নেট সেশন : বাংলাদেশের 'ব্যাডপ্যাচ' কাটানোর সুযোগ?
একমাত্র টেস্ট
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে
কবে, কখন
২২-২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
বাংলাদেশ সময় ৯ টা (০৯০০)
বিশ মিনিটের বিপরীতে ছয় মিনিট- ম্যাচের আগে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের সংবাদ সম্মেলনের দৈর্ঘ্য। ক্রিকেট সংস্কৃতি থেকে শুরু করে দলের কম্বিনেশন, বোর্ড প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপ থেকে শুরু করে অধিনায়কের আত্মবিশ্বাস- রাসেল ডমিঙ্গো ও মুমিনুল হক কথা বললেন প্রায় সব টপিকেই। ক্রেইগ এরভিন ও লালচাঁদ রাজপুতের সঙ্গে ব্যাপারটা তেমন হলো না ঠিক।
ম্যাচটা ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত না। জিম্বাবুয়ের কাছে ম্যাচটা কালেভদ্রে আসা টেস্ট খেলার সুযোগের আরেকটি। আর বাংলাদেশের কাছে ‘ব্যাডপ্যাচ’ কাটানোর। শুধু ব্যাডপ্যাচ বললে আদতে কতখানি বলা হলো, সে প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যায়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের পর আর টেস্ট জেতেনি বাংলাদেশ।
প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলে সেটি হয়তো উহ্য থাকছে, কিন্তু সেরকম সুযোগ আসলে নেই। বাংলাদেশে শেষবার খেলতে এসে জিম্বাবুয়ে হারিয়ে দিয়েছিল স্বাগতিকদের, পরে বাংলাদেশ হেরেছে আফগানিস্তানের কাছেও। ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে ফলটা তাই ছিল অনুমিতই।
“আমার কাছে মনে হয়, এই ম্যাচটা জিততে পারলে বা ভাল ক্রিকেট খেলতে পারলে পুরো ব্যাপারটা বদলে যাবে। মানে আগে যেসব ম্যাচ হেরেছি, সেটা না। ব্যাডপ্যাচের মধ্যে ছিলাম, সেটা কাটিয়ে উঠতে পারব”, আশা অবশ্য ঠিকই জোগালেন মুমিনুল হক। শুধু আশা দিলেন না, রীতিমতো কথাও দিয়ে গেলেন “একটা বড় ইনিংসের।”
শুধু বড় ইনিংসে যে কাজ চলবে, সেটা নয় অবশ্য। দেশের মাটিতে ‘উপেক্ষিত’ পেসাররা কী করবেন, মূলশক্তি বলে বিবেচ্য স্পিন কতোখানি কার্যকর হবে, এবং সবার ওপর ব্যাটসম্যানরা রান পাবেন কিনা- প্রতিপক্ষ যেই হোক, বাংলাদেশের টেস্টের আগে তো এসব প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসবেই।
ব্যাটিংয়ে অবশ্য শেষ রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের সঙ্গে শক্তিমত্তায় বাড়তি একটা তূণ যোগ হচ্ছে বাংলাদেশের, ফিরছেন মুশফিকুর রহিম। আবার মাহমুদউল্লাহ বাদ পড়েছেন বলে অভিজ্ঞতা ঠিক বাড়ছে না। অভিজ্ঞতায় জিম্বাবুয়েও আছে ‘ঘাটতি’র খাতায়- নিয়মিত অধিনায়ক শেন উইলিয়ামসের সঙ্গে দুই পেসার- কাইল জারভিস ও টেন্ডাই চাতারাকে পাচ্ছে না তারা।
টেস্টে সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে অবশ্য জিম্বাবুয়েই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের মাটিতে প্রথম টেস্টে ড্র করতে করতে আটকে যাওয়ার পর দ্বিতীয় টেস্টে জয়বঞ্চিত হয়েছে তারা অল্পর জন্য।
প্রস্তুতি ম্যাচেও বিসিবি একাদশের তরুণ দুই ব্যাটসম্যানের সামনে নাজেহাল হয়ে পড়েছিল তাদের মোটামুটি অনভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণ। শেষ পর্যন্ত সেটি শুধুই প্রস্তুতি ম্যাচ, আসল লড়াইটা তো হবে টেস্ট শুরু হলেই। মুমিনুল হক যেমন বলছিলেন, আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে চাপ থাকবেই, সেটি মেনে নিয়েই খেলতে হবে তাদের। এ ম্যাচেও বাড়তি চাপ নেই।
মুমিনুল সেটি বললেও ‘ব্যাডপ্যাচ’ কাটানোর ব্যাপারটি তো থাকছেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভাল কিছু হয়তো বাংলাদেশের জন্য এখন প্রত্যাশিতই, তবে পা হড়কালে ব্যাডপ্যাচের ‘ব্যাড’ যে ‘ওরস’ হবে- সেটি তো আর বলার অপেক্ষা রাখছে না।
রঙ্গমঞ্চ
শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম
