• লা লিগা
  • " />

     

    সেভিয়ায় অসহায় বার্সেলোনা

    সেভিয়ায় অসহায় বার্সেলোনা    

    ফুলটাইম
    সেভিয়া ০-০ বার্সেলোনা


    মৌসুম শেষে এই ম্যাচটার গুরুত্ব বেড়ে যেতে পারে আরও। বার্সেলোনার জন্য আফসোসের হয়ে থাকতে পারে সেটি। অবশ্য সেভিলের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে আক্ষেপের বিলাসিতাও সঙ্গী হয়নি তাদের। সেভিয়ার কোনো প্রশ্নের জবাবই দিতে পারেনি বার্সেলোনা। ধীর গতির ফুটবলের সঙ্গে একের পর এক ভোঁতা আক্রমণ বার্সেলোনাকে শেষ পর্যন্ত এক পয়েন্ট দিয়েছে। আর দুই পয়েন্ট হারিয়ে শীর্ষস্থান হারানোর শঙ্কা জেগেছে বার্সেলোনার। রিয়াল মাদ্রিদ লিগে পরের ম্যাচ জিতলেই বার্সাকে টপকে আবার উঠে যাবে শীর্ষস্থানে। আর লিগে ম্যাচ বাকি থাকবে মাত্র ৯টি।

    পয়েন্ট টেবিলের তিনে থাকা সেভিয়ার বিপক্ষে কঠিন লড়াই বার্সার জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য লড়াই করার শক্তিটুকুও দেখা যায়নি বার্সার খেলায়। সাত দিনে তৃতীয়বারের মতো মাঠে নামা খেলোয়াড়দের চলনে-বলনে ক্লান্তির ছাপ ছিল স্পষ্ট। আর সেভিয়া ছিল দুর্দান্ত, নির্ভুল ফুটবল খেলে বার্সাকে কোনোরকম ছাড় দেয়নি তারা।


    গতিহীন ফুটবলে পুরো ৯০ মিনিটে বার্সা বলার মতো আক্রমণ সাজাতে পারেনি। হুয়ান সানচেজ পিসজুয়ানে সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কোচ হুলেন লোপেতেগির কাছে আসলে একটা সময় অসহায়ই হয়ে পড়েছিলেন কিকে সেতিয়েন। ৯১ মিনিটে রেগুইলন দারুণ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে একেবারে খালি হাতেই বার্সাকে ফেরত পাঠাতে পারত সেভিয়া। গোলের ৮ গজ দূর থেকে রেগুইলন তখন দুর্বল শট মেরেছেন সরাসরি মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের হাতে।

    প্রথমার্ধে বার্সার বলার মতো আক্রমণ মেসির দুইটি ফ্রি-কিক। একবার সেটা গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেছেন সেভিয়া ডিফেন্ডার জুলস কুন্ডে। দ্বিতীয়বারের ফ্রি-কিকে গতি ছিল না, সরাসরি গিয়ে সেটা পরেছে সেভিয়া গোলরক্ষকের হাতে। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি গোল মেসি করেছেন সেভিয়ার বিপক্ষে। সেই মেসিও এরপর সেভিয়ার বিপক্ষে বাকিদের মতো হারিয়ে গেছেন। 

    প্রথমার্ধে তেমন আর কোনো আক্রমণ না হলেও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। উত্তেজনা চরমে উঠেছিল প্রথমার্ধের শেষ দিকে। মেসিই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলেন একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে। সেভিয়ার ডিয়েগো কার্লোসকে ধাক্কাও মেরেছিলেন। কপাল অবশ্য তার ভালো, কোনো কার্ডই দেখতে হয়নি আর তাকে। তবে ওই ঘটনা দ্বিতীয়ার্ধের উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছিল তখনই।

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এভার বানেগাকে মাঠে নামিয়ে মিডফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি দখলে নিয়ে ফেলে সেভিয়া। তাতে আরও অসহায় বার্সেলোনা। টের স্টেগান আরও একবার বিপদের সময় দলকে বাঁচিয়েছেন। ৫ মিনিটের ব্যবধানে লুকাস ওকাম্পস আর মুনির এল হাদ্দাদির বুলেট গতির শট ঠেকিয়ে দলকে মানসিক শক্তি যুগিয়ে যাচ্ছিলেন বার্সা গোলরক্ষক।

    কিন্তু বার্সার হুশ ফেরেনি আর। সেভিয়ার জুন মাসের গরমও ভূমিকা রেখেছে ম্যাচে। তাতে অবশ্য বার্সার খেলোয়ায়ড়দের ওপরই প্রভাবটা বেশি পড়ল। শ্লথ আর দিশাহীন ফুটবল খেলতে থাকা বার্সার ভেতর জয়ের ক্ষুধা তেমন দেখাই গেল না।

    সবকিছুর সঙ্গে অবশ্য সেতিয়েনের কিছু সিদ্ধান্ত প্রশ্ন জাগিয়েছে। সেভিয়ার ৫-৩-২ ফর্মেশনের বিপরীতে কার্যকর কোনো  জবাবই ছিল না তার কাছে। তার ওপর আগের ম্যাচের গোলদাতা আনসু ফাতিকেও রাখলেন বসিয়ে। অ্যান্টোয়ান গ্রিযমান একাদশে জায়গা হারিয়েছিলেন। কিন্তু গোলের জন্য হন্যে হয়ে ছোটা ম্যাচে তিনিও মাঠে নামলেন ১৩ মিনিট বাকি থাকতে। আর জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো একাদশে থাকা লুইস সুয়ারেজ খেললেন পুরো ৯০ মিনিট। এর ভেতর মাত্র একবার ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন। বক্সের ভেতর ৮৮ মিনিটে তার নেওয়া বাম পায়ের শট চলে যায় ওপর দিয়ে। পুরো ম্যাচে সেটাই সম্ভবত ছিল বার্সার সেরা সুযোগ।

    বার্সেলোনার সবাই যেদিন হারিয়ে গেলেন, সেদিন গড়পড়তা ফুটবল খেললেন মেসিও। সেভিয়ার রক্ষণ দুর্গ ভাঙার মতো তেমন কোনো ঝলকই দেখাতে ব্যর্থ তিনি। এই নিয়ে সেভিয়ার মাঠে শেষ ১৬ ম্যাচে প্রথমবার ম্যাচ শেষ হয়েছে গোলশূন্যভাবে।

    প্রায় তিন মাস পর মাঠে নেমে বার্সার খেলা  ৩ ম্যাচ পুরোটা সময় খেলেছেন কেবল মেসি আর টের স্টেগান। বুধবার রাতে আবার অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের সঙ্গে খেলা বার্সার। এর আগে সোমবার সোসিয়েদাদকে হারালে সমান পয়েন্ট নিয়েও হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় রিয়াল উঠে যাবে শীর্ষস্থানে। বিলবাওয়ের সঙ্গে তখন দুইয়ে থেকেই নামতে হবে মেসিদের। তবে সবকিছুর আগে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করবে বার্সা। শেষ ৩ ম্যাচের ২টি জিতলেও একবারও তো পরিচিত বার্সার দেখা মেলেনি!