• বঙ্গবন্ধু বিপিএল
  • " />

     

    রাসেলের শেষ রাতের মারে ফাইনালে রাজশাহী

    রাসেলের শেষ রাতের মারে ফাইনালে রাজশাহী    

    সরাসরি স্কোর দেখুন 


    চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬৪/৯, ২০ ওভার (গেইল ৬০, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, গুনারত্নে ৩১, নওয়াজ ২/১৩) 

    রাজশাহী রয়্যালস ১৯.২ ওভারে ১৬৫/৮ (রাসেল ৫৪*, শুক্কুর ৪৫; রুবেল ২/৩২)

    ফলঃ রাজশাহী ২ উইকেটে জয়ী

    আন্দ্রে রাসেল যতক্ষণ থাকবেন, ততক্ষণ আপনি আসলে ম্যাচের শেষটা লিখতে পারবেন না। এবারের বিপিএলে রাসেল এই ম্যাচের আগেও ব্যাট হাতে খুব বড় কিছু করতে পারেননি। বা বলা ভালো তাকে করতে হয়নি। বাঁচামরার লড়াইয়ে দেখিয়ে দিলেন, ওস্তাদের মার শেষ রাতে। যে ম্যাচে একটা সময় ৫ ওভারে ৭৬ রান দরকার ছিল রাজশাহীর, সেটাই তারা জিতে গেছে ২ উইকেট ও ৪ বল হাতে রেখে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে বিদায় করে পৌঁছে গেছে ফাইনালে, সেখানে তাদের মুখোমুখি খুলনা।

    অবশ্য এই ম্যাচটা কেউ জেতাতে পারলে রাসেলই পারতেন। যখন ক্রিজে এসেছিলেন ৮০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে রাজশাহী। শুরু থেকেই হোঁচট খাচ্ছিল তারা, আফিফ হোসেন ফিরে গেছেন ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই। পরের ওভারে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট লিটন দাস, ১৪ রানে ২ উইকেট নেই রাজশাহীর। কাপালি একটু ওপরে উঠে এসেছিলেন আজ, কিন্তু ৯ রান করেই মাহমুদউল্লাহর বলে ক্যাচ দিলেন মিড অফে।

    চট্টগ্রামের ১৬৪ রানের লক্ষ্য রাজশাহীর জন্য অনেক বড় মনে হচ্ছিল। ইরফান শুক্কুর ভালোই খেলছিলেন, গোটাকয়েক চারও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অন্য পাশে মালিক রানই তুলতে পারছিলেন না। ওদিকে রান রেটের চাপ বেড়ে গেলে শুক্কুরও তাল মেলাতে পারছিলেন না। একটা সময় ২৫ বলের মধ্যে কোনো বাউন্ডারি হয়নি রাজশাহীর, দরকারি রান রেট বাড়তে বাড়তে ১৫র কাছাকাছি চলে গেল।

    মালিক শেষ পর্যন্ত মারতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। রাসেল নামলেন, প্রথম কয়েকটা বল দেখলেন। ওদিকে শুক্কুর মারতে গিয়ে আউট হয়ে গেছেন, ক্রিজে মোহাম্মদ নওয়াজ। দারুণ দুই ছয়ে রাসেলের ওপর থেকে চাপ একটু কমালেন নওয়াজ। আরেকটি চার হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু লং অন থেকে অনেকটা দৌড়ে ঝাঁপ দিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচে নওয়াজকে ফেরালেন ইমরুল। ফরহাদ রেজা নেমেই ছয় মারলেন, কিন্তু ক্রিজ ছেড়ে অবিবেচকের মতো খেলতে এসে ক্যাচ দিলেন ডিপ কাভারে।

    রাসেল গোটা তিনেক ছয় এর মধ্যেই মেরে ফেলেছেন। অন্য পাশে তাকে সঙ্গ দেওয়া যখন দরকার হলো, কামরুল রাব্বি উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। রাসেল ঠিক করলেন, কাজটা দ্রুত সারতে হবে। এমরিটের পরের বলেই মারলেন ছয়। তবে রুবেল পরের ওভারে আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন চট্টগ্রামকে। রাসেলকে টানা চারটি ডট করলেন, পঞ্চম বলে আবার খেলেন ছয়। তারপরও ২ ওভারে ৩১ রান দরকার, আশা ছিল চট্টগ্রামের। কিন্তু মেহেদী হাসান রানার পরের ওভারেই সব প্রায় শেষ হয়ে গেল। জায়েদ প্রথম বলে ঠিকঠাক খেলে সিঙ্গেল নিলেন। পরের তিন বলে রাসেল নিলেন ছয়, চার, ছয়। মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো শেষ বলে জায়েদের বাউন্ডারি। ২৩ রান এলো, শেষ ওভার থেকে দরকার মাত্র ৮ রান। রাসেল প্রথম দুই বল দেখলেন, এরপর ছয় মেরে শেষ করে দিলেন ম্যাচ। ২২ বলে ৫৪ রান করে মাঠ ছাড়লেন।

