ঢাকাকে বিদায় করে এলিমিনেটর বাধা টপকাল চট্টগ্রাম
ঢাকা প্লাটুন ২০ ওভারে ১৪৪/৮
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৭.৪ ওভারে ১৪৭/৩
চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে জয়ী
মিরপুরের এ উইকেটে ব্যাটিংটা ঠিক সহজ ছিল না, অন্তত শুরুর দিকে। বল আসছিল থেমে থেমে। তবে বোর্ডে ১৪৪ রান নিয়ে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ঢাকাকে করতে হতো অসাধারণ কিছু, এমনকি বাঁহাতে ১৪ সেলাই নিয়ে নামা মাশরাফির চেয়েও বেশি কিছু হয়তো। সেটি ঠিক হলো না, ইমরুল কায়েসের ২২ বলে ৩২ রানের ইনিংসের আগে-পরে ক্রিস গেইল ও মাহমুদউল্লাহয় ভর করে চট্টগ্রাম সে রান পেরিয়ে গেছে অনায়াসেই। ঢাকাকে বিদায় করে এলিমিনেটর বাধা পেরিয়ে গেছে তারা, এদিনের পরের ম্যাচে খুলনা-রাজশাহীর মধ্য থেকে পরাজিত দলের মুখোমুখি হবে তারা দ্বিতীয় কোয়ালাইফাইয়ের।
ক্রিস গেইলের সঙ্গে ওপেনিংয়ে এদিন জিয়াউর রহমানকে পাঠিয়েছিল চট্টগ্রাম। তবে মাশরাফি ও মাহেদি প্রথম দুই ওভারে দিলেন মাত্র ২ রান। তৃতীয় ওভারে মাশরাফিকে মিডউইকেট দিয়ে চার দিয়ে শেকল ভাঙলেন যেন জিয়া, সে ওভারে মারলেন আরেকটি চারের সঙ্গে একটি ছয়। পরের ওভারে মাহেদিকে লং-অফের পর লং-অন দিয়ে দুই ছয়ে খোলস ছাড়ার ইঙ্গিত দিলেন গেইলও।
অবশ্য পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মাহেদিকে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়েছেন জিয়া, ১২ বলে ২৫ রান করে। পরের ২০ বলে চট্টগ্রাম তুলতে পেরেছিল মাত্র ১১ রান, মাশরাফিকে দুই ছয়ে সেই চাপটা কাটিয়েছেন ইমরুল কায়েস। প্রথম ১০ ওভারে ৭১ রান তুলে চট্টগ্রাম পেয়েছিল ভাল একটা ভিতই।
১৩তম ওভারের প্রথম দুই বল ছিল ডট, শাদাবকে তৃতীয় বলে টেনে মারতে গিয়ে লং-অনে ধরা পড়ার আগে ইমরুল করেছেন ২২ বলে ৩২ রান। গেইলের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটিতে মূল চালক ছিলেন ইমরুলই, গেইল খেলেছেন রীতিমতো শ্লথগতির ইনিংস। শাদাবের পরের ওভারে ফিরেছেন গেইল, শর্ট ফাইন লেগে সে ক্যাচটি এক হাতে নিয়েছেন মাশরাফি। এক হাত বললে হয়তো ডাইভ-টাইভ বুঝতে পারেন আপনি, তবে বাঁহাতে ১৪ সেলাই নিয়ে মাশরাফি এ ক্যাচ ধরতে ডানহাতকেই মেনেছেন সব সম্বল।
অবশ্য ঢাকার চমক বলতে গেলে শেষ সেখানেই। চ্যাডউইক ওয়ালটনকে রান-আউটের একটা সুযোগ মিলেছিল তাদের, এনামুল ডিরেক্ট থ্রোর আশায় মিস করেছেন সেটি। মাহমুদউল্লাহ এরপর তুলেছেন ঝড়, ৪ ছয়ে ১৪ বলে করেছেন ৩৪ রান। টানা দুই ছয়ে ১৪ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এর আগে আগে ব্যাটিং করা ঢাকা ধুঁকতে ধুঁকতে শেষ পর্যন্ত ১৪৪-এ গিয়েছিল শাদাব খানের ৪১ বলে ৬৪ রানে। মিরপুরের উইকেটে গত কয়েক দিন প্রচুর রান হলেও আজ আবার ফিরে গেছে পুরনো চেহারায়। শুরু থেকেই বল সুইং করছিল, স্পিনাররাও পাচ্ছিলেন টার্ন। রুবেল হোসেনের প্রথম ওভারেই আউট হতে পারতেন তামিম ইকবাল। আউট হলেও বেঁচে গেছেন রিভিউ নিয়ে। কিন্তু তামিম শুরু থেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন না। ৯ বলে ৩ রান করার পর মরিয়া হয়ে রুবেলকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গেলেন। কিন্তু বলের লাইন মিস করে হয়ে গেলেন বোল্ড।
মুমিনুল হক আগের ম্যাচে দারুণ একটা ইনিংস খেলেছিলেন, আজ ওপেনিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন। প্রথম ওভারে চারের পর নাসুমকে মেরেছেন ছয়। তবে এক পাশ থেকে দেখেছেন সতীর্থদের আসা যাওয়া। এনামুল হক বিজয় নাসুমকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন মিড অনে, ফিরেছেন কোনো রান না করে।
লুইস রিস আজ একাদশে ফিরেছিলেন, সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। মাহমুদউল্লাহর অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন কোনো রান না করে। পাপ্যারপ্লেতে ঢাকা ২৮ রান তুলেছে ৩ উইকেট হারিয়ে। এরপর মাহেদী হাসান একটি চার মেরেছিলেন, তবে টেকেননি বেশিক্ষণ। ৭ রান করে রায়াদ এমরিটের বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ডিপ ফাইন লেগে। পরের বলে জাকের আলী গ্লাভসে লেগে ক্যাচ দিয়েছেন কোনো রান না করে, এর মধ্যে রিভিউ নিয়ে সেটি নষ্ট করেছেন। হ্যাটট্রিক পাননি এমরিট, তবে ৪৩ রানে ৫ উইকেট নেই ঢাকার। মুমিনুলও খানিক পর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হয়ে গেলেন, ৩১ বলে ৩১ রান করে। ৫২ রানে তখন ৬ উইকেট নেই ঢাকার। আসিফ আলী নাসুমকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টপ এজে তাকেই ক্যাচ দিয়ে এলেন, ফিরলেন ৫ রান করে। ৬০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ঢাকার তখন ১০০ রান নিয়েই সন্দেহ।
এর পরেই শাদাব খান আর থিসারা পেরেরা শুরু করলেন পাল্টা আক্রমণ। শুরুতে রুবেলকেই টার্গেট করেছিলেন দুজন। শাদাব একটি ছয় মেরেছিলেন, পরে পেরেরা চারের পর মারলেন একটি ছয়। কিন্তু পরের বলেই মারতে গিয়ে পেরেরা ক্যাচ তুলে দিলেন রুবেলের বলে, আউট হলেন ১৩ বলে ২৫ রান করে। এরপর শাদাব দায়িত্বটা তুলে নিলেন নিজের ব্যাটে। রানার এক ওভারে নিলেন ১৬ রান, ওদিকে পেয়েছেন সেলাই নিয়ে নেমে যাওয়া মাশরাফিকে। জিয়ার শেষ ওভার থেকে একাই নিয়েছেন ২৩ রান, ৬৪ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন। শাদাব ছাড়া মুমিনুল আর থিসারাই শুধু পৌঁছাতে পেরেছেন দুই অংকে।