এবার শুধু রেকর্ডবুকটা ওলটপালট করতে পারল না বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ২০ ওভারে ২০০/৩ (সৌম্য ৬২*, লিটন ৫৯)
জিম্বাবুয়ে ১৯ ওভারে অলআউট ১৫২ (কামুনহুকওয়ামে ২৮; মোস্তাফিজ ৩/৩২, বিপ্লব ৩/৩৪)
ফলঃ বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী
যা হওয়ার কথা ছিল হয়েছে শেষ পর্যন্ত তা-ই। বাংলাদেশের কাছে টেস্ট, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতেও উড়ে গেল জিম্বাবুয়ে। কুশীলব শুধু বদলে গেল কিছুটা, এবার লিটন-মোস্তাফিজদের পাশাপাশি মঞ্চ আলো করলেন সৌম্য-বিপ্লবরাও। শুধু করোনা ভাইরাসের শংকায় মিরপুরে উদযাপন করার মতো খুব বেশি মানুষ ছিল না, এই যা!
জিম্বাবুয়ে মানে অবশ্য এই সিরিজে রেকর্ডবুক ওলট পালট করে ফেলেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড তো দুই দিনের ব্যবধানে নতুন করে লেখা হয়েছে দুই বার। আজকের টি-টোয়েন্টিতে সেই অর্থে বড় কোনো রেকর্ড হলো না। বাংলাদেশের ২০০ রান হলো বটে, তবে সেটা আগেও দুইবার হয়েছে টি-টোয়েন্টিতে। ছোটখাটো একটা রেকর্ড অবশ্য হয়েছে, টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী জুটিতে সবচেয়ে বেশি রানের বাংলাদেশি রেকর্ড নতুন করে লিখিয়েছন লিটন-তামিম। রেকর্ড ঠিক বলা যাবে না অবশ্য, তবে শেষ ৫ ওভারে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রান করার অর্জনটা লিখে রাখার মতো অবশ্যই। আরেকটা রেকর্ড হতে পারত, নিজেদের টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়টা ভাঙা হয়নি মাহমুদউল্লাহদের।
এই সংস্করণে অধিনায়ক বদলে গেছে বাংলাদেশের, আজ টস করতে নেমেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০০ রান জয়ের জন্য যথেষ্টর চেয়েও বেশি হওয়ার কথা। অবশ্য কামুনহুকওয়ামে শুরুতে অন্যরকম আভাস দিয়েছিলেন, প্রথম দুই বলে চার মেরে শুরু করলেন তেঁড়েফুঁড়ে। ওরকম দারুণ শুরু আরও কয়েকজন পেয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গল্পটা যত গর্জে ততটা না বর্ষানোর।
ব্রেন্ডন টেলরের ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা। বাংলাদেশ বরাবরই তার কাছে পয়া, কিন্তু এবারের সফরটা হয়ে থাকল দুঃস্বপ্নের চেয়েও বেশি। ওপেনিংয়েও নেমে ধুঁকতে ধুঁকতে আউট হলেন ১ রানে। মিডউইকেটে যেভাবে আউট হলেন, সেটা ফর্ম হারিয়ে খোঁজা একজন ব্যাটসম্যানের ছবিটাই এঁকে দিচ্ছে। ক্রেইগ আরভিন হতে পারতেন বড় ভরসা, কিন্ত মোস্তাফিজের বলে হলেন এলবিডব্লু। এই সিরিজে জিম্বাবুয়ের আবিষ্কার ওয়েসলি মাদহেভেরে আফিফের দুর্দান্ত থ্রোতে আউট হয়ে গিয়ে আরেকটু দুর্দশা বাড়িয়ে দিয়ে এসেছেন জিম্বাবুয়ের।
এরপর তাদের গল্পটা জ্বলে ওঠার পর দপ করে নিভে যাওয়ার। কামুনহুকওয়ামে আর অধিনায়ক শন উইলিয়ামস ছোট্ট একটা সময় বেশ একটা গতি এনে দিয়েছিলেন, কিন্তু আরও গতি বাড়াতে গিয়েই স্টিয়ারিং উইল থেকে হাত ফস্কে যায়। আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের ওই দুই বলেই আসলে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে জিম্বাবুয়ে। শুরুতে লং অফে ক্যাচ দিয়েছেন কামুনহুকওয়ামে, পরের ফুলটস বলটা উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়্যার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন উইলিয়ামস।
সিকান্দার রাজাও টেকেননি বেশিক্ষণ, ৮৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে আশা প্রায় শেষ জিম্বাবুয়ের। তবে ওয়ানডেতে ঝড় তোলা টিরিপানো ছিলেন বলেই একদম আশা শেষ হয়ে যায়নি। তার আগে মুতুম্বামি দুই ছয়ের পর আউট হয়ে গেলেন। তবে দারুণ কিছু শটে টিরিপানো বার্তা দিচ্ছিলেন। কিন্তু রান রেট তখন প্রায় ১৬ এর কাছাকাছি, শেষ পর্যন্ত সাইফ উদ্দিনের স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে ২০ রানে ফিরেছেন টিরিপানো। কার্ল মুম্বা এরপর একাই চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তার ১৬ বলে ২৫ রানের ইনিংসটা হারের ব্যবধান কমিয়েছে। ২০ থেকে ৩০ রানের মধ্যেই জিম্বাবুয়ের পাঁচ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন।
তার আগে মোমেন্টাম নিজেদের পক্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। ১৫তম ওভারের পরও বাংলাদেশের রান ১২৫, সেখান থেকে ৫০ ওভার শেষে হলো ২০০। এর মধ্যে ১৬ আর ২০তম ওভারটাই বাংলাদেশকে ২০০ পর্যন্ত নিয়ে গেছে। দুইটি ওভারই পোফুর। ১৬তম ওভার থেকে মুশফিক আর সৌম্য মিলে নিলেন ২২ রান। আর শেষ ওভার থেকে এলো ১৯ রান, প্রায় সবটাই সৌম্যের অবদান। এর মধ্যে ২৭ বলে ফিফটি হয়ে গেছে সৌম্যের, শেষ করেছেন ৩২ বলে ৬২ রান করে। দিন শেষে যেটি তাকে পাইয়ে দিয়েছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।
তার আগে অবশ্য ভিতটা এনে দিয়েছেন তামিম আর লিটন। সিলেটে যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকে শুরু করলেন মিরপুরে। প্রথম ওভারেই লিটনের চার-ছয়। তামিম শুরুতে একটু স্লথ হলেও পরে যোগ দিয়েছেন তার সঙ্গে, পাওয়ারপ্লেতে রান হয়েছে ৫৯। রানের গতিটা অবশ্য এরপর কমেনি, শেষ পর্যন্ত ৩৩ বলে ৪১ রান করে আউট হয়ে গেছেন তামিম। লিটন ৩১ বলে ফিফটি পেলেন, আশা দেখাচ্ছিলেন বড় কিছুর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৫৯ রান করে রাজার বলে হলেন এলবিডব্লু। মুশফিক দুই ছয় দিয়ে শুরু করেছিলেন, কিন্তু বড় করতে পারেননি ইনিংস। শেষদিকে সৌম্য অবশ্য আফসোস ঘুঁচিয়ে দিয়েছেন। জিম্বাবুয়ের জন্য যেটা হয়ে গেছে সাধ্যের অনেক বাইরে।