শেষ এ ভেন্যুতে বাংলাদেশ যখন টেস্ট খেলেছিল, মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিতে ভর করে এক ইনিংস ব্যাটিং-ই জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সে টেস্টে স্পেশালিস্ট পেসার ছাড়াই নেমেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ টেস্টে এর দুটির একটিও হচ্ছে না।
কোচ ডমিঙ্গো ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, উইকেটে দিনের শুরুতে ময়েশ্চার থাকবে বলে ধারণা তাদের, এবং দুই পেসার নিয়ে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচের আগেরদিন পর্যন্ত উইকেটে হালকা ঘাসের ছোঁয়া ছিল, শুরুতে পেসারদের সহায়তা পাওয়াটা তাই স্বাভাবিকই। এ মাঠে নিজেদের শেষ টেস্টে জিম্বাবুয়েও হেরেছিল বড় ব্যবধানে।
যাদের ওপর চোখ
মুশফিকুর রহিম
পাকিস্তান সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পর তাকে নিয়ে কথা উঠেছিল, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেকে ‘প্রমাণ করে ফিরতে হবে মুশফিককে’। সে প্রমাণ তিনি অবশ্য করেছেন বিসিএলে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে। মুমিনুল আগে থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, মুশফিক খেলবেন। তার ফেরাটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে এখন বাংলাদেশ অধিনায়ককে।
সিকান্দার রাজা
শ্রীলঙ্কা সিরিজটা এই অলরাউন্ডারের কেটেছে স্বপ্নের মতো। ৪১ গড়ে ১৬৪ রানের সঙ্গে ২১.৬৩ গড়ে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টে হয়েছিলেন ম্যাচসেরাও। উইলিয়ামসের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলিংটাও মিস করবে জিম্বাবুয়ে, ফলে বাড়তি একটা দায়িত্ব এসে পড়ার কথা রাজার ওপরই।
সম্ভাব্য একাদশ
হাসান মাহমুদকে স্কোয়াড থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, ২ পেসার খেলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন কোচ। আর ৭ ব্যাটসম্যানের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে বলেও বলেছেন কোচ-অধিনায়ক দুজনই।
বাংলাদেশ
তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন দাস (উইকেটকিপার), তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ/নাঈম হাসান, আবু জায়েদ রাহি, এবাদত হোসেন
জিম্বাবুয়ে
প্রিন্স মাসভউরে, কেভিন কাসুজা, ক্রেইগ এরভিন (অ), ব্রেন্ডন টেইলর, সিকান্দার রাজা, রেজিস চাকাভা (উ), টিমাইসেন মারুমা, কার্ল মাম্বা, টিনোটেন্ডা মুতোমবদজি, ডোনাল্ড টিরিপানো, ভিক্টোর নায়ুচি
সংখ্যার খেলা
- রেকর্ড অনুযায়ী তাইজুলের সবচেয়ে ‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। ক্যারিয়ার গড় ৩৩.৪৬ থেকে তাদের বিপক্ষে নেমে আসে ২১.১১-তে। কোনও একটি দলের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ৩৫টি উইকেটও তাদের বিপক্ষেই।
- টেইলরের প্রিয় প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ, ক্যারিয়ায়রে ২০২৮ রানের ১০৩৯ রানই তিনি করেছেন তাদের বিপক্ষে। ক্যারিয়ার গড় ৩৬.২১ থেকে বেড়ে হয়ে যায় ৬৪.৯৩, ৬ সেঞ্চুরির ৫টিই বাংলাদেশের সঙ্গে।
- মিরপুর টেস্ট দুই দলের মধ্যে শততম ম্যাচ।
তারা বলেন
আমি কথাই দিয়ে দিলাম, দলের মধ্যে ইনশাআল্লাহ বড় একটা ১০০, ১০০ না, ২০০-৩০০… ৩০০-ই ধরি (ইনিংস হবে)। চাইলে বড়ই চাব। এরকম বড় ইনিংস খেলতে পারবে, যে কেউ খেলবে ইনশাল্লাহ।
মুমিনুল হক, বাংলাদেশ অধিনায়ক
টেস্টে বাংলাদেশের বাজে অবস্থা চলছে। তবে অবশ্যই নিজেদের কন্ডিশনে তারা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। অবশ্য এই কন্ডিশন আমাদের জন্যও চেনা কিছুটা, যেহেতু অতীতে প্রায়ই সফরে এসেছি আমরা। একদম অচেনা নয় তাই। ভাল একটা প্রতিদ্বন্দীতা হওয়া উচিৎ।
ক্রেইগ এরভিন, জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক