রিটায়ার্ড আউট, অধিনায়কত্বে গড়বড় : কুমিল্লা-চট্টগ্রাম ম্যাচের শেষ ২৪ বলের নাটক
একদিকে বদলে যাচ্ছে বোলার, আরেকদিকে নেমেও উঠে যাচ্ছেন ব্যাটসম্যান। যেন ধন্দে পড়ে গেছেন সবাই, যেন চাপে পড়ে গেছেন সবাই। মাঠের ক্রিকেটার, ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক, বদলে যাওয়া অধিনায়ক, মাঠের বাইরে কোচ, টিম ম্যানেজমেন্ট। কুমিল্লা-চট্টগ্রামের ম্যাচ যেন এবারের বিপিএলকে পরিচয় করিয়ে দিল প্রায় বিস্মৃত এক অনুভূতির সঙ্গে- নখ কামড়ানো উত্তেজনা।
অবশ্য শেষ ৪ ওভারে এমন কিছুর ইঙ্গিত ছিল না। ২৪ বলে ২৬ রান, ৭ উইকেট- কুমিল্লার কাছে ব্যাপারটি জলবৎ-তলরং হওয়ারই কথা ছিল। তবে পরের ১২ বলে কুমিল্লা তুলতে পারলো ২ রান, হারিয়ে ফেললো ৩ উইকেট। এবং, ম্যাচে ফিরে এলো চট্টগ্রাম।
২ ওভার বাকি, চট্টগ্রাম অধিনায়ক নুরুলের হাতে অপশন তখন ২ ওভারে ২৩ রান দেওয়া পেসার মেহেদি হাসান রানা, ২ ওভারে ১৮ রান দেওয়া স্পিনার নাসুম আহমেদ, ৩ ওভারে ৩০ রান দেওয়া পেসার লিয়াম প্লাঙ্কেট, ৩ ওভারে ৯ রান দেওয়া লেগস্পিনার রায়ান বার্ল। স্ট্রাইকে ছিলেন আবু হায়দার। যে প্রান্তে ব্যাটিং করছিলেন, রনির সেখানে লেগসাইডের বাউন্ডারি অপেক্ষাকৃত ছোট। অবশ্য বাঁহাতি মালান স্ট্রাইকে গেলে তার লেগসাইড হয়ে যাবে বড়।
বার্লকে দিতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত বোলিংয়ে রানাকে আনলেন নুরুল। তবে সিদ্ধান্তটা কি নুরুলই নিলেন? ড্রেসিংরুমের দরজা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ- চট্টগ্রামের ‘আসল’ অধিনায়ক। ডাগ-আউটে ইমরুল কায়েস- চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক, চোটের কারণে এ ম্যাচে খেওছেন না যিনি। তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন কিছু। মাঠে নুরুলকে দেখাচ্ছিল এমন- যেন ধাঁধায় পড়ে গেছেন তিনি, সমাধান জানা নেই তার কাছে সেভাবে।
নুরুল অবশ্য বলছেন, মাঠের বাইরে থেকে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি তার কাছে, “নির্দেশনা তো বাইরে থেকে ভেতরে আসে না এমন। বার্ল আগে তিনটি ওভার করেছে। যেহেতু অপশন ছিল, রানা-প্লাঙ্কেট ছিল, কথা বলে রানাকে আনা হয়েছে।”
রানা সে ওভারে দিলেন ৮ রান।
"এমন ম্যাচের তো একটা রেশ থাকে ভাই", ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে আবু হায়দার রনি/বিসিবি
পরের ওভারে অবশ্য প্লাঙ্কেটই এলেন। তবে বোলিং শুরুর আগে সময় নিলেন বেশ কিছুটা। বৃত্তের ভেতর ও বাহিরের ফিল্ডার বেশ কয়েকবার অদলবদল হলো, শেষ পর্যন্ত ইনফ্রন্ট অফ স্কয়ারে বৃত্তের বাইরের ফিল্ডারদের রেখে বোলিং শুরু করলেন তিনি, ইঙ্গিত ছিল ফুললেংথের।
প্রথম বল করলেন সেরকমই।। মালান ড্রাইভ করেও সিঙ্গেলের বেশি নিতে পারলেন না, নেওয়ার চেষ্টাও করলেন না। পরের বলে রনি টেনে মারলেন, ক্যাচের জন্য ছুটলেন নাসুম আহমেদ। ওয়াইড লং-অনে তার জন্য চেষ্টা করলেন না বার্ল, তবে শেষ মুহুর্তে যেন নিজেকে সরিয়ে নিলেন নাসুম। শুধু ক্যাচ যে মিস হলো তা নয়, হয়ে গেল চারই।
চট্টগ্রাম যেন ভেঙে পড়লো তাতেই। এরপর প্লাঙ্কেটকে ছয় মারলেন রনি, পরের বলে হলো ১ রান বাই। রনি শুরুতে চিন্তা করেছিলেন মালানকে স্ট্রাইক দেবেন, তবে প্রথম বলে সিঙ্গেলের পর তেমন কিছু আর ভাবলেন না, “শেষে সিঙ্গেল দেওয়ার সুযোগ ছিল না। মেরে কীভাবে এগুনো যায় সেটা চেষ্টা করেছিলাম। মালানের জন্য সহজ হতো, লেগসাইড ছোট ছিল ওর জন্য। নতুন ব্যাটসম্যানের জন্য কঠিন হতো। এজন্য একটু হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম ওর রান-আউটের পর।”
মালান রান-আউট হয়ে ফিরে গেচ্ছেন এর আগেই। এরই মাঝে আরেক দফা ফিল্ড-সেটিং নিয়ে দোটানা, লং-অন/অফে থাকা চ্যাডউইক ওয়ালটন কিছু একটা বলছিলেন নুরুলকে, প্লাঙ্কেটের সঙ্গে কথা বলে। তবে সে যোগাযোগটা খুব দৃঢ় হলো বলে মনে হলো না।
এবার নাটক শুরু হলো কুমিল্লা ডাগ-আউটে।
নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে সানজামুল মাঠে ঢুকলেন, এরপর বেরিয়েও গেলেন। সানজামুল হয়ে গেলেন রিটায়ার্ড আউট! শেষ মুহুর্তে যে তার পরিবর্তে মুজিব উর রহমানকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রংপুর। ১ বল বাকি, ৩ রান প্রয়োজন, ৩ উইকেট আছে- সানজামুলকে ‘বলি’ দিলেন তারা। ক্রিজে মালানের রান-আউটে হতাশায় নুয়ে পড়া রনি ম্যাচশেষে এটি নিয়ে তেমন কিছু বলতে পারলেন না, “চিন্তা ম্যানেজমেন্ট জানে। আমি ভেতরে ছিলাম। আমার জানার কথা না।”
প্লাঙ্কেট শেষ বলের আগে তেমন কোনও সময় নিলেন না। মিডল-লেগে করলেন ফুলটস। মুজিব শুধু ঘুরিয়ে দিলেন। কাউ কর্নারে থাকা ফিল্ডার নাগাল পেলেন না। হতাশায় নুয়ে পড়া রনি উল্লাসে মাতলেন মুজিবের সঙ্গে।
আর চট্টগ্রাম তখনও যেন ধাঁধার ভেতর। কী হলো ঠিক যেন বুঝতে পারলেন না তারা।