সিলেটকে আরও গভীরে ঠেলে দিয়ে ঝুলে রইল ওয়াটসনের রংপুর
রংপুর রেঞ্জার্স ১৯৯/৫, ২০ ওভার
সিলেট থান্ডার ১৬১ অল-আউট, ১৯.১ ওভার
রেঞ্জার্স ৩৮ রানে জয়ী
এই সিলেট থান্ডারের বিপক্ষে আগের রাউন্ডে জিতেই অক্সিজেন পেয়েছিল রংপুর রেঞ্জার্স। ফিরতি পর্বেও রংপুরের অবস্থা খুব একটা বদলায়নি, জয় ছাড়া অন্যকিছু তাদেরকে প্রায় ছিটকে দিত কঠিন এক লড়াই থেকে। আপাতত এই হার্ডলটা পেরিয়ে ঝুলে থাকল রংপুর, ঘরের মাঠে গিয়েও সিলেটের অবস্থা থাকলো প্রায় একই। হার্শেল গিবস বলেছেন, তার ভাষা বুঝতে পারেন না সিলেটের স্থানীয় ক্রিকেটাররা। তাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, জয়ের ভাষাটা ঠিক জানা নেই সিলেটের।
রংপুর অবশ্য এদিন খুঁজে পেয়েছে তাদের অধিনায়ক শেন ওয়াটসনের পারফরম্যান্সকে। হয়তো এই শেন ওয়াটসনকেই খুঁজে ফিরছিল রংপুর। তার ৩৬ বলে ৬৮ রানের ইনিংসের পর বাকিদের সময়োপযোগি অবদানে সিলেট থান্ডারকে ২০০ রানের পাহাড় টপকাতে বলেছিল রংপুর। মোহাম্মদ নাঈমের পর ক্যামেরন ডেলপোর্টের সঙ্গে ৭৭ ও ৬১ রানের জুটি গড়েছেন ওয়াটসন, এরপর লুইস গ্রেগরি, মোহাম্মদ নবি ও ফজলে রাব্বি সেরেছেন বাকি কাজ। সে পাহাড় টপকাতে গিয়ে শেফর্যান রাদারফোর্ড ছাড়া বাকিরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।
অবশ্য ৩৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলার পর রাদারফোর্ড যেভাবে রান-আউট হয়েছেন, সেটাই ফুটিয়ে তুলতে পারে সিলেটের চিত্রটা। রান নিতে গিয়ে ব্যাট গ্রাউন্ড করার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন তিনি, তার ক্রিজে ঢোকা ও রাদারফোর্ডের থ্রো সরাসরি লাগার সময় তার পা ছিল শূন্যে। শেষদিকে তার কাছ থেকেই একটা মিরাকল-মতো প্রয়োজন ছিল সিলেটের, সেটি খুঁজে পায়নি তারা।
বড় রানতাড়ায় আন্দ্রে ফ্লেচার মাত্র শুরু করছিলেন, ফ্রন্টফুট ক্লিয়ার করে তাসকিনকে টেনে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে সামনে ডাইভ দিয়ে নেওয়া গ্রেগরির ক্যাচে পরিণত হয়েছেন ১২ বলে ১৯ রান করে। আব্দুল মজিদকে নিয়ে মোহাম্মদ মিঠুন অবশ্য পাওয়ারপ্লে কাজে লাগাচ্ছিলেন, তবে লুইস গ্রেগরি এসেই আঘাত করেছেন, ইনসাইড-এজে বোল্ড হয়েছেন ১১ বলে ৭ রান করা আব্দুল মজিদ। পাওয়ারপ্লেতে সিলেট শেষ পর্যন্ত তুলেছিল ৫৮ রান।
এরপর মিঠুন-রাদারফোর্ডের জুটি টানছিল সিলেটকে, ২২ বলে ৩০ রান করা মিঠুনকে ফিরতে হয়েছে মুকিদুলের বেশ খানিকটা দৌড়ে এসে লাফ দিয়ে নেওয়া অসাধারণ ক্যাচে, নবিকে তুলে মারতে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর রাদারফোর্ডকে এক পাশে রেখে একে একে ফিরছেন শফিকউল্লাহ শাফাক, সোহাগ গাজি, রনি তালুকদাররা। আর রাদারফোর্ডের উইকেটের পর নাঈম হাসান ও ক্রিসমার সান্টোকিকে যথাক্রমে তাসকিন ও মোস্তাফিজুর রহমান বোল্ড করে শেষ করেছেন খেলা, ব্যাটিং করতে নামেননি মনির হোসেন।
এর আগে টসে জিতে রংপুরকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল সিলেট, তবে পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে এলোমেলো বোলিং ভুগিয়েছে তাদের। নাঈমকে নিয়ে পাওয়ারপ্লেতেই ৬১ রান তুলে ফেলেছিলেন ওয়াটসন, ৩৪ রানে জীবন পাওয়া নাঈম অবশ্য মনিরকে বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপে ধরা পড়ে ফিরেছেন ৩৩ বলে ৪২ রান করে। তবে ওয়াটসন থামেননি।
এরপর তার সঙ্গী হলেন ডেলপোর্ট, শুরুর মতো মাঝের ওভারগুলিতেও সিলেটের ওপর চললো রংপুরের দাপট। ১০ ওভারে ৮৩ রান তোলা রংপুর পরের ৪ ওভারে তুলেছে ৫৩ রান, বড় স্কোর তাদের নাগালে ছিল যেন সবসময়ই। এবাদত একটু বাগড়া বাঁধিয়েছিলেন, ১৫তম ওভারে পরপর দুই বলে ডেলপোর্ট ও ওয়াটসনকে ফিরিয়ে। ডেলপোর্ট স্লাইস করেছিলেন, সামনে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছিলেন শাফাকউল্লাহ শাফাক। ওয়াটসনের উইকেট অবশ্য ছিল পুরোই এবাদতের ভাগে, রংপুর অধিনায়ককে তিনি ফিরিয়েছেন দারুণ ইয়র্কারে।
সে ওভারে এবাদত দিয়েছিলেন মাত্র ৫, পরের ওভারে মনির হোসেনও তাই। হুট করেই রংপুরকে আগেভাগে আটকানোর একটু আশা জুগিয়েছিল সিলেট। এবাদত একদিক থেকে চেষ্টা করলেও অন্যদিক থেকে সে চাপ আলগা করে দিয়েছেন ক্রিসমার সান্টোকি। শেষ দুই ওভারে এই ক্যারিবীয় পেসার গুণেছেন ৪১ রান, এর মাঝে শেষ ওভারেই উঠেছে ২৬ রান। ৪ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে বোলিং শেষ করেছেন সান্টোকি, বিপিএলে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ড আছে আর ৫ জন বোলারের।