• লা লিগা
  • " />

     

    গোল উপহার দেওয়ার পর ১০ জনের আলাভেসের সঙ্গেও জয় পেল না বার্সা

    গোল উপহার দেওয়ার পর ১০ জনের আলাভেসের সঙ্গেও জয় পেল না বার্সা    

    ফুলটাইম
    আলাভেস ১-১ বার্সেলোনা


    টানা চতুর্থ ম্যাচে এসেও লা লিগায় জয়ের দেখা পেল না বার্সেলোনা। প্রথমার্ধে গোলরক্ষক নেতোর এক অমার্জনীয় ভুলের সুযোগ নিয়ে এগিয়ে যায় আলাভেস। এরপর বিবর্ণ বার্সা ম্যাচে ফিরেছে আলাভেস দশ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর। আন্টোয়ান গ্রিযমান বহু আকাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পেয়েছেন। তিনিই শেষ পর্যন্ত দলকে আরেকটি হারের হাত থেকে বাঁচালেন। লা লিগায় ৬ ম্যাচ শেষে তাই বার্সা পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে দশেও জায়গা পেল না। ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে আরও ৮ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে  বার্সা আছে ১২ নম্বরে।

    ৬৪ মিনিটে গ্রিযমানের গোলে সমতায় ফেরার পর বার্সা আসলে জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি আলাভেস গোলরক্ষকের কারণে। ফার্নান্দো পাচেকো অন্তত তিনবার নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দলকে রক্ষা করেছেন। আর আলাভেসের আঁটসাঁট রক্ষণ শুরু থেকেই বার্সাকে সুবিধা করতে দিচ্ছিল না। পুরো ম্যাচে প্রায় নির্ভুলভাবে রক্ষণ করে যাওয়া আলাভেস ডিফেন্ডাররা শেষদিকে ছিলেন আরও সতর্ক।


    জুভেন্টাসের সঙ্গে দারুণ এক জয়ের রেশ নিয়ে আলাভেসের মাঠে খেলতে গিয়েছিল বার্সা। শুরুটাও ভালোই ছিল রোনাল্ড কোমানের দলের। কিন্তু জুভেন্টাস ম্যাচের মতোই আরও একবার গোলের সামনে গিয়ে বারবার হতবুদ্ধি হয়ে পড়ছিলেন লিওনেল মেসিরা। আনসু ফাতি একবার ভালো সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, গ্রিযমানও দারুণ এক আক্রমণের ইতি টানতে পারেননি গোলে শট করতে ব্যর্থ হয়ে। লিওনেল মেসির একটি ফ্রি কিক গোলে পরিণত হতে পারত, কিন্তু গোললাইন থেকে মেসির শট আলাভেস ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করলে আর এগিয়ে যাওয়া হয়নি বার্সার। এই সময় পর্যন্ত আলাভেস নিজেদের রক্ষণেই বেশি মনোযোগী ছিল। তবে একবার এডগার মেন্ডেস প্রতি আক্রমণ থেকে গোলে শট করেছিলেন। তখন নেতো ঠিকঠাক সেভেই তাকে ফিরিয়ে দেন।

    ৩১ মিনিটে নেতোর কাজ ছিল আরও সহজ। আরও একবার প্রতিআক্রমণে উঠেছিল আলাভেস। বল দখলে নিয়ে জেরার্ড পিকেও তাকে ব্যাক পাস দিয়েছিলেন। পিকে হয়ত আরেকটু আগেই পাসটা দিতে পারতেন। কিন্তু ভুলটা আসলে নেতোরই। পিকের পেছন থেকে দৌড়ে আসছিলেন লুইস রোহা। ওই চাপেই ভুল করে বসেন নেতো, বল নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে পড়ে যান, রোহা ফাঁকা জালে বল ঢুকিয়ে দিয়ে এগিয়ে দেন আলাভেসকে।

