম প্লাঙ্কেট।