• সিরি আ
  • " />

     

    আটালান্টাকে হতাশ করে রোনালদোর জোড়া গোলে শিরোপার পথে জুভেন্টাস

    আটালান্টাকে হতাশ করে রোনালদোর জোড়া গোলে শিরোপার পথে জুভেন্টাস    

    ফুলটাইম
    জুভেন্টাস ২-২ আটালান্টা


    দুর্দান্ত আটালান্টার বিপক্ষে দুইবার পিছিয়ে পড়েছিল জুভেন্টাস। দুইবারই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো গোল করে দলকে ফিরিয়েছেন ম্যাচে। জুভেন্টাসের পাওয়া দুই পেনাল্টিতে অবশ্য তেমন কিছুই করার ছিল না আটালান্টার। তবে রোনালদো কোনো ভুল করেননি। নিখুঁত দুইটি পেনাল্টি নিয়ে সিরি আ-তে ২৮ ম্যাচে ২৮ গোল করা হয়ে গেছে তার, যার ১১টি এসেছে স্পটকিক থেকে। আর লাৎসিওর টানা তৃতীয় হারের পর জুভেন্টাস বড় এক ধাপ এগিয়েছে টানা নবম শিরোপার পথে। সিরি আর ৬ ম্যাচ বাকি থাকতে দুইয়ে থাকা লাৎসিওর চেয়ে জুভেন্টাস এগিয়ে গেছে ৮ পয়েন্টে, তাদের পয়েন্ট ৭৬। আর তিনে থাকা আটালান্টার পয়েন্ট ৬৭। 

    সিরি আর শিরোপা লড়াই প্রায় শেষ হয়ে গেলেও জুভেন্টাস-আটালান্টা ম্যাচ তর্ক-বিতর্ক-আলোচনার রসদ যুগিয়ে দিয়ে গেছে। ৫৫ আর ৯০ মিনিটে দুইবার পেনাল্টি পেয়েছে জুভেন্টাস। প্রথমবার বক্সের ঠিক বাইরে থেকে পাউলো দিবালার ক্রস গিয়ে লেগেছিল ডে রোনের হাতে। পরেরবার বদলি গঞ্জালো হিগুয়াইনের উঁচু করে মারা বল লেগেছিল লুইস মুরিয়েলের হাতে। দুবারই অবশ্য আটালান্টার দুই খেলোয়াড় ঘুরে গিয়েছিলেন। নিজেদের শরীরের বাইরে হাত প্রশস্ত ছিল তাদের। নিয়ম অনুযায়ী অবশ্য হ্যান্ডবল ইচ্ছাকৃত হোক আর অনিচ্ছাকৃতই হোক, তার জন্য পেনাল্টি পাওয়ার কথা জুভেন্টাসের। দুইবারই রেফারি নিজেই কাছাকাছি জায়গা থেকে দেখেছেন ঘটনা, নিজেই বাজিয়েছেন পেনাল্টির বাঁশি। তুরিনে পুরোটা সময় দারুণ খেলতে থাকা জিয়ান পিয়েরো গ্যাস্পারিনির দল তাই দিনশেষে নিজেদের হতভাগাই ভাবতে পারেন।

    সিরি আ-তে টানা ৯ ম্যাচ জিতে জুভেন্টাসের মাঠে খেলতে এসেছিল আটালান্টা। এই মৌসুমে তাদের চেয়ে বেশি গোল সিরি আতে নেই কোনো দলের। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা জুভেন্টাসের চেয়েও ২০ গোল বেশি ছিল তাদের। আর স্বল্প বাজেটের দল নিয়েও গ্যাস্পারিনির দল তো বহু আগেই সমীহ আদায় করে নিয়েছে ইতালিতে। তাই আটালান্টার বিপক্ষে ম্যাচটা যে সহজ হবে সেটা জানাই ছিল জুভেন্টাসের।

