• জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    তামিমের ম্যাচে হৃদয় জিতল জিম্বাবুয়ে

    তামিমের ম্যাচে হৃদয় জিতল জিম্বাবুয়ে    

    বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৩২২/৮ (তামিম ১৫৮, মুশফিক ৫৫)

    জিম্বাবুয়ে ৫০ ওভারে ৩১৮/৮ (রাজা ৬৬, টিরিপানো ৫৫*; তাইজুল ৩/৫২)

    ফল: বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী।


    হৃদয় জেতার তো অনেক গল্প আছে বাংলাদেশের। মিরপুর, বেঙ্গালুরু, কলম্বো... কাছাকাছি গিয়েও অনেকবারই পারেনি বাংলাদেশ। আজ সেই গল্পটা লিখতে হলো জিম্বাবুয়েকে। প্রায় অবিশ্বাস্য একটা গল্পের নায়ক হয়ে যাচ্ছিলেন ডোনাল্ড টিরিপানো টিনোটেন্ডা মুতোম্বুদজি। শেষ পর্যন্ত গল্পটা জিম্বাবুয়ের জন্য হয়ে থাকল এত কাছে তবু এত দূরের। ৪ রানের জয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে মুশফিক পেলেন শততম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ। তবে জিম্বাবুয়ে যেভাবে খেলল, শেষ ম্যাচে আরেকটি জমজমাট লড়াইয়ের আশা করাই যায়।

    অথচ ২২৫ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর হয়তো আপনি টিভির রিমোট অফ করে দিয়েছিলেন। তখনও ৯৮ রান দরকার জিম্বাবুয়ের জিততে। বাকি মাত্র ৮ ওভার। ক্রিজে এমন দুজন, যাদের কারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো ফিফটি নেই। টিরিপানো তো লিস্ট এ ক্রিকেটেই কখনো ফিফটি করেননি কোনো। সেখান থেকেই দুজন শুরু করলেন অবিশ্বাস্য এক লড়াই।

    ৫ ওভারে যখন ৭৭ রান দরকার, জিম্বাবুয়ের পক্ষে ১ লাখে একজনও বোধ হয় বাজি ধরতেন না। শুরুটা করলেন টিরিপানো, আল আমিনের পর পর দুই বলে চার ছয় মেরে। সেই ওভারে এলো ১৬ রান, ৪ ওভারে দরকার ৬১ রান। শফিউল ইসলামের ওভারটাই জেগে ওঠার মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যান। পর পর দুইটি ছয় মারলেন টিরিপানো। সেই ওভার থেকে এলো ২০ রান। ৩ ওভারে দরকার ৪১ রান। আল আমিন ৭ রান দিলেন এর পরের ওভারে। ম্যাচ বাংলাদেশের পক্ষে হেলে গেল অনেকটাই।

    দুই ওভারে দরকার তখন ৩৪ রান। শফিউল এবার দিলেন দুইটি চার, শেষ ওভারে দরকার ২০ রান। দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে গেলেন মুতোম্বুদজি। টিরিপানো ঠিক করলেন, তিনি একাই চালিয়ে যাবেন। পর পর দুই বলে দুইটি ছয় মারলেন। শেষ ছয়ের পর উদযাপনও করে ফেললেন। কিন্তু সেটাই বোধ হয় কাল হলো। দুর্ভাগ্যই বটে, এরপরের বলটা টিরিপানোর পাথার ওপর দিয়ে গেলেও ওয়াইড দিলেন না আম্পায়ার। শেষ বলে দরকার ৬ রান, এবার আল আমিনের বলটা আর বাইরে পাঠাতে পারলেন না টিরিপানো। বাংলাদেশ পেল ৪ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়।

    সাইফ উদ্দিন ও মোস্তাফিজকে বিশ্রাম দিয়ে আজ শফিউল আর আল আমিনকে সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ। এই দুজনেই অবশ্য ম্যাচটা প্রায় ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তীরে এসে আর তরী ডোবেনি। তার আগে অবশ্য শফিউলই দিয়েছিলেন প্রথম ব্রেক থ্রু, তার বাড়তি বাউন্সে মিসটাইমিং করে কাভারে ক্যাচ দিলেন চাকাভা। ব্রেন্ডন টেলর শুরুটা পেতে পেতেও পেলেন না, মিরাজের দুর্দান্ত একটা ডাইভ আর পিক আপে রান আউট হয়ে ফিরলেন মাত্র ১১ রানে। শন উইলিয়ামসের ওপর অনেকটুকু ভরসা ছিল জিম্বাবুয়ের, কিন্তু ১৪ রান করে তিনিও মিরাজের বলে এলবিডব্লু। ওদিকে তরুণ কামুনহুকামওয়ে ফিফটি পেয়ে গেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাইজুলের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরেছেন ৫১ রানে।

    জিম্বাবুয়ের প্রতিরোধের প্রথম গল্পটা এরপর লিখেছেন সিকান্দার রাজা আর তরুণ ওয়েসলি মাদভেরে। পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাওয়া রান রেটের লাগাম দুজন টেনেছেন ৮১ রানের জুটি। মাদভেরে বয়সের তুলনায় দারুণ পরিণত খেলছিলেন, কিন্তু ৫২ রান করে এলবিডব্লু হয়ে গেছেন দিনের সেরা বোলার তাইজুলের বলে। রাজা মাশরাফির ওপর চড়াও হয়েছিলেন, কিন্তু ৫৭ বলে ৬৬ রান করে তার বলেই ক্যাচ দিলেন থার্ডম্যানে।

    তার আগে বাংলাদেশের গল্পটা তামিম ইকবালের প্রায় একার। এই ম্যাচের আগে বেশ চাপে ছিলেন। যতটা  না রান করার কারণে, তার চেয়েও বেশি সমালোচনা হচ্ছিল খেলার ধরনের জন্য। তামিম শুরু থেকেই আভাস দিচ্ছিলেন, আজ খোলস ছেড়ে বের হওয়ার দিন। শুরু থেকেই স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০র আশেপাশে। ফিফটিও পেলেন ৪২ বলে। তার আগেই অবশ্য দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে ফিরে গেছেন লিটন। আর শান্ত ফিরে গেছেন ভুল বোঝাবুঝিতে। তামিমের তাতে দায় না থাকলেও চাপটা বাড়ছিল।

    তবে মুশফিককে নিয়ে ইতিবাচক খেলেই জয় করলেন চাপ। দুজনের জুটিতে ৮৭ রান উঠল দ্রুত, ফিফটির পর ফিরলেন মুশফিক। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি শুরুতে স্লথ ছিল। তবে তামিম ১০৬ বলে পেলেন সেঞ্চুরি, এর মধ্যে সাত হাজার ওয়ানডে রানের মাইলফলকও হয়ে গেছে তার। সেঞ্চুরির পর তামিম আরও পাগলপারা, ছয় মারলেন এরপর তিনটি। ১৫০ হলো, নিজের ১৫৪ রান ছাপিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসের নিজের রেকর্ড নতুন করে লিখলেন। ডাবল সেঞ্চুরির একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা জাগিয়েই আউট হয়ে গেলেন ১৫৮ রানে। শেষ দিকে টানা উইকেট হারিয়েও মিঠুনের ১৮ বলে ৩২ রানে ৩২২ পর্যন্ত পৌঁছল বাংলাদেশ। তখন সেটা যথেষ্টরও বেশি মনে হচ্ছিল। কিন্তু দিন শেষে সেটা তো ছুঁয়েই ফেলেছিল জিম্বাবুয়ে!