ঢাকাকে আটকে দিয়েই বিপিএল শেষ রংপুরের
রংপুর রেঞ্জার্স ২০ ওভারে ১৪৯/৯
ঢাকা প্লাটুন ২০ ওভারে ১৩৮/৯
রংপুর ১১ রানে জয়ী
মাথা উঁচু করে বিদায় নেওয়ার এই একটি উপায়ই ছিল রংপুরের- শেষ ম্যাচ জেতা। মিরপুরে মোটামুটি লো-স্কোরিং ম্যাচে বোলার-ফিল্ডারদের সমন্বিত পারফরম্যান্সে ১৪৯ রানের সম্বল নিয়েও ঢাকাকে আটকে দিয়েছে রংপুর। আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত করা ঢাকার জন্য এই ম্যাচ ছিল শীর্ষে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ, সেটি আপাতত হারিয়েছে তারা।
শেষ ২ ওভারে ঢাকার প্রয়োজন ছিল ৩১ রান, ১৯তম ওভারের প্রথম বলে মোস্তাফিজকে ছয় মেরে একটু উত্তেজনা বাড়িয়েছিলেন মাশরাফি। পরের বলে মোস্তাফিজ করলেন বিমার, ফ্রিহিটেও ফুলটস দিলেও আম্পায়ার সেটিকে নো মনে করেননি। মোস্তাফিজ অবশ্য ফিরে এলেন ভালভাবেই, শেষ ওভারে গ্রেগরির জন্য রাখলেন ২২ রানের সম্বল জয়ের জন্য।
তবে গ্রেগরিও প্রথম বলে করেছিলেন ফুলটসে নো, যেটি আবার মাশরাফি মারলেন চার। এরপর করলেন ওয়াইড, পরের বলে সিঙ্গেল নিতে গিয়েও হাসানকে ফিরিয়ে দিলেন মাশরাফি। এরপর জহুরুলের মিসে পেলেন একটি চার, ঢাকাকে তখনও ম্যাচে রেখেছিলেন তিনি। অবশ্য মোস্তাফিজের মতো প্রত্যাবর্তন করলেন গ্রেগরিও, শেষ বলে সিঙ্গেল ছাড়া হলো না আর কিছু।
১৫০ রানতাড়ায় দ্বিতীয় ওভারেই তামিমের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে রান-আউট হয়ে ফিরেছিলেন এনামুল হক বিজয়, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে সরাসরি থ্রো ছিল আল-আমিনের। পাওয়ারপ্লেতে আর কোনও উইকেট হারায়নি ঢাকা, তুলেছিল ৩৯ রান। ৮ম ওভারে গিয়ে দ্বিতীয় ব্রেকথ্রু পেয়েছে রংপুর, আরাফাত সানির বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মাহেদি হাসান, ২৪ বলে ২০ রান করে।
গিয়ার বদলানো হয়নি তামিমেরও, আরাফাত সানিকে লং-অনে একটা ছয় গ্যালারিতে পাঠালেও তাকেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে হোয়্যাক করতে গিয়ে কাভারে পেছনে ছুটতে থাকা ওয়াটসনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি, ৩৩ বলে ৩৪ রান করেছেন এর আগে। পরের ৬ ওভারে ঢাকা হারিয়েছে আরও ৬ উইকেট। নিয়ে চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল রংপুর।
১৮ বলে ১৪ রান করে তাসকিনের শিকার মুমিনুল, লুইস গ্রেগরির বলে ক্যাচ তোলার আগে থিসারা পেরেরা করেছেন ১০ বলে ৮ রান। শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪৭ রান, তবে আসিফ আলি ঝড় তোলার মতো কিছু করতে পারেননি। তাসকিনের স্লোয়ারে মিড-অফে গ্রেগরির হাতে ক্যাচ তুলেছেন তিনি। সে ওভারে তাসকিন পেতে পারতেন শাদাব খানের উইকেটও, তবে মিড-অনে সেটি ছেড়ে দিয়েছেন অ্যাবেল।
অ্যাবেল অবশ্য দায়মোচন করেছেন পরের ওভারেই, মোস্তাফিজের কাটারে আরিফুলের তোলা ক্যাচ সামনে ডাইভ দিয়ে ধরে। জুনাইদের শর্ট বলে সুবিধা করতে পারেননি ফাহিম আশরাফ, ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে ডানদিকে ছুটে ভাল ক্যাচ নিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম। পরের বলে শাদাব খানও লিডিং-এজড, আল-আমিন একবার মিস করেও ধরেছেন ।
এর আগে প্রথমে ব্যাটিং করা রংপুরের শুরুটা হয়েছিল ভালই। প্রথম ওভারেই দুইটি চার মেরে শুরু করেছিলেন ওয়াটসন। কিন্তু আরও একবার বড় করতে পারলেন না ইনিংস, মাশরাফির বিন মুর্তজার স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে এলেন উইকেটের পেছনে। ক্যামেরন ডেলপোর্ট বেশিক্ষণ টিকলেন না, ৬ রান করে মাহেদী হাসানের বলটা স্টাম্প ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে হয়ে গেলেন স্টাম্পড। পাওয়ারলেতে রান উঠল ৩৪, রান রেট কমে যেতে শুরু করল রংপুরের।
নাঈম শেখ রান তুলতে হাসফাঁস করছিলেন, শাদাব খানের রঙ আন বুঝতে না পেরে ক্যাচ দিলেন ২১ বলে ১৭ রান করে। গ্রেগরি রান তোলা শুরু করেছিলেন আগেই, পরের ওভারে ফাহিম আশরাফকে মারলেন চার-ছয়। শাদাব ও হাসান মাহমুদকে পরের দুই ওভারে আরও দুইটি করে চার। কিন্তু ফিফটি করতে পারলেন না, ৩২ বলে ৪৬ রান করে থিসারা পেরেরার বলে ক্যাচ দিলেন লং অনে। আল আমিন জুনিয়র ভালোই করছিলেন, ২৪ বলে ৩৫ রান করে ফেলেছিলেন।
নাটক শুরু হলো শেষ ওভারে। থিসারার পেরেরার চতুর্থ বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হলেন জহুরুল। আউট হলেন ২৪ বলে ২৮ রান করে। পরের বলে বোল্ড তাসকিন, হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেরেরার। পরের বলটা ওয়াইড হলো, কিন্তু নন স্ট্রাইকে রান আউট হয়ে গেলেন মোস্তাফিজ। আর শেষ বলে সিঙ্গেল নিতে পারলেন না নাদিফ, উল্টো হাস্যকরভাবে রান আউট হয়ে গেলেন আরাফাত সানি। ২০ ওভারে ১৪৮ রান পর্যন্ত করতে পারল রংপুর।