• জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    অচেনা পরিস্থিতিতে নিজের চেনা মন্ত্র কাজে লাগিয়ে সফল নাঈম

    অচেনা পরিস্থিতিতে নিজের চেনা মন্ত্র কাজে লাগিয়ে সফল নাঈম    

    ডোনাল্ড টিরিপানো সামনে ঝুঁকে ডিফেন্ড করলেন নাঈমের দিনের শেষ বলটা, একদিনে ৫ উইকেট পাওয়া হলো না তার। বলটা নিয়ে একটু ঘষে নিয়ে ছুঁড়লেন তাইজুল ইসলামের জন্য। দ্বিতীয় নতুন বলের বয়স তখনও ৮ ওভার হয়নি। নাঈমের কাছে একদিক দিয়ে এটা পরিচিত ব্যাপার- স্পিনাররাই নতুন বলে, স্পিনাররাই পুরোনো বলে। এর আগে যে ৩ টেস্টে বোলিং করেছেন, সে ৩ ম্যাচ মিলিয়ে স্বীকৃত পেসারের অবদান ছিল মোটে ৪ ওভার। 

    অবশ্য এ দিনের পরিস্থিতিটা ঠিক চেনা নয় নাঈমের কাছে। যদিও টেস্টের প্রথম দিন, তবে মিরপুরের উইকেট তো সাম্প্রতিক সময়ে পরিচিত স্পিনস্বর্গ হিসেবেই। ম্যাচশেষে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ এরভিন যেমন বলছিলেন, “ঢাকার উইকেট মানেই আমরা জানি যে, সামনে কী হবে নিশ্চিত নয়!” 

    উইকেট যে তেমন থাকবে না, সেটির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগের দিনই। তবে এ উইকেট রীতিমতো ব্যাটসম্যানদের জন্য সহায়ক, প্রথম দিকের সময়টা পার করে দিতে পারলে। সে উইকেটেই বাংলাদেশ পেসাররা শুরুতে দারুণ বোলিং করলেন, এরপর নাঈম সেটিকে নিয়ে গেলেন আরেকটু ওপরের পর্যায়ে। টার্ন পেলেন না তেমন, যা সম্বল পেসের বৈচিত্র আর ধারাবাহিকতা। নাঈম কাজে লাগালেন দুটিকেই। 

    তার মতে, তার আজকের বোলিংয়ের মন্ত্র তিনটি- জায়গামতো বেশিক্ষণ বোলিং করা, পেসে বৈচিত্র আনা, রান বেশি না দেওয়া। নাঈম জায়গামতো করেছেন- ৪টি উইকেটের ৩টিই পেয়েছেন তিনি গুডলেংথ থেকে, এর মাঝে অন্তত দুটিতে ব্যাটসম্যান পরাস্ত হয়েছেন পেসে। ৩৬ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন মাত্র ৬৮ রান, ১.৮৮ হারে। 
     


    সবার আগে নাঈম/ রতন গোমেজ, বিসিবি


    অবশ্য এসব ব্যাপারের সঙ্গে নাঈমের বোলিংয়ের আরেকটা উল্লেখযোগ্য দিক আছে- তার ৩২ ওভারের ম্যারাথন স্পেল। ১১তম ওভারে এবাদতকে সরিয়ে তাকে এনেছিলেন মুমিনুল, লাঞ্চ-চা-বিরতির আগে-পরে একপ্রান্ত থেকে তাকে সরিয়ে নিয়েছেন ৭৫তম ওভারে গিয়ে। 

    টানা বোলিংটা অবশ্য অপরিচিত নয় তার জন্য। বিসিএলে নিজের খেলা শেষ ২ ম্যাচে প্রতি ইনিংসে তিনি করেছেন ৩২ ওভারের বেশি করে। উইকেটও নিয়েছেন ২১টি। উইকেট বা লম্বা সময়ের বোলিং- নাঈম দুটির জন্যই তাই কৃতিত্ব দিচ্ছেন ঘরোয়া লিগকে, “জাতীয় লিগ থেকে অভ্যাস আছে, ওখানে লম্বা স্পেল করেছি। লম্বা স্পেল করলে ধৈর্য ধরে একটা জায়গায় বোলিংয়ের চেষ্টা করি।” 

    “(বিসিএলে উইকেট পাওয়া) সহায়তা তো করবেই। ওখানে অনেক বোলিং করেছি। উইকেট পেয়েছি। অনুশীলনের চেয়ে ম্যাচ খেলা বেশি ভাল।”

    নাঈমের জন্য অচেনা আছে আরেকটি দিক- সাকিব আল হাসানকে ছাড়া বোলিং করা। তবে সাকিবকে পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্নের ব্যাপারে তিনি দিলেন অন্যরকমের এক উত্তর, “যখনই বলটা হাতে নেই, (লক্ষ্য থাকে) দায়িত্ব পালন করা। (আর) সাকিব ভাই থাকলে সুবিধা- তার থেকে ব্যাটিং-বোলিং দুইটা পাওয়া যায়।”

    সাকিব না থাকায় স্পিনে মূল ভূমিকাটা তাইজুল ইসলামেরই, রাওয়ালপিন্ডি টেস্টেও একমাত্র স্পিনার হিসেবে খেলেছিলেন তিনিই। তাইজুল অবশ্য এদিন বেশ কিছু বাজে বল করেছেন, শাস্তিও পেয়েছেন- ওভারপ্রতি ৩.৫৭ হারে রান। নাঈম অবশ্য তার বোলিংয়ের জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন তাইজুলকেও, “পুরো দিনের বোলিংয়ে খুশি। তাইজুল ভাই উইকেট পায় নাই, তবে উনি ভাল বোলিং করেছেন বলেই উইকেট পেয়েছি। আমি যদি কাল একপাশ থেকে ডট দিই, তাহলে তাইজুল ভাই উইকেট পাবে। ‘পার্টনারশিপ বোলিং’।”

    দিনশেষে অবশ্য মাঠ ছাড়ার সময় শুধু তাইজুল নয়, সবার আগেই থাকলেন তিনি। দলের সেরা পারফর্মারকে এগিয়ে যেতে দিলেন তামিম-মুমিনুল-মুশফিকরা। দলের সেরা পারফর্মার হওয়াটা নাঈমের জন্য নতুন নয়। তবে টেস্টে, মিরপুরের অচেনা উইকেটে, অন্যরকম কন্ডিশনে নাঈম করলেন হয়তো তার ‘চেনা’ বোলিংটাই- ‘জায়গামতো বেশিক্ষণ করে যাওয়া, পেসে বৈচিত্র আনা, রান বেশি না দেওয়া’।