৪৫২ দিন পর বাংলাদেশের তৃষিত জয়
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস ২৬৫ (এরভিন ১০৭, মাসভাউরে ৬৪, নাঈম ৪/৭০, রাহি ৪/৭১) ও ২য় ইনিংস ১৮৯
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫৬০/৬ ডিক্লে. (মুশফিক ২০৩*, মুমিনুল ১৩২, শান্ত ৭১, এন্ডলোভু ২/১৭)
বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী
মিরপুরে সকাল থেকে মেঘলা আকাশ, মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হলো। ফেব্রুয়ারির শেষে এমন বৃষ্টি ঠিক প্রত্যাশিত নয়, গরমটা সেভাবে না পড়লেও এমন বৃষ্টি হয়তো একটা আমেজ জোগায়। এমন আবহাওয়ায় বাংলাদেশের ইনিংস ব্যবধানে জয়টা এলো অনেকখানি স্বস্তি নিয়েই। ২০১৮ সালের নভেম্বরের পর, প্রায় ৪৫২ দিন পর আরেকটি টেস্ট জিতলো বাংলাদেশ, নিজেদের ইতিহাসে মাত্র ২য় বারের মতো ইনিংস ব্যবধানে জয়। জয়টা যে স্বস্তির, তা বুঝে গেল শেষের উদযাপনেই। বলতে গেলে তেমন উদযাপন হলোই না!
সবচেয়ে বড় উল্লাসটা হলো বোধহয় মুমিনুল হকের ডিরেক্ট থ্রো-তে ক্রেইগ আরভিন আউট হওয়ার পরই। আগেরদিন ২ বলে ২ উইকেট নিয়ে নাঈম হাসান টোনটা সেট করে দিয়েছিলেন, আজ বাংলাদেশ ঝঙ্কার তুলতে সময় নিলো না বেশি। দুই সেশনে একটু কম সময়ে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে জিম্বাবুয়ে, নাঈম হাসান এদিন আরও ৩টি নিয়ে ক্যারিয়ারে ২য় বার পেয়েছেন ৫ উইকেট। সঙ্গে তাইজুল পালন করেছেন সহায়তাকারীর ভূমিকা। আর এর সঙ্গে দুর্দান্ত ফিল্ডিং যোগ হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে অনেক তৃষিত এক জয়ই।
আবু জায়েদকে দিয়ে শুরু করিয়েছিলেন মুমিনুল, মুভমেন্টও পেয়েছিলেন এই পেসার। আরেকদিক থেকে এসেছিলেন তাইজুল, সকালে ব্যাট থেকে প্রথম রান করতে ২৭তম বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল জিম্বাবুয়েকে, রাহিকে কাভার ড্রাইভে চার মেরেছিলেন টেইলর। অবশ্য পরের ওভারেই প্রথম ব্রেকথ্রু বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন তাইজুল। লেগ-মিডলে পড়া বলটা টার্ন করেছিল, টার্নের বিপরীতে খেলতে গিয়ে স্কয়ারড-আপ হয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েছিলেন কেভিন কাসুজা।
অধিনায়ক ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ক্রেইগ আরভিন আসার পর যেন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন টেইলর, প্রথম ইনিংসের মতো এবারও সফট ডিসমিসাল হলেন তিনি। নাঈমকে স্লগ করতে গিয়ে আকাশে তুলে মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করা এই ব্যাটসম্যান।
ইনিংসে এরপর নিজেদের অপেক্ষাকৃত সবচেয়ে ভাল সময়টা কাটিয়েছে জিম্বাবুয়ে- আরভিন ও সিকান্দার রাজার ৬০ রানের জুটিতে। এ রান দুজন মিলে তুলেছিলেন মাত্র ৭৯ বলে, দুই স্পিনারকে দুজন একটি করে ছয়ও মেরেছিলেন। আরভিনের রান-আউটে ভেঙেছে সে জুটি। রাজা পয়েন্টে খেলেছিলেন, তবে শর্ট এক্সট্রা কাভারে থাকা মুমিনুলের বুলেটগতির থ্রো যতক্ষণে স্টাম্প ভেঙেছে, জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ছিলেন ক্রিজের বাইরেই। এর আগে ৪৯ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে করেছেন ৪৩ রান।
লাঞ্চের আগে আর উইকেট হারায়নি জিম্বাবুয়ে, তাদের সব আশা ঝুলছিল রাজার ব্যাটেই। তবে বিরতির পর ছন্দপতন হলো তার, তাইজুলের ব্যাক অফ আ লেংথ বলটা ব্যাকফুটে গিয়ে ইনফিল্ড ক্লিয়ার করে খেলতে গেলেন তিনি, শর্ট মিডউইকেটে লাফিয়ে ওঠা মুশফিকের হাতে ধরা পড়ে সে আশা ব্যর্থ হলো তার। একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়া রাজার মুখটাই যেন হয়ে উঠলো তখন জিম্বাবুয়ের প্রতিচ্ছবি।
লাঞ্চের পর আর পেসার আসেননি, বোলিং করে গেহেন তাইজুল-নাঈমই। রেজিস চাকাভা ও টিমাইসেন মারুমা আর কিছুক্ষণ আটকে রেখেছিলেন বাংলাদেশকে, ৪৩ রানের এ জুটিও ভেঙেছে দুর্দান্ত এক ফিল্ডিং-পিসে। মিড-অনে লাফিয়ে উঠে চাকাভার ক্যাচটা নিয়েছেন তামিম।
এইনলে এন্ডলোভু ব্যাকফুটে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছেন নাঈমের বলে, হয়েছেন পরিষ্কার এলবিডব্লিউ। নাঈমকে তুলে মারতে গিয়ে তামিমের হাতে ধরা পড়ে এরপর তার পঞ্চম শিকারে পরিণত হয়েছেন মারুমা, ধৈর্যের বাধ অবশেষে ভেঙেছে তার ৪১ রান করে। চার্লটন শুমাও হয়েছেন এলবিডব্লিউ, তাইজুলের বলে। রিভিউ নিয়েও শেষরক্ষা হয়নি তার। চা বিরতির আগেই তাই জয়টা পেয়েছে বাংলাদেশ, বৃষ্টি বাগড়া দেওয়ার আগেই।