অবশেষে বাংলাদেশকে দুদন্ড 'শান্তি' দিল মিরপুরের প্রথম দিন
১ম দিন, স্টাম্পস
জিম্বাবুয়ে ২২৮/৬* (এরভিন ১০৭, মাসভাউরে ৬৪, নাঈম ৪/৬৮, রাহি ২/৫১)
অবশেষে কি স্বস্তির একটা দিন টেস্টে পেলো বাংলাদেশ?
হয়তো ঠিক দাপুটে পারফরম্যান্সের দিন নয় এটি, তবে মিরপুরের কৌশলি উইকেটে শুরুতে দুই পেসার, আর পরে নাঈম হাসানের ধারাবাহিক বোলিংয়ে একটু স্বস্তি পাওয়ারই কথা বাংলাদেশের। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ের একের পর এক বাজে পারফরম্যান্সের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশের।
দিনের শেষের আগের ওভারে নাঈমের উল্লাসটাই আদতে বলে দিচ্ছিল সব। ক্রেইগ এরভিন তার বাড়তি পেসের বলে ভারসাম্য হারালেন, বল প্যাডে লেগে গিয়ে ভাঙলো স্টাম্প। যে দিনটা এতক্ষণ দুই দলের মাঝে তৈরি হওয়া সুতোর ওপর ঝুলছিল, সেটিই হেলে গেল বাংলাদেশের দিকে, নাঈমের ওই উইকেটেই। এরভিনের দারুণ সেঞ্চুরির পরও বাংলাদেশকে একটু এগিয়ে দিল তো নাঈমের বোলিং-ই।
মিরপুরের এ উইকেটে দুই পেসারের সঙ্গে দুই স্পিনার নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ, টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে দুই জিম্বাবুয়ে ওপেনারকে পড়তে হলো রাহি-এবাদতের স্কেলমাপা বোলিংয়ের সামনে। টিকে থাকাই সেখানে মুখ্য লক্ষ্য ছিল যেন তাদের। অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটে এরভিন-মাসভাউরের জুটি বাংলাদেশকে হতাশ করে গেছে বেশ কিছুক্ষণ, টানা বোলিং করে যাওয়া নাঈম এরপর একটু পরপরই হাজির হয়েছেন দৃশ্যপটে।
এরভিনও শুরুতে নড়বড়ে ছিলেন, রিভার্স সুইপেও যেন তেমন নিয়ন্ত্রণ ছিল না তার। এখানে-সেখানে এজ হলো, বল অল্পর জন্য মিস করে গেল স্টাম্প। তবে এরভিন থাকলেন ঠাঁই দাঁড়িয়ে, রিভার্স-সুইপও পরে খেললেন বেশ দাপটের সঙ্গে। ক্রিজের সবদিকেই খেলেছেন, তবে বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে ছিলেন দারুণ- স্পিনকে সামলেছেন তিনি বেশ ভালভাবেই।
মাসভাউরের সঙ্গে সেঞ্চুরির জুটির পর বড় জুটি হয়নি আর তার, তবে আউট হওয়ার আগে জিম্বাবুয়েকে এগিয়ে নিয়েছিলেন তাদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কই। ২১৩ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন, এর আগে ফিফটি করতে খেলেছিলেন ১১৭ বল।
দিনের একেবারে শুরুতে উইকেট ছাড়া সবকিছুই পেয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই পেসার। প্রথম ৬ ওভারে ব্যাট থেকে রান আসেনি কোনও, ৭ম ওভারের প্রথম বলে মাসভউরের কাভার ড্রাইভ সে খরা কাটিয়েছিল। প্রথম ১১ ওভারের ৭টিই হয়েছিল মেইডেন।
তবে উইকেটটা যেন মিলছিল না, দুই ওপেনার পরাস্ত হচ্ছিলেন যদিও বারবার। ৮ম ওভারের শেষ বলে অফস্টাম্প ঘেঁষা লাইনের বলে খেলতে গিয়ে এজড হয়ে গালিতে ধরা পড়লেন কেভিন কাসুজা, রাহি এনে দিলেন প্রথম ব্রেকথ্রু।
সকালে এবাদত-রাহির বোলিং যে ইঙ্গিত দিল, ঠিক সেসব মিললো না এরপর। প্রথমে এবাদতকে সরিয়ে নাঈমকে আনলেন মুমিনুল, এক ওভার পর সরিয়ে নিয়েছিলেন রাহিকেও। শুরুতে নড়বড়ে থাকা এরভিন বা মাসভাউরে লাঞ্চের আগে আর আউট হলেন না, ৮০ রান নিয়ে বিরতিতে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।
শীঘ্রই সে জুটি ভাঙলো না। রাহিকে স্ট্রেইট ড্রাইভে আর মেরে ফিফটি পূর্ণ করলেন মাসভাউরে, সে ওভারে মেরেছিলেন আরেকটি চার। মাসভাউরে যতক্ষণে নাঈমকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন, ততক্ষণে দুইবার জীবন পেয়েছেন- ৫৮ রানে নাঈমের হাতে ফিরতি ক্যাচের কঠিন একটা সুযোগ দিয়েছিলেন, ৫৯ রানে স্লিপে শান্ত ক্যাচ নিতে পারেননি, এর আগে সে ক্যাচ ডাইভ দিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন লিটনও।
ব্রেন্ডন টেইলর নেমে তাইজুলকে ইনসাইড-আউটে একটা চার মেরেছিলেন, তবে রিভার্স-সুইপের অতিচেষ্টা কাল হয়েছে তার। এদিন যেন শুধুই এরভিনের রিভার্স সুইপের! নাঈমের পেস ঠিকঠাক বুঝতে না পেরে স্টাম্পে বল ডেকে এনেছেন টেইলর, এর আগের বলেই রিভার্স-সুইপ করতে গিয়ে সফল হননি ঠিক।
চা-বিরতির আগে সিকান্দার রাজাকে দৃঢ়ই দেখাচ্ছিল, দ্বিতীয় সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে আরও ৭০ রান যোগ করেছিল জিম্বাবুয়ে। নাঈমের একটা আলগা বলে চারের পর তাইজুলকে মেরেছিলেন আরেকটি, তার বিপক্ষে রিভিউ নিয়ে হারিয়েছেও বাংলাদেশ।
তবে শেষ পর্যন্ত রাজার সঙ্গে দ্বৈরথটাও জিতেছেন নাঈমই। টার্ন-স্ট্রেইটের মিশ্রণে ভড়কে যেতে হয়েছে রাজাকে, রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা নাঈমের বলে এজড হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। টিমাইসিন মারুমা একবার রিভিউ নিয়ে বাঁচলেও শেষরক্ষা হয়নি, রাহির ভেতরের দিকে ঢোকা বল মিস করে হয়েছেন এলবিডব্লিউ, রিভিউ বিফলেই গেছে তার এ দফা।
রেজিস চাকাভাকে নিয়ে এরপর দিনটা শেষ করার পথেই এগুচ্ছিলেন এরভিন। ৮১.২ ওভার পর দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে টানা ৩২ ওভারের স্পেল করা নাঈমকে আরেকবার আনলেন মুমিনুল- নতুন বলে ‘দৃঢ়তা’ কাজে লাগিয়ে এরপরই নাঈম করলেন সেই দারুণ ডেলিভারিটা। যে ডেলিভারিতে দিনের ভাগের একটু বেশি অংশটা পেল বাংলাদেশ, আর পেলো স্বস্তি।