রুশো ঝড়ের পর ফ্রাইলিঙ্কের পাঁচে কুমিল্লাকে আটকে দিল খুলনা
খুলনা টাইগারস ২০ ওভারে ১৭৯/২ (রুশো ৭১*, শান্ত ৩৮, সৌম্য ১/৩৯)
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ১৮.২ ওভারে ১৪৫ অল-আউট (সাব্বির ৬২, ইয়াসির ২৭, ফ্রাইলিঙ্ক ৫/১৬, আমির ২/১৮)
খুলনা ৩৪ রানে জয়ী
রাইলি রুশোর ঝড়ে ১৭৯ রান পর্যন্ত যাওয়া খুলনা পরে রবি ফ্রাইলিঙ্কের ৫ উইকেটে আটকে দিয়েছে কুমিল্লাকে। আর তাতেই ম্লান হয়ে গেছে সাব্বির রহমানের ৩৯ বলে ৬২ রানের দারুণ এক ইনিংস। ২ ম্যাচ বাকি রেখে ১২ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফের দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে খুলনা, আর শেষ চারের আশা আরেকটু বেশি যদি-কিন্তুর ওপর ঝুলে গেছে কুমিল্লার।
রানতাড়ায় সাব্বির দুটি জুটিতে আশা জুগিয়েছিলেন কুমিল্লাকে- সৌম্য সরকারের পর ইয়াসির আলি রাব্বির সঙ্গে। তবে কুমিল্লার আশাও যেন বয়ে নিচ্ছিলেন সাব্বিরই, ১৫তম ওভারে তার উইকেটই মোটামুটি সিলগালা করে দিয়েছে এ ম্যাচ।
৪র্থ ওভারে রবি ফ্রাইলিঙ্কের বলে স্টিয়ান ভ্যান জিলের পর পরের ওভারে ডাভিড মালানও ক্যাচ দিয়েছিলেন শফিউল ইসলামের বলে। মোটামুটি বড় রানতাড়ায় রীতিমতো তখন ধুঁকছিল কুমিল্লা। সাব্বির ও সৌম্যর জুটিটা এলো এরপর, তাদের ব্যাটিংয়ে ছিল দারুণ আধিপত্য। মূল ভূমিকাটা পালন করছিলেন সাব্বিরই, দুজনের জুটি হয়ে গিয়েছিল ফিফটিও।
তবে সৌম্য আউট হলেন বড় অসময়ে। ফ্রাইলিঙ্কের গতির হেরফেরটা না বুঝে আগেভাগে শট খেলে ফেলে দিলেন ক্যাচ, এরপর মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ৫ বলের ডাক সাব্বিরের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিল যেন আরও। তবে ইয়াসির আলি রাব্বি সঙ্গ দিলেন সাব্বিরকে, আবারও যেন ছন্দ ফিরে পেলেন তিনি। ৩৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করলেন, ইয়াসিরের সঙ্গে মাত্র ৪ ওভারেই তুলে ফেললেন ৪২ রান।
আল-ইসলামের টোটকা খুলনার কাজে লাগেনি, সাব্বিরের বিপক্ষে একটা রিভিউ শুধু আম্পায়ারস কল হয়েছিল। মুশফিক এরপরই ফিরলেন আমিরের দিকে, শর্ট বলের পরিকল্পনাটা ওয়াইড হয়ে ভেস্তেও যেতে ধরেছিল আমিরের। সাব্বির একটা বাউন্ডারি মারলেন, তবে এরপরই শর্ট অফ আ লেংথ বলটা ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে ধরা পড়লেন শর্ট স্কয়ার লেগে।
১৫ বলে ২৭ রান করে এক ওভার পর সাব্বিরকে অনুসরণ করলেন ইয়াসির, সে ওভারেই আবু হায়দার রনির উইকেট নিয়ে কুমিল্লাকে প্রায় খাদের কিনারে ঠেলে দিলেন শহিদুল ইসলাম। আর ডেভিড ভিসা ও সানজামুল ইসলামের উইকেট দিয়ে পাঁচ পূর্ণ হয়েছে ফ্রাইলিঙ্কের। আল-আমিনকে বোল্ড করে শেষ পেরেকটা ঠুকেছেন আমির।।
এর আগে খুলনা শুরুতে একটু আঁটসাঁট থাকলেও নাজমুল হোসেন শান্ত মেহেদি হাসান মিরাজে পেয়েছিল ৭১ রানের ভিত। মিরাজ প্রথম কয়েক ওভারে ঠিক সুবিধা করতে পারছিলেন না। প্রথম তিন ওভারে রান এলো ১১। চতুর্থ ওভারে আবু হায়দার রনির প্রথম বলটা ফ্লিক করে ছয় মারলেন শান্ত, এরপরেই রানের দুয়ার খুলে গেল খুলনার। ওই ওভারেই মিরাজও মারলেন তার প্রথম ছয়।
শান্ত দলে ফিরে একটু আগ্রাসী ছিলেন, মিরাজের একটু সময় লাগছিল। আল আমিনের এক ওভারে দুইটি চার মারলেন মিরাজ, পাওয়ারপ্লেতে রান এলো ৪৪। শান্ত ২৮ বলে ৩৯ রান করে ফেলেছিলেন। কিন্তু সৌম্যর স্লোয়ার উড়িয়ে মারতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে এলেন সানজামুলকে। ফিরলেন সেই ৩৯ রানেই। সেই ওভারেই সৌম্যর বলে ছয় মেরে শুরুটা করলেন রুশো।
মিরাজ অবশ্য স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন এরপর, ডেভিড ভিসের বলে স্কুপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেছেন ৩৯ বলে ৩৯ রান করে। রান রেট একটু কমে আসতে শুরু করেছে তখন, তবে রুশো আবার বাড়ানোর দায়িত্ব নিলেন। ঝড়ের শুরুটা হলো ১৫তম ওভার দিয়ে। ভিসের বলে ছয়ের পর পর পর দুইটি চার মারলেন রুশো। কুমিল্লার ফিল্ডাররাও বাজে ফিল্ডিং করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এক ওভার পর আল আমিনকে আরও একটি ছয়-চার মারলেন রুশো।
তোপটা আল আমিনের ওপরেই বেশি গেছে, তার শেষ ওভারেও মুশফিক আর রুশো নিয়েছেন ছয় ও চার। রুশো এর মধ্যে ২৬ বলে পেয়ে গেছেন ফিফটি, উদযাপন করেছেন আগের মতোই এক পাক নেচে। এবারের বিপিএলের মালানের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪০০ রানও হয়ে গেছে। মুশফিক অবশ্য খুব বড় কিছু করতে পারেননি, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৭ বলে ২৪ রান করে। আর ৩৬ বলে ৭১ রান করে শেষ করেছেন রুশো।