• জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    'হস্তক্ষেপের' অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে নতুন নয়, মনে করিয়ে দিলেন ডমিঙ্গো

    'হস্তক্ষেপের' অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে নতুন নয়, মনে করিয়ে দিলেন ডমিঙ্গো    

    বিদেশী কোচ হলে আপনার একটা ‘শক’ খাওয়া স্বাভাবিক। বোর্ড প্রেসিডেন্ট যখন প্রকাশ্যে বলবেন, ম্যাচে টসের সিদ্ধান্ত, ব্যাটিং অর্ডারের ব্যাপারে তাকে আগে থেকে জানাতে হবে, এবং সেসব পরিবর্তন করা যাবে না- ব্যাপারটা ঠিক ‘নিয়মিত ঘটনা’ নয় ক্রিকেটবিশ্বে। তবে রাসেল ডমিঙ্গোর কথা যেন আলাদা। বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের এসব কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলে কোচ উলটো মনে করিয়ে দিলেন, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার। তার কাছে এমন ব্যাপার নতুন নয়। তিনি বরং ক্রিকেটার ও অধিনায়ককে এসব ব্যাপার থেকে দূরে রাখতে চান, নিজের দায়িত্ব মনে করেন এটিই। 

    জিম্বাবুয়ে সিরিজের কয়েকদিন আগেই সংবাদমাধ্যমের সামনে বিসিবি প্রেসিডেন্ট আবারও বলেছেন, তিনি নিজে এসব সিদ্ধান্ত না নিতে চাইলেও টস, ব্যাটিং অর্ডার, একাদশ- এসব ব্যাপারে জানতে হবে তার। অবশ্য পরেই বলেছিলেন, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী এসব বদলানোর প্রয়োজন হলে সেসব ভিন্ন কথা। কোচ বা অধিনায়ক হিসেবে নিশ্চয়ই এমন পরিস্থিতি ‘আদর্শ’ নয়। 

    মুমিনুল এ বিষয়ে বলেছেন, এ ব্যাপারে বোর্ড প্রেসিডেন্টের কোনও কথা শোনেননি তিনি। ডমিঙ্গোর কথাও সেটিই, “প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দলের ব্যাপারে আমার বোঝাপড়া খুবই গাঢ়। সে দলকে সত্যিই ভাল করতে দেখতে চায়। আমিও চাই। তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি এখনও। গত সপ্তাহে দারুণ কিছু অনুশীলন সেশন হয়েছে আমাদের।  

    “আমাকে অফিশিয়ালি কিছু বলা হয়নি, কাউকে দলের ব্যাপারে কিছু বলার জন্য। এখন পর্যন্ত আমার মনে হয় না, আমার এমন কিছু করতে হবে। দলের ব্যাপারে মমত্ব আছে আমার, প্রেসিডেন্টের মতোই। কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই আমাকে বেতন দেওয়া হয়, কিছু কাজ করার জন্য। আমি সেসবই করব।” 

    এরপরই তিনি মনে করিয়ে দিলেন, এমন পরিস্থিতি নতুন নয় তার জন্য, “মনে রাখবেন, আমি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছি। সেখানে অনেক সমস্যাই হয়। এমন না যে আমি ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছি, যেখানে আপনি যা করতে চাবেন সেটা করা সহজ। আমি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছি। সেখানেও ব্যাপারগুলি কঠিন। নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ নয়। সেখানে লোকের অনেক মত থাকে, অনেক বিষয়-উদ্দেশ্য থাকে।”

    এগুলোকে নিজের কাজের অংশ হিসেবেই মনে করছেন তিনি, “এটা আমার চাকরির অংশ, আমাকে এসব নিয়েই কাজ করতে হবে। যতখানি করা যায় আরকি। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, এসবের থেকে ক্রিকেটার ও অধিনায়ককে দূরে সরিয়ে রাখা। মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করা লোকটা হতে হবে আমার। বড় একটা দায়িত্ব, তবে আমি এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় এটি করেছি। সমস্যা থাকে, চ্যালেঞ্জ থাকে, তবে আমার জন্য নতুন নয়। এসব ব্যাপার ঠিক আছে আমার।” 

    বাংলাদেশে আসার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার হেড কোচ ছিলেন ডমিঙ্গো, সম্প্রতি যাদের ক্রিকেট গেছে বেশ পালাবদলের ভেতর দিয়ে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীর সঙ্গে অসদাচরণের জন্য বোর্ডের প্রধান নির্বাহীকে বরখাস্ত করা হয়েছে সেখানে, গুরুত্বপূর্ণ পদে এরপর এসেছেন একঝাঁক সাবেক ক্রিকেটার। 

    দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে এখানে মিল পেলেও একটা বিষয়ে অবশ্য বাংলাদেশকে ভিন্নভাবেই দেখেন ডমিঙ্গো- সংবাদমাধ্যম আর দর্শকদের ক্রিকেট-উন্মাদনার বিষয়টি। সংবাদ সম্মেলন থেকে যাওয়ার আগে তাই প্রশ্ন ছাড়াই আলাদা করে বলে গেলেন, এই দল অনভিজ্ঞ, তাদের জন্য সময় চান তিনি। 

    “যাওয়ার আগে দুই একটি বিষয়ে কথা বলতে চাই, যদিও এটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। বাংলাদেশে ক্রিকেট ক্ষ্যাপাটে। দর্শক, সংবাদমাধ্যম, সবার মনযোগ এখানে অবিশ্বাস্য। তবে সবাইকে বুঝতে হবে, এই টেস্ট দলে নাজমুল ৩টি টেস্ট খেলেছে, সাইফ তাঁর দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে যাচ্ছে। রাহি, তাকে দেখে মনে হয় ৪০, কিন্তু মাত্র ৭টি টেস্ট খেলেছে। এবাদত খেলেছে ৪টি। দলটা খুবই অনভিজ্ঞ। দলের অধিনায়ক দায়িত্ব নিয়েই ভারত, পাকিস্তানের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করেছে। বিশ্বের অন্যান্য অধিনায়কের হাতে ১০০-১৫০ টেস্ট খেলা টেস্ট বোলার আছে। ব্রড খেলেছে ১৪০, রাবাদা খেলেছে ৫০ টেস্ট, ফিল্যান্ডার খেলেছে ৭০ টেস্ট। মিচেল স্টার্ক খেলেছে ৬০ টেস্ট। এটা খুবই অনভিজ্ঞ টেস্ট দল।

    “আমি বলতে চাচ্ছি, সংবাদমাধ্যমকে ধৈর্য ধরতে হবে। নির্বাচকদেরও কিছু ক্রিকেটারদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমি যে দলের কোচিং করাচ্ছি, এই মুহূর্তে টেস্ট ক্রিকেটে এটিই সবচেয়ে অনভিজ্ঞ টেস্ট দল, যদি টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা দেখেন। আর আপনারা প্রত্যাশা করছেন, এই দলটি ভারত, পাকিস্তান গিয়ে এক দিনের অনুশীলনেই ওদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। সুতরাং ধৈর্য ধরুন। ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করছে। সমর্থক ও সংবাদমাধ্যমের সমর্থন ওদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা জানেন, আমি কী বলতে চাচ্ছি। ভালো আমাদের খেলতে হবে, ওরা এটা জানে। তবে কিছু সময় দরকার, বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রতিযোগিতা করতে। সুতরাং ধৈর্য ধরুন। ওরা আপনাদের গর্বিত করবে। কিছু সময় দরকার এই যা।”