• জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    মুশফিকের ডাবল, মুমিনুলের সেঞ্চুরির পর নাঈমের 'আইসিং অন দ্য কেক'

    মুশফিকের ডাবল, মুমিনুলের সেঞ্চুরির পর নাঈমের 'আইসিং অন দ্য কেক'    

    ৩য় দিন, স্টাম্পস
    জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস ২৬৫ (এরভিন ১০৭, মাসভাউরে ৬৪, নাঈম ৪/৭০, রাহি ৪/৭১) ও ২য় ইনিংস ৯/২* (নাঈম ২/৪)
    বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫৬০/৬ ডিক্লে. (মুশফিক ২০৩*, মুমিনুল ১৩২, শান্ত ৭১, এন্ডলোভু ২/১৭)
    জিম্বাবুয়ে ২৮৬ রানে পিছিয়ে


    মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ২০৩ রানের মাস্টারক্লাসের সঙ্গে মুমিনুল হকের ১৩২, আর শেষবেলায় নাঈম হাসানের পরপর ২ বলে ২ উইকেটে ‘কেকের ওপর আইসিং’-এ ‘পারফেক্ট’ দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। ৫৬০-এর রানপাহাড়ে চড়ে বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ার পর ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে টেস্টের ২ দিন বাকি থাকতেই পরাজয়ের বিষাক্ত ছোবল দেখতে পাচ্ছে জিম্বাবুয়ে। 

    এ ম্যাচ শুরুর আগে কথা দিয়েছিলেন মুমিনুল হক- একটা বড় সেঞ্চুরি করবেন যে কেউ। মুমিনুল সেটি করলেন, তবে ডাবল বা এমন কিছু করতে পারলেন না। মুশফিক ঠিকই করলেন তা। প্রথম দিন বাংলাদেশের জন্য ছিল দুদন্ড শান্তির, দ্বিতীয় দিন আক্ষেপ-তৃপ্তির যুগলবন্দীর। তৃতীয় দিনটি বলা যায় বাংলাদেশের জন্য ‘পারফেক্ট’।  

    আগেরদিন সেঞ্চুরি থেকে ২১ রান দূরে ছিলেন মুমিনুল, মুশফিকের ফিফটির জন্যই লাগতো আরও ১৮ রান। লাঞ্চের আগে মুমিনুল সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন, মুশফিক থাকলেন ১ রানের অপেক্ষায়। বিরতির পর তেমন সময় নিলেন না। এরপর দেড়শ, ডাবল- মুশফিক পেয়ে গেলেন সবকটিই- সবকটি মাইলফলকেই তিনি পৌঁছালেন বাউন্ডারিতে। 

    কাট আর ড্রাইভে মুশফিক এদিন ছিলেন দুর্দান্ত, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট ও এক্সট্রা কাভার অঞ্চল দিয়েই করেছেন ৯৪ রান। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি ইনিংসে মেরেছেন সব মিলিয়ে ২৮টি চার। বলতে গেলে পুরো ইনিংসে সুযোগ দেননি একটিও। মুশফিকের ডাবলেই যেন খানিকটা তাই ম্লান হয়ে গেছে ২০১৮ সালের পর, ১৪ ইনিংস পর পাওয়া মুমিনুলের সেঞ্চুরি। তাতে অবশ্য মুমিনুলের অখুশী হওয়ার তেমন কিছু নেই। 

    সকালে শুরুতে একটু আঁটসাঁট ছিলেন জিম্বাবুয়ে বোলাররা, মুশফিকের একটা এজ গালির নাগালের বাইরে ছিল। তবে এরপর থেকেই তাদের ওপর চড়াও হলেন মুশফিক-মুমিনুল। ৭৬ ও ৭৮তম ওভারের স্যান্ডউইচ ওভারে এন্ডলোভুর কাছ থেকে ১৫ রান তুলেছিলেন দুজন। সেই ৭৮তম ওভারের পর আরেকটি মেইডেন করতে জিম্বাবুয়েকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১০৮তম ওভার পর্যন্ত। 