    ম্যাচের ১৬ মিনিটে বিয়াঙ্কোনেরিদের আশঙ্কা সত্যি করে এগিয়ে যায় আটালান্টা। আলেহান্দ্রো গোমেজের জুভেন্টাসের অ্যাটাকিং থার্ডে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন, এরপর দারুণ এক টার্ন নিয়ে পাস বাড়ান দুভান জাপাতার উদ্দেশ্যে। বক্সের ভেতর থেকে জাপাতাও ভুল করেননি। মৌসুমের ১৫ তম গোলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। 

    প্রথমার্ধে জুভেন্টাস অনেকটাই বিবর্ণ ছিল আটালান্টার সামনে। পাউলো দিবালা, ম্যাথিয়াস ডি লিটরা একাদশে ফিরেছিলেন। তবে দ্বিতীয়ার্ধের আগে আক্রমণে জুভেন্টাসের ধার দেখা যায়নি। বিরতির পর থেকেই অবশ্য গোলের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন রোনালদোরা। আটালান্টাকে চাপে ফেলে তখন প্রথম পেনাল্টি আদায় করেন নেন দিবালা।

    রোনালদো আটালান্টা গোলরক্ষককে কোনো সুযোগ না দিয়েই স্পট কিক থেকে আরও একবার সফল, জুভেন্টাসও ম্যাচে ফেরে তখন। এরপর অবশ্য আটালান্টাকে আর তেমন সুযোগই দিচ্ছিল না জুভেন্টাস। রোনালদোই জুভেন্টাসকে এগিয়ে দিতে পারতেন। হুয়ান কুয়দ্রাদোর পাস থেকে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দারুণ এক শট করেছিলেন তিনি, কিন্তু সে দফায় আটালান্টার গোলরক্ষক গোলিনির কাছে আটকে যান রোনালদো।

    আটালান্টা এরপর আরও একবার হতাশ করে জুভেন্টাসকে। মুরিয়েল বাম প্রান্ত থেকে পাস দিয়েছিলেন রুসলান মালিনোভস্কিকে। বক্সের ঠিক ভেতরে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শটে বটম কর্নারে বল জড়িয়ে ১০ মিনিট বাকি থাকতে আবারও আটালান্টাকে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি।

    মাউরিসিও সারি অবশ্য এর আগেই বদলি হিসেবে অ্যালেক্স সান্দ্রো, গঞ্জালো হিগুয়াইনদের মাঠে নামিয়েছিলেন। সান্দ্রো নামার পর বাম দিক দিয়ে কিছুটা গতি বেড়েছিল জুভেন্টাসের আক্রমণে। তবে শেষ পর্যন্ত আরও একটি পেনাল্টিতেই নিষ্পত্তি হয়ে ম্যাচের।

    জুভেন্টাসের পাওয়া শেষ সেই পেনাল্টির উৎস ছিল কর্নার। ওই কর্নার অবশ্য রোনালদোরই আদায় করা। ২৫ গজের বেশি দূর থেকে দারুণ একটি ফ্রি কিক নিয়েছিলেন তিনি। আটালান্টা ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে তখন বল চলে যায় বাইরে। আর সেখান থেকেই পরে হিগুয়াইন আদায় করে নেন দ্বিতীয় পেনাল্টি। দ্বিতীয় দফায় আরও একবার নিচু শটেই গোলিনকে হতাশ করেন রোনালদো।

    এই নিয়ে টানা পঞ্চম ম্যাচে গোল করলেন এই পর্তুগিজ। তুরিনের জোড়া গোলে একটি রেকর্ডও ছুঁয়েছেন তিনি। জুভেন্টাসের জার্সি গায়ে সিরি আতে সবশেষ এক মৌসুমে ২৭ গোল করেছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তী ওমর সিভোরি। ১৯৬০-৬১ মৌসুমে তার রেকর্ডের পর জুভেন্টাসের হয়ে আর কোনো খেলোয়াড়ই লিগে এতোগুলো গোল করতে পারেননি। ৩৫ বছর বয়সে এসে রোনালদোই সেই কাজটা করে দিয়ে গেলেন। আর অপ্রতিরোধ্য রোনালদোতে ভর করেই টানা নবম শিরোপার সুবাস এখন থেকেই পাচ্ছে বিয়াঙ্কোনেরিরা।