• লা লিগা
  • " />

     

    যেসব নিয়ম বদলে গেছে লা লিগায়

    যেসব নিয়ম বদলে গেছে লা লিগায়    

    ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে লা লিগার আরো একটা নতুন মৌসুম। আরো একবার শিরোপার জন্য লড়াই শুরু করেছে রিয়াল-বার্সা-অ্যাটলেটিকো। তবে ২০২৪-২৫ মৌসুম শুরুর আগেই লিগের নিয়মকানুনে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে লা লিগা কর্তৃপক্ষ।

    চলুন দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন পরিবর্তিত নিয়ম নিয়ে নতুন মৌসুম শুরু করেছে লা লিগা।

    ১. কনকাশন বদলির প্রচলন

    কোভিড-পূর্ববর্তী যুগে ফুটবল ম্যাচ চলাকালে তিনজন খেলোয়াড় পরিবর্তনের সুযোগ পেতেন ম্যানেজাররা। কোভিড-পরবর্তী সময়ে সংখ্যাটা তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ করা হয়। লা লিগাতেও সেই একই নিয়ম বহাল ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে এই নিয়মেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন দেখা দেয়।

    বিশ্বকাপ চলাকালে কনকাশন-সাব করাতে হয়েছিল ম্যাগুয়ারকে; Image Source: Getty Images

    ম্যাচ চলাকালে যেকোন সময়ে চোটে পড়ে কনকাশনের স্বীকার হতে পারেন খেলোয়াড়রা। তাই শারীরিক নিরাপত্তার ব্যাপারটা বিবেচনা করে, ‘কনকাশন বদলি’ নিয়মের আওতায় নির্ধারিত পাঁচজন বদলির বাইরেও চোটগ্রস্ত খেলোয়াড়কে তুলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২১ সাল থেকেই প্রিমিয়ার লিগ, লিগ আঁ, মেজর লিগ সকারসহ বেশ কিছু লিগে ট্রায়াল হিসেবে এই নিয়মটা চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২২ বিশ্বকাপ এবং ২০২৪ ইউরোতেও দলগুলোকে দেওয়া হয় কনকাশন বদলির সুযোগ। 

    অবশেষে লা লিগাও হাঁটলো সেই পথে। নিয়মিত পাঁচজন বদলির বাইরে, একজন কনকাশন-চোটগ্রস্ত খেলোয়াড়কে বদল করার সুযোগ পাবেন ম্যানেজাররা।

    এই চোটের পরই কনকাশন-সাব করা হয় বেন্টাঙ্কুরকে; Image Source: Getty Images

    উল্লেখ্য যে, গত কাতার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়ারকে এই নিয়মের আওতায় তুলে নিয়েছিলেন কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। এই নিয়মেই, প্রিমিয়ার লিগের চলতি মৌসুমের প্রথম ম্যাচে এভারটনের বিপক্ষে বাড়তি বদলি করার সুযোগ পেয়েছিলেন টটেনহ্যামের কোচ আঞ্জে পোস্তেকগলু। চোটগ্রস্ত রদ্রিগো বেন্টাঙ্কুরের পরিবর্তে মাঠে নেমেছিলেন আর্চি গ্রে। এটা ছাড়াও আরো পাঁচটা ট্যাকটিকাল পরিবর্তন করেছিলেন কোচ পোস্তেকগলু।

    ২. সেমি-অটোমেটেড অফসাইড

    গত ফুটবল বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়নস লিগে ইতোমধ্যে সেমি-অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও, লা লিগাতে এর ব্যবহার দেখা যায়নি। তবে চলতি মৌসুম থেকে এই প্রযুক্তিও ব্যবহৃত হচ্ছে লা লিগায়। অফসাইডের সিদ্ধান্তগুলো তাই আগের চেয়ে আরো বেশি নিঁখুত এবং দ্রুত হবে। পাশাপাশি ম্যাচের স্বাভাবিক ছন্দও তেমন ব্যাহত হবে না। ম্যানেজার এবং খেলোয়াড়রাও অভিযোগের খুব বেশি সুযোগ পাবেন না।

    সূক্ষ্মতম অফসাইডও ধরে ফেলবে সেমি-অটোমেটেড প্রযুক্তি; Image Source: Marca

    এর আগে স্প্যানিশ সুপার কোপাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। ২০২৪ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ওই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিল বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবং ওসাসুনা।

    Image Source: FIFA

    সেমি-অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তিতে বল ট্র্যাক করতে ১২টা বিশেষ ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি প্রতি সেকেন্ডে ৫০ বার প্রত্যেক খেলোয়াড়ের শরীরের ২৯টা ডাটা পয়েন্ট ট্র্যাক করে তার অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এই অবস্থানের সাথে প্রতিপক্ষ এবং বলের অবস্থানের তুলনা করে অফসাইডের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। তবে মাঠের রেফারিকে সিদ্ধান্ত জানানোর আগে ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়ালরা প্রযুক্তির ওই সিদ্ধান্তকে যাচাই করে নেন। পাশাপাশি ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন এবং মাঠের খেলোয়াড় ও বলের অবস্থানে দাগ টেনে সেই ভিডিও ফুটেজটা দেখানো হয় পর্দায়।