    অথচ চট্টগ্রামের রান ১৬৪ হওয়ার কথাই ছিল না। মোমেন্টাম নিয়ে তো কম কথা হয় না ক্রিকেটে, চট্টগ্রামের ব্যাটিং ইনিংস সে আলোচনারই আরেক অংশ। ১০ ওভারে ১১১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে, এমনকি ক্রিস গেইলের ২৪ বলে ৬০ রানের ঝড়ের পরও ছুটছিল চট্টগ্রাম। মোহাম্মদ নওয়াজের বলে মাহমুদউল্লাহ বোল্ড হওয়ার পরই মোমেন্টাম জাদুবলের মতো চলে গেল রাজশাহীর দিকে। পরের ১০ ওভারী চট্টগ্রাম তুলতে পারল মাত্র ৫৩ রান, শেষ পর্যন্ত আটকে গেল ১৬৪ রানেই। 

    টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রামের পাওয়ারপ্লে ছিল ঘটনাবহুল। প্রথম ওভারে মেইডেন, সব মিলিয়ে ২৩ ডটের পরও চট্টগ্রাম তুলেছে ৫৮ রান, রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে প্রথম ৬ ওভারে সর্বোচ্চ। ২য় ওভারে রাহির কাছ থেকে ১৬ রান তুলেছিলেন গেইল, তাকে বেশ বাইরে বল করছিলেন রাহি। পরের ওভারে ইরফানকে ছয় মেরে আগের ওভারের দায়মোচন শুরু করেছিলেন জিয়া, তবে চার ডটের পর শর্ট অফ আ লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে গ্লাভসের পর প্যাডে লেগে তিনি হয়েছেন বোল্ড। 

    গেইল অবশ্য একদিকে ঝড় তুলে গেছেন, শোয়েব মালিক এসে যেন খুঁজেই পাচ্ছিলেন না বোলিংয়ের স্পটটা। ফল- ৩ চার ও ১ ছয়ে ১৮ রান। ৬ষ্ঠ ওভারে ৫ম বোলার হিসেবে প্রথম বলেই ইমরুলকে ফিরিয়েছেন রাসেল, শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে দারুণ এক বিপিএল কাটানো ইমরুল ধরা পড়েছেন ডিপ স্কয়ার লেগে। সে ওভারে মাহমুদউল্লাহকেও আম্পায়ার দিয়েছিলেন এলবিডব্লিউ, তবে রিভিউ নিয়ে অল্পর জন্য বেঁচে গেছেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক। 

    পরের ২৫ বলে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ৪৭ রান যোগ করেছেন গেইল, রাব্বি-রাসেল-নওয়াজ- সবাই ছিলেন তাদের তোপের শিকার। নওয়াজের শর্ট বলে এক হাতের ছয়ে মাত্র ২১ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন গেইল, যদিও ৪০ পেরিয়েছিলেন তিনি মাত্র ১৩ বলে। আফিফ এসেই ছয়ের শিকার হলেন, তবে পরের বলেই নিলেন প্রতিশোধ। টেনে মারতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হলেন গেইল। 

    আফিফের সে ওভারে দুই ছয়ে মাহমুদউল্লাহ বার্তা দিয়েছিলেন আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার, তবে পরের ওভারে নওয়াজের সোজা হওয়া বল মিস করে বোল্ড হয়ে বাধালেন বিপত্তি। এক বল পরই নুরুল হাসান হলেন এলবিডব্লিউ, রিভিউ নিয়েও বাঁচলেন না তিনি। চট্টগ্রাম চাপে পড়ে গেল, সে চাপ কমাতে কাপালিকে টেনে মারতে গিয়ে মিড-অনে উড়ন্ত লিটন দাসের হাতে ধরা পড়লেন চ্যাডউইক ওয়ালটন। কাপালিকে ছয়  মেরে গুনারত্নে চাপ কমানোর চেষ্টা করেছিলেন, তবে সে ওভারে রায়াদ এমরিতের রান-আউটে হলো উলটো ফল। শেষ পর্যন্ত ইরফানের শর্ট বল স্টাম্পে ডেকে আনার আগে গুনারত্নে করেছেন ২৪ বলে ৩১। এরপর রান-আউট হয়েছেন নাসুম আহমেদও। অমন শুরুটা হাতছাড়া করার জন্য তাই আফসোস করবেই চট্টগ্রাম।