• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    আর্সেনালকে দুঃস্বপ্নের রাত উপহার দিয়ে লিভারপুলের অপেক্ষা বাড়াল সিটি

    আর্সেনালকে দুঃস্বপ্নের রাত উপহার দিয়ে লিভারপুলের অপেক্ষা বাড়াল সিটি    

    ফুল টাইম

    ম্যানচেস্টার সিটি ৩ - ০ আর্সেনাল


    ইতিহাদ স্টেডিয়ামে আক্ষরিক অর্থেই দুঃস্বপ্নের রাত কাটিয়েছে আর্সেনাল। চোট, লাল কার্ড আর পেনাল্টিতে রাতটি ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে গানারদের জন্য। করোনার বিরতির পর প্রিমিয়ার লিগের নতুন শুরুতে লিগে বছরের প্রথম হারের মুখ দেখেছে আর্সেনাল। ডিফেন্ডার ডেভিড লুইজের জোড়া ভুল আর সিটির সুযোগসন্ধানী ফরোয়ার্ডদের ক্ষুরধার পারফরম্যান্সে ইতিহাদ থেকে শুন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে গানারদের।

    এই জয়ে অবশ্য পয়েন্ট টেবিলে খুব বেশি নড়চড় হচ্ছে না। দ্বিতীয় থাকা সিটি সেখানেই আছে। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত হয়েছে। লিভারপুল মাঠে ফিরবে এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ২২ তারিখের মার্সিসাইড ডার্বি লিভারপুল জিতলেও সেদিন তাদের শিরোপা নিশ্চিত হচ্ছে না। ২৯ ম্যাচ শেষে লিভারপুলের পয়েন্ট ৮২ আর সিটির ৬০। আর লিগের অষ্টম হারে আর্সেনাল আছে নয় নম্বরেই। 

    বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে প্রিমিয়ার লিগের সব ক্লাব এবং খেলোয়াড়রা আগেই একাত্মতা জানিয়েছেন। সেই ধারায় খেলোয়াড়দের জার্সিতে নামের জায়াগায় শোভা পেয়েছে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ স্লোগানটি। এছাড়া বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচের বাঁশি বেজে ওঠার আগে হাঁটু গেঁড়ে খেলোয়াড় এবং ম্যাচ অফিসিয়ালরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মাঠের পাশে সিটি সমর্থকদের লাইভ ম্যাচ দেখার জন্য ছিল দুইটি জায়ান্ট স্ক্রিনও। আর এতোসব আয়োজনের পর পরের মাঠে আর্সেনাল অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে সিটির কাছে।


    সিটির সঙ্গে প্রিমিয়ার লিগে শেষ ৫ ম্যাচে কোনও জয় পায়নি আর্সেনাল। অবশ্য এই বছরে লিগে এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে হারের মুখ দেখেনি মিকেল আর্টেটার দল। তবে ইতিহাদে গিয়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন সিটির বিপক্ষে জিতে আসা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। হার এড়াতে পারলেও সেটাকেই বড় প্রাপ্তি মনে করা যায়। আর্সেনাল ম্যাচটি টিমশিটেই হেরে গিয়েছিল বললে অত্যুক্তি হবে না মোটেও। সিটির মাঠে দলের আক্রমণভাগে অ্যালেক্স লাকাজেত, নিকোলাস পেপে বা গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলিদের প্রথম একাদশে রাখেননি আর্টেটা। তাদের জায়গায় তরুণ, অনভিজ্ঞ জো উইলোক, এডি এনকেতিয়া এবং বুকায়ো সাকাদের ওপর ভরসা রাখেন তিনি।

    ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই যখন স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন গ্রানিত শাকা, ইতিহাদে আর্সেনালের দুঃস্বপ্নের এক রাতের আভাস তখনই পাওয়া গিয়েছিল। এরপর ২৪ মিনিটে গোড়ালির চোটে ডিফেন্ডার পাবলো মারিকেও হারায় আর্সেনাল। আর তার বদলেই মাঠে নেমেছিলেন ডেভিড লুইজ। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার নিশ্চিত গোল হজম করা থেকে আর্সেনালকে বাঁচিয়েছিলেন গোলরক্ষক বার্নড লেনো। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই কেভিন ডি ব্রুইনের শট ঠেকিয়ে দেন তিনি, এরপর ওয়ান-অন-ওয়ান অবস্থা থেকে রিয়াদ মাহরেজকে হতাশ করেন তিনি। তবে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আর দলকে বাঁচাতে পারেননি। ডি ব্রুইনের লং ফরোয়ার্ড পাসের বাউন্স বুঝতে অক্ষম লুইজের পাশ দিয়েই বল চলে যায় বক্সের ভেতর। সেখান থেকে স্টার্লিংয়ের জোরালো শটে ম্যাচে এগিয়ে যায় সিটি।


    লুইজের দুঃস্বপ্নের রাত অবশ্য তখনও শুরু হয়নি। ম্যাচের ৫১ মিনিটে করলেন আরও মারাত্মক এক ভুল। বক্সের ভেতর মাহরেজকে পেছন থেকে হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি, রেফারির চোখ এড়ায়নি সেই চ্যালেঞ্জ। আর্সেনাল ডিফেন্ডারকে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে দেন রেফারি অ্যান্থনি টেইলর। ২৬ মিনিটের ঝটিকা সফরে মাঠে ঢুকে আবার বেরিয়ে আসতে হয় তাই লুইজকে। আর স্পট কিক থেকে প্রথম গোলের কারিগর ডি ব্রুইন দ্বিতীয় গোল করার পর আরও অতলে চলে যায় আর্সেনাল। ফাঁকা মাঠের ফুটবল হলেও, কৃত্রিম সাউন্ড আর লুইজ নাটকে শেষ পর্যন্ত টেলিভিশন দর্শকদের বিনোদন শতভাগই হওয়ার কথা। আর্সেনাল সমর্থক হয়ে থাকলে অবশ্য আলাদা কথা।


    এরপর ম্যাচে শুধুই সিটি আর সিটি। একের পর এক আক্রমণে গানারদের ভিত কাঁপিয়ে তোলেন সিটিজেনরা। ৮০ মিনিটে সিটির গোলরক্ষক এডারসনের সঙ্গে সংঘর্ষে দলটির ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়াও চোটে পড়েন, তাকেও স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। খেলা বন্ধ করে মাঠে বেশ কিছুক্ষণ গার্সিয়ার শুশ্রূষা চলায় নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে যুক্ত হয় আরও ১১ মিনিট। যোগ করা সেই সময়ে সিটির হয়ে ম্যাচে তৃতীয় গোলটি করেন তরুণ ফিল ফোডেন। তবে ভাগ্য প্রসন্ন হলে যোগ করা সময়ে ব্যবধান আরও বাড়াতে পারত সিটি। আর্সেনাল গোলরক্ষক লেনোর দৃঢ়তা এবং আগুয়েরো, স্টার্লিংদের সাইড নেটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলের জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে সিটিকে।