    গোল হজমের পর বার্সা আগের কয়েক ম্যাচের মতো আরও একবার ধন্ধে পড়ে যায়। প্রথমার্ধটা শেষ পর্যন্ত বলার মতো কোনো আক্রমণ না করেই পার করে দেন মেসিরা। উলটো মেজাজ হারিয়ে ৩৯ মিনিটে হলুদ কার্ডও দেখেন মেসি। বাকি সময়ে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং অবশ্য একটি পেনাল্টি আদায় করে নিতে পারতেন। বক্সের ভেতর তাকে ধাক্কা দিয়েছিলেন আলাভেস গোলরক্ষক। রেফারি বা ভিএআর- কোনো পক্ষই অবশ্য সে ঘটনা আমলে নেয়নি।

    কোমান অবশ্য এদিন সিদ্ধান্ত বদলাতে সময় নেননি। বিরতির সময় তিনটি পরিবর্তন করান বার্সা কোচ। ডিফেন্ডার ক্লেমেন্ত ল্যাংলেট, মিডফিল্ডার সার্জিও বুসকেটস, ফরোয়ার্ড উসমান দেম্বলে- তিনজনই মাঠ ছাড়েন। তাদের জায়গায় নামেন পেদ্রি, মিরালেম পিয়ানিচ আর ত্রিনকাও। তাতেও বার্সার চেহারা ফিরছিল না। মেসি আরও একবার বার্সার জার্সিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন ম্যাচের বেশিরভাগটা সময়। জন্মদিনে আনসু ফাতিও সুবিধা করতে পারছিলেন না।

    ১৫ মিনিটে প্রথম হলুদ কার্ড দেখেছিলেন ইয়োতা। ৬৩ মিনিটে হাই ফুটের দায়ে তিনি দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে কাজটা খানিকটা সহজ হয়ে গিয়েছিল বার্সার জন্য। পরের মিনিটেই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফেলে বার্সা। যদিও তাতেও ছিল ভাগ্যের ছোঁয়া। গ্রিযমান বলটা পেয়েছিলেন মিডফিল্ডে আলাভেস ফুটবলারের পায়ে লেগে বলের দিক পরিবর্তন হওয়ার পর। তবে বাকি কাজটা ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড সেরেছেন দারুণ দক্ষতায়। কোণাকুণি চিপে এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে জালে বল ঠেলে দিয়েছিলেন গ্রিযমান।

    এরপর ম্যাচ চলেছে একই ধারায়। বার্সার আক্রমণ বনাম আলাভেসের রক্ষণ। ৬৫ মিনিটে নিশ্চিত গোলে পরিণত হতে যাওয়া মেসির বাম পায়ের বাঁকানো শট দুর্দান্ত এক সেভে আটকে দিয়ে কাজ শুরু করেন পাচেকা। এরপর শেষদিকে দুই বদলি পিয়ানিচ, ডেস্টের শটও আটকে দেন তিনি দারুণ দুইটি সেভে। শেষদিকে জেরার্ড পিকে ভালো দুইটি সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু দুইবারই ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

    এল ক্লাসিকোতে হারের পর চাপে পড়ে গিয়েছিলেন কোমান। জুভেন্টাসের বিপক্ষে জয়ে কিছুটা স্বস্তি মিলেছিল। তবে লা লিগায় ফিরে আবারও পুরোনো বিন্দুতে গিয়ে ঠেকলেন বার্সা কোচ। দুশ্চিন্তারও অভাব নেই তার। মেসি নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। পুরো ম্যাচে আলাভেস ডিফেন্ডাররা একরকম বোতলবন্দি করে রেখেছিল আর্জেন্টাইনকে। পেদ্রি মাঠে নামার পর আলাভেসের রক্ষণ কয়েকবার টলাতে পেরেছিল বার্সা। কিন্তু গোলের সামনে বারবার হতাশায় মুষড়ে পড়তে হয়েছে মেসিদের। ফিলিপ কৌতিনহো চোট থেকে কবে ফিরবেন সেটাও অজানা। এরপর চ্যাম্পিয়নস লিগে ডিনামো কিয়েভের বিপক্ষে খেলবে বার্সা। আর আন্তর্জাতিক বিরতির আগে লিগে বার্সার ম্যাচ আছে একটি। সব মিলিয়ে বার্সার জন্য সময়টা রোলার কোস্টার যাত্রার মতোই।