রেকর্ডভাঙা মুশফিক-মিরাজে কুমিল্লাকে উড়িয়ে প্লে অফে খুলনা
খুলনা টাইটানস ২০ ওভারে ২১৮/২ (মুশফিক ৯৮*, মিরাজ ৭৪)
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ২০ ওভারে ১২৬/৯
ফলঃ খুলনা ৯২ রানে জয়ী
অনেকটা যেন ম্যাচ শেষের টানটান উত্তেজনা। পুরো খুলনা দল ডাগআউটের সামনে মুশফিকুর রহিমকে উৎসাহ দিতে দাঁড়িয়ে পড়েছে। মিরপুরের গ্যালারি ফেটে পরেছে মুশফিক, মুশফিক চিৎকারে। কিন্তু হলো না। সৌম্য সরকারের বলে দরকার ছিল তিন রান, হলো ১ রান। ৯৮ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেন মুশফিক। তবে তার আগে মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে রেকর্ড জুটি আর খুলনার রানের পাহাড় নিশ্চিত হয়ে গেছে। সেই পাহাড় টপকাতে গিয়ে কুমিল্লা শুরু থেকেই খেয়েছে হোঁচট, ম্যাচের ভাগ্যও আসলে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে প্রথম কয়েক ওভারেই। খুলনা চতুর্থ দল হিসেবে নিশ্চিত করেছে প্লে অফ, কুমিল্লা নিয়েছে বিদায়।
বিপিএলের ইতিহাসে শীর্ষ দশ জুটিতে এর আগে দুজন মাত্র দেশী ব্যাটসম্যানের উপস্থিতি ছিল, শাহরিয়ার নাফীস ও মোহাম্মদ মিঠুন। আর দুজন দেশী ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ জুটি ছিল শামসুর রহমান ও ইমরুল কায়েসের ১৪৫ রান। তাও সেই ২০১৩ সালে। সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেন মুশফিকুর ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দু'জনের ১৬৮ রানের জুটিটা দেশীদের মধ্যে তো বটেই, বিপিএলের ইতিহাসেই সব মিলে পঞ্চম সর্বোচ্চ।
ম্যাচের শুরুটা অবশ্য কুমিল্লার ভালো হয়নি মোটেই। প্রথম ওভারেই এই বিপিএলে অভিষিক্ত ইফরান হোসেনের বলে আউট হয়ে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। রাইলি রুশো অবশ্য পর পর তিনটি ছয় মেরে সেই সুখস্মৃতি তার ভুলিয়ে দিয়েছেন দ্রুত। কিন্তু রুশো আউট হবার পর আর কোনো উদযাপনের উপলক্ষ পায়নি কুমিল্লা। প্রথম ৬ ওভারে বেশি রান ওঠেনি অবশ্য, ৪৪ রান তুলেছিল খুলনা। কিন্তু এর পরেই বাড়তে শুরু করে রানের গতি।
মিরাজ-মুশফিকের জুটিতে ৫০ রান এসে যায় ৪১ বলে। ১১ ওভারের মধ্যে উঠে যায় ১০০ রান। মিরাজ ফিফটি পেয়ে যান ৩৩ বলে, দুজনের জুটিতে শত রান আসে ৬৫ বলে। এর মধ্যেই তিনটি ছয় হয়ে গেছে মিরাজের।। ওদিকে মুশফিকও তখন হাত খুলে খেলতে শুরু করে দিয়েছেন। ৩৮ বলে পেয়েছেন ফিফটি। এরপর জ্বলে উঠেছেন আরও বেশি রুদ্রমূর্তিতে। ফন জিলের দুই ওভার থেকে দুজন নিয়েছেন ৩১ রান।
মুশফিকের ঝড়টা বেশি গেছে আবু হায়দার রনির ১৭তম ওভারে। ওই ওভারে তিনটি ছয়ের পাশাপাশি মেরেছেন একটি চার। সেই ওভারেই পৌঁছে গেছেন নব্বইতে। পরের ওভারেই মিরাজ একটি ডাবলস নিতে গিয়ে টান খেলেন হ্যামস্ট্রিংয়ে, মুশফিকও ভুগেছেন ক্র্যাম্পের সমস্যায়। শেষ ওভারে মুশফিকের সেঞ্চুরির জন্য দরকার ৮ রান, প্রথম বলে চারও হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি আর হলো না। তাতে অবশ্য ম্যাচের ফলে কিছু যায় আসেনি।
রান তাড়া করতে নেমে কুমিল্লার পতনের গল্পটা সংক্ষিপ্ত ও নিতান্তই ম্যাড়ম্যাড়ে। শুরু থেকেই আসলে পথ হারিয়েছে কুমিল্লা। সাব্বির রহমানকে ওপেনিংয়ে নিয়ে আসার ফাটকা আগের ম্যাচে কাজে এসেছিল ভালোমতোই। কিন্তু আজ প্রথম বলেই মোহাম্মদ আমিরের দুর্দান্ত এক বলে এলোমেলো হয়ে গেল সাব্বিরের স্টাম্প। প্রথম ওভারেই উইকেট হারাল কুমিল্লা।
স্টিয়ান ফন জিল রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে মারতে গিয়েই আউট হলেন, রুশো আরও একবার ভালো একটা ক্যাচ ধরলেন। ১৩ বলে ১০ রানে শেষ হলো ফন জিলের ইনিংস। কুমিল্লার সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন অধিনায়ক ডাভিড মালান। দুই চারে শুরুটাও করেছিলেন। কিন্তু শহীদুলের সেই ওভারেই বলের লাইন মিস করে ৮ রানেই হয়ে গেলেন বোল্ড। ৩২ রানে ৩ উইকেট হারাল কুমিল্লা, আশাও অনেকটা শেষ।
উপুল থারাঙ্গাই একমাত্র রান পাচ্ছিলেন। ২২ বলে ৩২ রান করার পর অকেশনাল বোলার শামসুরের বলে আউট হয়ে গেলেন। আমিরের ইয়র্কারে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন সৌম্য, ১০ রান করেই। ইয়াসির আলী আমিনুল বিপ্লবের বলে একটি ছয় মারলেন, আর পরের বলে ইনসাইড আউট করতে গিয়ে ডিপ কাভারে দিলেন ক্যাচ। ফিরলেন ১৬ বলে ২০ রান করে। এরপর রনিকেও ফিরিয়েছেন আমিনুল বিপ্লব। ফারদিন ফিরেছেন ফ্রাইলিংকের বলে। শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা ধুঁকতে ধুঁকতে করেছে ১২৬।