• বঙ্গবন্ধু বিপিএল
  • " />

     

    ইংরেজি ভাষায় দখলের অভাব, খেলা বুঝতে না পারা- স্থানীয় ক্রিকেটারদের যেসব সমস্যা দেখছেন গিবস

    ইংরেজি ভাষায় দখলের অভাব, খেলা বুঝতে না পারা- স্থানীয় ক্রিকেটারদের যেসব সমস্যা দেখছেন গিবস    

    বাংদেশের স্থানীয় ক্রিকেটারদের মাঝে ইংরেজি ভাষাজ্ঞানসহ ক্রিকেট নিয়ে সার্বিক বোঝাপড়ার মানের কারণে সিলেট ক্রিকেটারদের সঙ্গে ঠিকঠাক কাজ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন সিলেট থান্ডারের হেড কোচ হার্শেল গিবস। তারা খুবই ‘টেম্পারামেন্টাল’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝতে না পারাটা বেশ হতাশ করেছে তাকে। আক্রমণ মানে বড় শট খেলা- এই মানসিকতা থেকে তাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

    এমনিতে সিলেট থান্ডারের সেই অর্থে সবচেয়ে ‘বড়’ তারকা তাদের হেড কোচ গিবসই। তবে তাদের পারফরম্যান্সটা ঠিক সুবিধার নয়। সিলেট পর্বে তারা এসেছে টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় বাদ পড়েই। তবে সার্বিক দিক দিয়ে বিপিএলের মান কেমন, সে প্রশ্নের জবাবেই ক্রিকেটারদের ইংরেজি ভাষার ওপর দখলের ব্যাপারটি টেনেছেন তিনি। 

    “স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য একটি বড় বাধা হলো, তাদের অনেকেই ইংরেজি বুঝে না। আমার জন্য তাই তাদেরকে অনেক কিছুই বোঝানো কঠিন। এটি খুবই হতাশার। আমি যখন কথা বলি, দেখি যে তারা শুনছে। কিন্তু দেখেই বুঝতে পারছি যে, এসব তাদের মাথায় ঢুকছে না। অনুধাবন করতে পারছে না”, বলছেন গিবস। 

    এক্ষেত্রে তরুণ ব্যাটসম্যান রুবেল মিয়ার প্রসঙ্গ টেনেছেন গিবস, “একটি উদাহরণ দেই, সেদিন রুবেল মিয়া ব্যাটিং ওপেন করেছে। এক পর্যায়ে তার রান ছিল ২৮ বলে ১৪। (স্ট্র্যাটেজিক) টাইম আউটের সময় আমি মাঠে গিয়ে তাকে বললাম, ‘হচ্ছেটা কী? ২৮ বলে ১৪  রান!’ সে শুনে কেবল মাথা নাড়ল। এটা তার দোষ নয়, কিন্তু বাস্তবতা।”

    “ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝতে না পারার বড় একটি উদাহরণ এটি। ২০২০ সাল চলে এসেছে এখন। এখনও যদি একজন ব্যাটসম্যান বুঝতে না পারেন যে ২৮ বা ২৫ বলে ১৪ রান করলে আমাকে সেখান থেকে চালিয়ে যেতে হবে, পুষিয়ে দিতে হবে, তাহলে খুবই হতাশার। হতে পারে, আমি খুব বেশি প্রত্যাশা নিয়ে এখানে এসেছিলাম। হতে পারে, স্থানীয় ক্রিকেটারদের মানসিকতা নিয়ে একটু বেশিই আশা ছিল আমার।”

    গিবস অবশ্য সমাধান দেখছেন আরও বেশি জ্ঞান বাড়ানোর মাঝেই, “খেলাটা নিয়ে তাদের সার্বিক বোঝাপড়ার মান আরও বাড়াতে হবে। একটা বড় ব্যাপার হলো, তারা খুবই টেম্পারামেন্টাল। ওদের কাছে কিছু ব্যাখ্যা করাই কঠিন আমার জন্য। কারণ তারা বুঝতেই পারে না।”

     


