• ক্রিকেটারদের আলাপ
  • " />

     

    ২০১৫ সেমিফাইনালের পর 'ক্রিকেট খেলার ইচ্ছাই ছিল না' ডু প্লেসির

    ২০১৫ সেমিফাইনালের পর 'ক্রিকেট খেলার ইচ্ছাই ছিল না' ডু প্লেসির    

    আইসিসি টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকার হৃদয়ভঙ্গের তালিকা যেন শেষ হওয়ার নয়। তবে সে তালিকায় ওপরের দিকেই থাকার কথা ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালের হার। তবে নিজের ক্যারিয়ারে এমন ড্রেসিংরুম কখনও দেখেননি ফাফ ডু প্লেসি, যেখানে প্রায় অর্ধেক মানুষই কাঁদছিলেন। সে ম্যাচের পর আইপিএলে গিয়ে তার ‘ক্রিকেট খেলার ইচ্ছাই করছিল না’! 

    “আমার এখনও মনে আছে খুব ভালভাবে। আমি কখনও একটা ক্রিকেট ম্যাচের কারণে এতটা ভেঙে পড়িনি। হ্যাঁ, ম্যাচ হারব, হতাশ হবো। তবে সেই ম্যাচটা, আমি কখনও প্রাপ্তবয়স্ক এতগুলো মানুষকে একসঙ্গে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখিনি। অর্ধেক দল কাঁদছিল”, তামিম ইকবালের ফেসবুক শো-তে এসে বলেছেন ডু প্লেসি। 

    অকল্যান্ডের সেমিফাইনালে গ্রান্ট এলিয়টে ভর করে ১ বল বাকি থাকতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, প্রোটিয়ারা আরেকবার আটকে গিয়েছিল বিশ্বকাপের নক-আউটের বেড়াজালে। সে ম্যাচের দিকে ফিরে তাকিয়ে ডু প্লেসি বলেছেন, “জানো তো, আমরা দক্ষিণ আফ্রিকানরা ওপরে ওপরে শক্ত থাকার ভাব করি। (কিন্তু) ড্রেসিংরুম ভেঙে পড়েছিল। দুইদিন আমাদেরকে বাড়তি থাকতে হয়েছিল সেখানে, কারণ আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরার ফ্লাইট পাচ্ছিলাম না। ফলে দুই দিন এমন হয়েছিল, যে কোনও সময়ে সতীর্থের সঙ্গে দেখা হলে লাঞ্চে বা ডিনারে, আমরা মাথা নীচু করে থাকতাম। কথা বলতাম না কোনও। 

    “এরপর আমি আইপিএল গেলাম, কিন্তু আমার খেলার ইচ্ছা করছিল না! আমি ভেতরে ভেতরে এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম। মানে আমরা কতো কাছে গিয়েছিলাম। আমাদের দলটা ভাল ছিল, আমরা ভাল খেলছিলাম। ভেবেছিলাম, এবার আমাদের সময়। 

    “দুই সপ্তাহ পর, প্রতিদ্বন্দ্বীতা ফিরে এসেছিল। ধীরে, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আমরা কাটিয়ে উঠেছি। 

    “আমি কখনও ড্রেসিংরুমে কাউকে কাঁদতে দেখিনি। অথচ সেদিন দলের অর্ধেক মানুষ কাঁদছিল। এটা কেউ বুকের ভেতর হাত ঢুকিয়ে হৃদপিন্ড বের করে এনেছে- এমন একটা অনুভূতি।” 

    তামিম বলেছেন, তিনি সে ম্যাচ দেখেছিলেন। এবি ডি ভিলিয়ার্স, মরনে মরকেলদের কাঁদতে দেখে ‘শক’ পেয়েছিলেন তিনিও।

    এই শো-তে ডু প্লেসির অভিষেক ম্যাচ নিয়েও কথা হয়েছে দুজনের। অ্যাডিলেডে প্রায় দেড়দিন ব্যাটিং করে ড্র করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭৬ বল খেলে ১১০ রানে অপরাজিত থেকেছিলেন ডু প্লেসি, এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে দারুণ এক জুটির পর টেইল-এন্ডারদের নিয়ে ড্র করেছিলেন ম্যাচ, হয়েছিলেন ম্যাচসেরা।
     


    অভিষেকে সেঞ্চুরির পর ডু প্লেসি, অ্যাডিলেড, ২০১২/ইএসপিএন/গেটি


    ডু প্লেসি বলছেন, এর আগে এমন লম্বা ইনিংস ক্যারিয়ারে কখনোই খেলেননি তিনি “আমার মনে পড়ে, দুই সেশন ব্যাটিং করার পর, দল হিসেবে এরকম মনে হয়, যে আসলে সুযোগ নেই, তবে দেখা যাক। অনেক সময় পড়ে আছে। আমি ঠিক করেছিলাম, আমি সব বল ব্লক করব। ছেড়ে দেব। খেলব না। শট খেলব না। আমার মনে আছে, এবি ফুলটস ব্লক করছিল। 

    “তবে আমরা পরিস্কার ছিলাম, আমরা কী করব। তবে পঞ্চম দিন চা-বিরতিতে আমি আসলেই ক্লান্ত ছিলাম, কারণ অনেক্ষণ ব্যাটিং করছিলাম। আমার মনে আছে, ড্রেসিংরুমে ফিরে এবি বলেছিল, ‘আমি জানি তুমি ক্লান্ত। তবে এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক মানুষ দেখছে। 

    “আমার অভিষেক ছিল, তবে এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করল। আমি বুঝলাম, যে আমি শুধু নিজের জন্য নয়, অনেক মানুষের জন্য ব্যাট করছি। এরপর চাপে পড়ে গিয়েছিলাম, কারণ টেইল-এন্ডারদের সাথে ব্যাটিং করছিলাম। তবে এমন টেস্টের অংশ হতে পারা অসাধারণ। এতক্ষণ ব্যাটিং করা। 

    “মনে পড়ে, পিটার সিডল এতো ক্লান্ত ছিল যে বোলিং করতে পারছিল না। ডেলিভারির পর পিচের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ছিল। অসাধারণ টেস্ট ম্যাচ।”

    এখন তেমন টেস্ট ম্যাচ হয়না বলেও পর্যবেক্ষণ দক্ষিণ আফ্রিকার সদ্য সাবেক অধিনায়কের, “লোকে আসলে বুঝে না যে, টেস্ট ড্র করার ব্যাপারটা। যখন দাঁট কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। আসলে এখন এমন টেস্ট ম্যাচ পাওয়া যায় না। অনেক টেস্ট এখন মাঝে মাঝে তিন দিনেই শেষ হয়ে যায়। যদি পাঁচ দিনে যায়, তাহলে অসাধারণ হয়।”