    ৩.  রেফারির সাথে বাতচিত

    মাঠে কোন সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে রেফারিকে ঘিরে ধরে খেলোয়াড়দের অভিযোগ করার দৃশ্যটা একেবারেই নতুন কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রেই রেফারিকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় তাতে, পকেট থেকে দুয়েকটা কার্ডও বের করতে বাধ্য হন তিনি। তবে এখন থেকে আর সেটা হবে না। লা লিগার নতুন নিয়ম অনুসারে শুধুমাত্র দলের অধিনায়কই কথা বলতে পারবেন রেফারির সাথে।

    Image Source: Getty Images

    এর আগে চলতি বছরের ইউরো এবং অলিম্পিকেও এই নিয়মের প্রয়োগ দেখা গেছে। পাশাপাশি ইউয়েফার ক্লাব প্রতিযোগিতাগুলোতেও একই নিয়ম কার্যকর হবে। এবার লা লিগাও হাঁটছে সেই একই পথে। মাঠের কিংবা ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভার) সিদ্ধান্ত, রেফারি সেটা ব্যাখ্যা করবেন শুধুই দুই অধিনায়কের কাছে। তবে যদি কোনো দলের অধিনায়ক হন সেই দলের গোলরক্ষক, সেক্ষেত্রে তিনি একজন আউটফিল্ড খেলোয়াড়কে রেফারির সাথে কথা বলার জন্য মনোনীত করবেন। এর বাইরে অন্য কোনো খেলোয়াড় কথা বললে, অযাচিত হস্তক্ষেপ করলে বা অনভিপ্রেত আচরণ করলে রেফারি সেই অনুসারে ব্যবস্থা নিবেন।

    শুধু অধিনায়করাই কথা বলবেন রেফারির সাথে; Image Source: Getty Images

    মূলত মাঠের রেফারির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন, রেফারি ও খেলোয়াড়দের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং ফুটবলের চেতনাকে সমোন্নত রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

    ৪. এবারও থাকছে না গোল-লাইন প্রযুক্তি

    ফিফা বিশ্বকাপ, ইউরো, কোপা আমেরিকা, ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোতে গোল-লাইন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও লা লিগাতে এবারও থাকছে না এই প্রযুক্তি। প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা, সিরি আ, বুন্দেসলীগা এবং লিগ আঁ, ইউরোপের এই শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে শুধু লা লিগাতেই নেই গোল-লাইন প্রযুক্তি। গত মৌসুমের শেষভাগে, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে বার্সেলোনার লামিন ইয়ামালের পায়ে লেগে বলটা গোল-লাইন পেরিয়েছিল কিনা, সেটা নিয়েও বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল। গোল-লাইন প্রযুক্তির অভাব, এবং মোক্ষম কোণ থেকে ভিডিও ফুটেজের অভাবে রেফারির সিদ্ধান্ত ছিল গোল না হওয়ার পক্ষেই। বার্সেলোনা অবশ্য এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিল, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।

    গোল নাকি গোল নয়? Image Source: Bein Sports

    গত মৌসুমের শুরুতে স্প্যানিশ পত্রিকা কাদেনা সারের রিপোর্ট অনুযায়ী, লা লিগায় গোল-লাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হলে অতিরিক্ত তিন মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হতো। কিন্তু সচরাচর এই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না বিধায় স্প্যানিশ লিগ সভাপতি হাভিয়ের তেবাস এই খরচ করতে রাজি ছিলেন না।

    পরিষ্কারভাবে বোঝা গেল না কোনো কোণ থেকেই; Image Source: Bein Sports

    এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, গোল-লাইন প্রযুক্তিতে স্টেডিয়ামের বিভিন্ন অংশে চৌদ্দটা ক্যামেরা বসানো থাকে। এই ক্যামেরাগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটা ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন তৈরি করা হয়, এবং সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে বলটা গোল-লাইন অতিক্রম করেছে কিনা। বলা বাহুল্য, গোল-লাইন থেকে প্রাপ্ত নিখুঁত সিদ্ধান্ত মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যায় রেফারির কাছে।

    বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসির সেই গোল; Image Source: Getty Images

    গোল-লাইন প্রযুক্তির ব্যাপারে লা লিগার সিদ্ধান্তটা আপাতত অপরিবর্তিতই রইলো। তবে অন্যান্য ব্যাপারগুলো থেকে একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়, নিয়মের প্রবর্তন বা পরিবর্তনে অন্যান্য শীর্ষ লিগের চেয়ে লা লিগা সাধারণত এক-দুই মৌসুম পিছিয়েই থাকে!