আমিরের রেকর্ডে রাজশাহীকে হারিয়ে ফাইনালে খুলনা
খুলনা টাইগারস ২০ ওভারে ১৫৮/৩ (শান্ত ৭৮*, শামসুর ৩২, মুশফিক ২১; ইরফান ২/১৩)
রাজশাহী রয়্যালস ২০ ওভারে.১৩১ অলআউট (মালিক ৮০; আমির ৬/১৭)
ফলঃ খুলনা ২৭ রানে জয়ী
পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা দুই দল, খুলনা আর রাজশাহীর লড়াইটা জমজমাট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজশাহীর ইনিংসের কয়েক ওভার যেতে না যেতেই ফাঁকা হয়ে যেতে শুরু করল মিরপুরের গ্যালারি। ম্যাচের ভাগ্য যে তখনই ঠিক হয়ে গেছে! বিপিএলের ইতিহাসে সেরা বোলিং করে আসলে ঠিক করে দিয়েছেন মোহাম্মদ আমির। তবে শেষ দিকে অলৌকিকভাবে ম্যাচ জয়ের একটা সামান্য সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন শোয়েব মালিক। যদিও খুলনার ১৫৮ রানের লক্ষ্যটা শেষ পর্যন্ত বেশ দূরের পথ হয়ে থেকেছে রাজশাহীর জন্য।
১৫৮ রান খুব কম স্কোর নয় বটে, কিন্তু সেটা তাড়া করে লড়াই তো করার কথা ছিল রাজশাহী। কিন্তু সবকিছু এলোমেলো করে দিলেন মোহাম্মদ আমির। বিপিএলে এবার বল ভালো করলেও উইকেট পাওয়া হচ্ছিল না। আজ প্রথম ওভারেই দারুণ এক ইনসুইং লিটনের ব্যাট-প্যাড গলে ভেঙে দিল স্টাম্পের ওপরের বেলস, ইনিংসের তৃতীয় বলেই দুই রান করে ফিরলেন ইনফর্ম লিটন।
সেই ওভারেই দুই চার মারলেন শোয়েব মালিক, পরে আফিফও দুইটি চার মেরে ভালো একটা ম্যাচের আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমির এসে সব হিসেব বদলে দিলেন। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আফিফ ক্যাচ দিলেন ১১ রান। তিন বল পর কাপালিও আমিরের শিকার, কোনো রান না করেই ক্যাচ দিলেন শামসুরকে।
তবে রুশোর দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের ঝলক আরেকটু পর দেখল বিপিএল। এবার ফ্রাইলিংকের বলে মিসটাইম হয়েছিল বোপারার, মিড অফ থেকে বল মাটিতে পড়ার একটু আগে তুলে নিলেন রুশো। ক্যাচ ধরনেই সেই ট্রেডমার্ক ফিফার উদযাপনের নাচ। এক ওভার পর সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেল রাজশাহী। এবার রাসেল পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন রুশোকে, কোনো রান না করেই ফিরলেন। ২২ রানে ১ উইকেট থেকে ২৩ রানে ৫ উইকেট হয়ে গেল খুলনার। ফরহাদ রেজা শুরুতে বেঁচে গিয়েছিলেন ক্যাচ দিয়েও, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহিদুলের বলে ক্যাচ দিলেন ৩ রান করে।
এরপর মালিক ছিলেন, তাইজুলের সঙ্গে একটু হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। মালিক ৩৮ বলে ফিফটি পেয়েছেন, এর পরেই হাত খুলে খেলতে শুরু করেছেন। ফ্রাইলিংকের ওভার থেকে ১১, বিপ্লবের থেকে ১৫ রান নেওয়ার পর শফিউলের ওভার থেকে ২১ রান নিয়েছে রাজশাহী (আসলে বলা ভালো আমির)। শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ৫০ বলে ৮০ রান করে। তখনই ৬ উইকেট হয়ে গেছে আমিরের, বিপিএলের যা সেরা বোলিং।
তার আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ভাগ্যের সাহায্য পেয়েছে খুলনা। দ্বিতীয় ওভারেই আউট হতে পারতেন মেহেদী হাসান মিরাজ, কিন্তু পয়েন্টে মিস হয়ে যায় তার ক্যাচ। মোহাম্মদ ইরফানের পরের ওভারেই অবশ্য স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন মিরাজ, খুব বেশি আক্ষেপ করতে হয়নি রাজশাহীকে। মিরাজ ফিরেছেন ৮ বলে ৮ রান করে।
তবে ওই ওভারেই সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছে খুলনা। ইরফানকে পুল করতে গিয়ে আকাশে তুলে দিয়েছিলেন ইনফর্ম রাইলি রুশো, কামরুল রাব্বির ক্যাচে ফিরে গেছেন কোনো রান না করেই। শান্ত রান তুলতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, ষষ্ঠ ওভারে বোল্ডও হয়ে গিয়েছিলেন শোয়েব মালিকের বলে। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, মালিকের বুট দাগের পেছনে ছিল না। ফ্রি হিটে ছয় মারলেন শান্ত, ৯ রানে জীবন পেয়ে তার অশান্ত হয়ে ওঠার শুরুও সেখানেই।
পাওয়ারপ্লেতে মাত্র ৩২ রান উঠল, তবে এর পরে শান্ত আর শামসুর রহমান হাত খুলে খেলা শুরু করলেন। পরের তিন ওভারেই অন্তত একটি চার হয়েছে। শামসুর ভালোই খেলছিলেন, কিন্তু ৩১ বলে ৩২ রান করে বোপারার বলটা উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিলেন রাসেলকে। শান্ত এর পরেই পেয়ে গেছেন ফিফটি, এবার ৩৬ বলে। এর পরেই মালিককে মেরেছেন ছয়। তবে আবারও আউট হয়ে যেতে পারতেন বোপারার পরের ওভারে। ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন লেগ সাইডে, ডিপ মিডউইকেট থেকে দৌড়ে এসে বল হাতে নিয়েও রাখতে পারেননি আফিফ। এবার শান্ত জীবন পেলেন ৫৮ রানে।
কিন্তু এরপর সেভাবে আর রানের ধারাটা ধরে রাখতে পারেননি শান্ত আর মুশফিক। বোপারার একটি ওভার থেকে দুজন নিয়েছেন ১৪ রান, ব্যস ওই পর্যন্তই। উল্টো ১৯তম ওভারে গিয়ে আরেকটি বড় ধাক্কা খেয়েছে খুলনা। মুশফিক ১৬ বলে ২১ রান করে ফেলেছিলেন, কিন্তু ১৯তম ওভারে রান নিতে গিয়ে পায়ে টান লেগে মাঠ ছেড়েছেন। শেষ বোভারে গিয়ে একটু রান পেয়েছে খুলনা। প্রথম দুই বলে দুই চার মেরেছেন শান্ত, পরে নজিবুল্লাহ রাসেলকে মেরেছেন একটি ছয় ও শেষ বলে একটি চার। তাতে ১৫০ পেরুতে পেরেছে খুলনা। ৫৭ বলে ৭৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন শান্ত, নজিবুল্লাহ মাঠ ছেড়েছেন ৫ বলে ১২ রান করে।