    এসব ব্যাপারে উন্নতি করতে পারলেই গড়পড়তা ক্রিকেটারের চেয়ে ভাল হওয়া যাবে, সাকিব আল হাসানের উদাহরণ দিয়ে গিবস মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটি, “বাস্তবতা হলো, গড়পড়তা মানের চেয়ে ভালো ক্রিকেটার তারাই, যারা ম্যাচ পরিস্থিতি ভালো পড়তে পারে। সাকিব আল হাসানের কথাই ধরুন, ক্রিকেট নিয়ে তার বোঝাপড়া ও ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝতে পারায় গত বছর দুয়েকে তার অনেক উন্নতি হয়েছে। এমনকি বিশ্বকাপে তার খেলার দিকে যদি তাকান, সে কিন্তু নিজেকে থিতু হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। গিয়েই ধুমধাম মারতে শুরু করেনি। তার ইনিংসগুলোর টাইমিং ছিল ভালো। এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলি স্থানীয় ক্রিকেটারদের বুঝতে হবে, যদি তারা নিজেদের খেলাকে পরের ধাপে নিয়ে যেতে চায়। এটিই খেলার মানসিক দিক।”

    গিবসের হতাশা আরও ফুটে উঠেছে তার পরের কথায়, “আমি চেষ্টা করতে পারি কথা বলতে, তাদেরকে বোঝাতে। কিন্তু তারা যদি বুঝতেই না পারে, আমার কিছু করার নেই। এরকমই হচ্ছে।”

    গিবস খুঁজে পাচ্ছেন আরেকটি সমস্যা, মোহাম্মদ মিঠুন-মোসাদ্দেক হোসেনের পারফরম্যান্স টেনে যা বলেছেন, হয়তো টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার একটি কারণ হতে পারে সেটিও, “অনেক সময়ই এই ছেলেরা একটু বেশি চিন্তা করে ফেলে। তারা ভাবে, বড় শটই সবকিছু। আসলে যা মোটেও ঠিক নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ইনিংস কীভাবে গড়া হচ্ছে, মাঠের কোন জায়গা দিয়ে শট খেলব, কখন আক্রমণ করব, কখন নিজেকে সংযত রাখব, কখন জুটি গড়ব।”

    “মিঠুনকে দিয়েই উদাহরণ দিচ্ছি। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত খেলল। আরেক ম্যাচে সেদিন চল্লিশের মতো করল (ঢাকা প্লাটুনের বিপক্ষে অপরাজিত ৪৯)। খুব ভালো। কিন্তু সেই ইনিংসের পরের ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হলো, যখন ইনিংসের ৬ ওভার বাকি। অনেক সময়ই এই ছেলেরা, নিজেদের সামর্থ্যে আস্থা রাখতে পারে না। ক্রিকেটে এমন পরিস্থিতি আসে, যখন ৪-৫টি বল দেখে খেলতে হয়, তার পর চালাতে হয়। এই ব্যাপারগুলি বুঝতে হবে। মিঠুন উল্টো চেষ্টা করতে গিয়েছে, কাজে লাগেনি।”

    “সবই ছোট ছোট ব্যাপার। কিন্তু গড়পড়তা ক্রিকেটাররা যত সময় এসব ঠিকঠাক করতে পারে, তুলনামূলক ভালো ক্রিকেটাররা আরও বেশি সময় করতে পারে। এই ছেলেরা কেবল যদি এই মানসিক দিকগুলোয় উন্নতি করতে পারে, ওদের খেলায় বিশাল পার্থক্য দেখতে পাবেন। ওদের হাতে শট আছে, স্কিল আছে। কেবল মানসিকতা উন্নতি করতে হবে।

    “কিন্তু এই ছেলেরা কাজ অসম্পূর্ণ রেখে যায়। পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজ রেখে যায়। কাজ শেষ করে আসে না। এই ব্যাপারটি আমি খুব ভালোভাবে খেয়াল করেছি, শুধু আমাদের দলে নয়, সব দলের স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যেই। ওদের বুঝতে হবে, টি-টোয়েন্টি মানেই কেবল তেঁড়েফুড়ে খেলা নয়। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই বলেছি, টি-টোয়েন্টি মানে কেবল চাপ সৃষ্টি করাই নয়, নিজেদেরও চাপ সহ্য করার সামর্থ্য থাকতে হবে।”