টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চান ডমিঙ্গো, চান সময় আর ধৈর্য
একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠতে কতোদিন প্রয়োজন?
এ প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর দেওয়া বোধহয় কঠিন। টাইমফ্রেমটাও তাই অনির্দিষ্ট। কেউ এই সংস্কৃতি গড়ে তোলার কথা বললে তাই আপনি আশাবাদি হতে পারেন, অথবা অনির্দিষ্ট টাইমফ্রেমে হারিয়ে যেতে পারেন। রাসেল ডমিঙ্গোর কথাও হয়তো এর ব্যতিক্রম নয়, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যখন একটা ‘টেস্ট-সংস্কৃতি’ গড়ে তোলার ইচ্ছা পোষণ করলেন বাংলাদেশের হেড-কোচ।
মূলত টেস্ট ক্রিকেটকে আরও ‘সিরিয়াস’ হিসেবে নেওয়ার তাগিদ থেকেই ডমিঙ্গোর এমন কথা। সে সিরিয়াস হওয়াটা অবশ্য ক্রিকেটারদের জন্য নয়, মূলত ক্রিকেট-প্রশাসনের কাছেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের আগে প্রস্তুতির ঘাটতি, এবং এরপর আবার পাকিস্তান সফরের সূচিতে বেশ হতাশই হয়েছেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অবশ্য প্রস্তুতিতে খুশিই তিনি।
“জেতার গুরুত্ব আসলে অনেক। তবে আমরা একটা টেস্ট-সংস্কৃতি গড়তে চাই”, বলছেন ডমিঙ্গো, “আমরা যেভাবে টেস্টের প্রস্তুতি ও সূচি ঠিক করছি… কোচ হিসেবে আমি এই টেস্টে অন্য যে কোনোটির চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছি, কারণ আমরা একত্রে ৪-৫ দিন আছি। আমি কখনোই এমন টেস্টের অংশ ছিলাম না, যেখানে একদিন উড়ে গেলাম, একদিন অনুশীলন করলাম, আর তারপর একটা টেস্ট খেলে ফেললাম।”
“এরপরের সূচিতে আছে পাকিস্তান- আমরা উড়ে যাব, একটা ওয়ানডে খেলব, অনুশীলন করব, এরপর একটা টেস্ট খেলব। কোনও সিরিয়াস দলের সূচিই এমন না। আমাদের এটা বদলাতে হবে। এটা সংস্কৃতিগত ব্যাপার। আমাদের টেস্টের প্রতি আরও মনযোগ দিতে হবে। আমি ক্রিকেটারদের এই গ্রুপ দ্বারা চমৎকৃত। তাদের টেস্টে ভাল করার একটা তাড়না আছে বলেই মনে হয়।”
অবশ্য ব্যাপারটা যখন সংস্কৃতিগত, তখন তো তা শুধু সূচির ফ্রেমে বাঁধা নয়। দেশের মাটিতে স্পিন-নির্ভরতা, এবং দেশের বাইরে গিয়ে পেসারের জন্য হাপিত্যেশ করা- বাংলাদেশের টেস্ট সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে যেন সেটিও। ডমিঙ্গো সে ধারাটাও ভাঙতে চান। সেক্ষেত্রে তার রেসিপি অন্তত দুই পেসার খেলানো। আর ৭ ব্যাটসম্যান খেলানোর মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছা থাকলেও পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাবে সেটি আপাতত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
কোচের সঙ্গে সুর মেলালেন অধিনায়ক মুমিনুল হকও, “আমার কাছে মনে হয়, দলের মধ্যে যখন ভারসাম্য চলে আসবে, ৬টা বা ৭টা জেনুইন ব্যাটসম্যান আসবে, তখন পরিবর্তন হয়ে যাবে ধীরে ধীরে। আমাদের দলটা এমন না যে অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের মতো। আমাদের যখন ওই জিনিসটা তৈরি যখন হবে, তখন (এই ব্যাপারটা) চলে আসবে। টিমের কম্বিনেশনের কারণে ওই জিনিসটা করতে হয়।”
“এখন আমার কাছে মনে হয়, কোচ যেটা বলেছে, সেই কৌশলেই। এখন সবসময়ই যদি একই কৌশলে যান, তাহলে অন্য দলগুলি আমাদের ধরে ফেলার সুযোগ থাকবে। পেসার যদি না খেলান, তখন বাইরে গেলে ভুগতে হয়। খুঁজতে হয়, যে কাকে খেলাব- আপনাকে খেলাব না আমাকে খেলাব- এমন। এ জিনিসগুলি থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে হবে মনে হয়। কোচ যেটা বললো সেটাই ঠিক।”
এই ধীরে ধীরে বের হয়ে আসা, বা সংস্কৃতি গড়ে তোলা- এসবের জন্য স্বাভাবিকভাবেই সময় চাইলেন কোচ। সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর শেষ হওয়ার পর আলাদা করে একটা বার্তা দিলেন তিনি- সংবাদমাধ্যম, সমর্থক- সবার উদ্দেশে। সে বার্তার মূল বিষয়- এ দলটা অনভিজ্ঞ, ধৈর্য ধরে পাশে থাকতে হবে। এ দলটা ‘গর্বিত করবে সবাইকে’।
আপনিই আশাবাদি হতে পারেন, অথবা অনির্দিষ্ট টাইমফ্রেমে হারিয়ে যেতে পারেন। সে ভার আপনার ওপর।