    দ্বিতীয় নতুন বলের আগেই লিড পাওয়া হয়ে গেছে বাংলাদেশের, নতুন বল নিতে দেরি করেননি এরভিন। তবে কাজ হয়নি তাতেও। মুমিনুলকে নব্বইয়ে রেখে নিজের ফিফটি ও দুজনের সেঞ্চুরি জুটি পূর্ণ করেছিলেন মুশফিক, নাইউচিকে চার মেরে। 

    নতুন বলে টানা চার ওভারে এসেছে বাউন্ডারি, জিম্বাবুয়ের যেন বাঁচার কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। ডোনাল্ড টিরিপানোকে কাভার ড্রাইভে চার মেরে সেঞ্চুরি হয়েছে মুমিনুলের, ১৫৬ বলে, ১৪ চারে। বেশ কিছুদিন ধরেই চাপে ছিলেন মুমিমুল, অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর সেটি যেন বেড়েছে আরও। তবে তার উদযাপনে তেমন কিছু মিশে থাকলো না, করতে হয় বলেই করলেন যেন। শেষ পর্যন্ত প্রথম সেশনে ১২০ মিনিটে ১১১ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। 

    মুশফিকের উদযাপন অবশ্য একটু সরবই ছিল। বিরতির পর এন্ডলোভুকে কাট করে চার মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ব্যাটটা ঘুরিয়ে একটু বুনো উল্লাস করেছেন, যেন ব্যাটই তার হয়ে কথা বলছে- বুঝালেন সেটি। ১৬০ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়েছে তার, ততক্ষণে মেরেছিলেন ১৮ বাউন্ডারি। 

    সেঞ্চুরির পর টিরিপানোকে মেরেছিলেন টানা তিন চার- কাভার ড্রাইভে, কাট করে, অফস্টাম্পের বাইরে সরে গিয়ে স্কুপ করে। সে ওভারেই ফুললেংথের ডেলিভারিতে তার বিপক্ষে এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে, তবে টিরিপানোর ব্যাকফুট ছুঁয়েছিল রিটার্ন ক্রিজ। বল-ট্র্যাকিং দেখিয়েছে, উইকেটে সেটি হতো আম্পায়ারস কল। মুশফিককে আউট করার অতটুকু কাছেই যেতে পেরেছে এদিন জিম্বাবুয়ে। এর আগে এন্ডলোভুকে টেনে খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মুমিনুল, মাথার ওপর থেকে সেটি বেশ ভালভাবে নিয়েছেন এন্ডলোভু। 

    মুমিনুলের পর মিঠুন এসে অবশ্য বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি মুশফিককে, এন্ডলোভুর দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়েছেন কাট করতে গিয়ে এজড হয়ে। রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে বাঁচতে পারেননি। লিটন দাস এসে বেশ কিছুক্ষণ খোলসবন্দি হয়ে ছিলেন, শটও খেলেছেন বেশ কম। শেষ পর্যন্ত ফিফটি করেছেন, ৫টি চারে। সিকান্দার রাজাকে গ্লাইড করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে চাকাভার দারুণ রিফ্লেক্সের শিকার তিনি, হাত-পা মিলিয়ে চাকাভা নিয়েছেন ইনিংসের নিজের পঞ্চম ক্যাচ। 

    এর আগেই মুশফিক আরেক দফা উড়ান দিয়েছেন, লিটনের সঙ্গে সঙ্গে। সুইপ, রিভার্স সুইপ- খেলেছেন সবই। ডাবল সেঞ্চুরি অবশ্য এসেছে এদিন তার ট্রেডমার্ক হয়ে যাওয়া কাটেই। তার ডাবল সেঞ্চুরির পর ঐ ওভারশেষেই ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছে বাংলাদেশ। 

    জিম্বাবুয়ে এরপর নেমে যেন চোখে আঁধার দেখেছে, চা-বিরতির আগ থেকেই যদিও খেলা হচ্ছিল ফ্লাডলাইটের সহায়তায়। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ব্যাট-প্যাডে ফাঁক রেখে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন প্রিন্স মাসভাউরে, পরের বলে নাইটওয়াচম্যান ডোনাল্ড টিরিপানো হয়েছেন এজড। নাঈমের হ্যাটট্রিক বল এরপর সামলেছেন ব্রেন্ডন টেইলর।