• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ৫ গোলের রোলার কোস্টার ম্যাচে ইন্টারের বিপক্ষে রিয়ালকে জয় এনে দিলেন রদ্রিগো

    ৫ গোলের রোলার কোস্টার ম্যাচে ইন্টারের বিপক্ষে রিয়ালকে জয় এনে দিলেন রদ্রিগো    

    ফুলটাইম
    রিয়াল মাদ্রিদ ৩-২ ইন্টার মিলান


    রিয়াল মাদ্রিদ আর ইন্টার মিলান চ্যাম্পিয়নস লিগে সবশেষ একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছিল ২২ বছর আগে। দুই দলের কোচ আন্তোনিও কন্তে আর জিনেদিন জিদান তখনও ছিলেন একে অন্যের সতীর্থ। আর রদ্রিগো ও ভিনিসিয়াস তখনও পৃথিবীর মুখ দেখেননি। জিদান-কন্তে পয়েন্ট ভাগাভাগির দিকেই এগুচ্ছিলেন। কিন্তু তরুণ দুই ব্রাজিলিয়ান শেষ পর্যন্ত কন্তের হাসি ম্লান করে দিয়েছেন। দুইজনই মাঠে নেমেছিলেন ৬৪ মিনিটে। ৮০ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে বক্সের ঠিক ভেতরে নিচু ক্রস করেছিলেন ভিনিসিয়াস। রদ্রিগো ডান পায়ের শটে এরপর বল জড়িয়েছেন টপ কর্নারে। ভালদেবাবাসে এর আগ পর্যন্ত ইন্টারই চোখ রাঙাচ্ছিল রিয়ালকে। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে ইন্টার ফিরে এলেও রদ্রিগোর ওই গোল আর শোধ করা হয়নি তাদের।


    ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলের ম্যাচে ঘরের মাঠে ৩৩ মিনিটের ভেতর দুই গোলে এগিয়ে গিয়েছিল রিয়াল। তবে তাতে রিয়ালের কৃতিত্বের চেয়ে ইন্টারের দায় ছিল বেশি। হাফলাইন থেকে সাবেক রিয়াল ফুটবলার আশরাফ হাকিমির ভয়ঙ্কর ব্যাকপাস বিপদে ফেলে দিয়েছিল ইন্টারকে। বক্স ছেড়ে বল ধরতে এগিয়ে আসা ইন্টার গোলরক্ষক সামির হান্দানোভিচের আগে বল দখলে নিয়ে করিম বেনজেমা ফাঁকা জালে গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর কর্নার থেকে হেডে লাফিয়ে উঠে সার্জিও রামোস আবার এগিয়ে দেন রিয়ালকে।

     

    দ্বিতীয় গোল হজম করার পর জবাব দিতে সময় নেয়নি ইন্টার। দুই মিনিটের মাথায় দারুণ এক আক্রমণ থেকে লাউতারো মার্টিনেজ দলকে ম্যাচে ফেরান। নিকোলা বারেলার দারুণ এক ব্যাক ফ্লিকের পর বক্সের ভেতর প্রথম সুযোগেই শট করে গোল করেন আর্জেন্টাইন।

    ইন্টারের ফেরায় এরপর আরও অবদান রেখেছিলেন মার্টিনেজ। ৬৮ মিনিটে তার হেড দূরের পোস্টে খুঁজে পায় ইভান পেরিসিচকে। লুকাস ভাসজেক আর থিবো কোর্তোয়া দুইজনকে ফাঁকি দিয়েই আড়াআড়ি শটে জাল খুঁজে নেন তিনি। ইন্টারও ম্যাচে ফেরে তখন। কিন্তু মার্টিনেজরা এরপর ম্লান হয়ে গেছেন দুই ব্রাজিলিয়ানের কাছেই।

    ইন্টারকে হারিয়ে তাই চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার প্রথম জয়ের দেখা পেল রিয়াল মাদ্রিদ। আর ইন্টার থাকল হতাশার বৃত্তেই। তৃতীয় ম্যাচেও জয় না পেয়ে মাত্র দুই পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থাকা কন্তের দল আরও একবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কায়। রিয়াল মাদ্রিদ স্বস্তির জয়ে শাখতাররের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে উঠে গেছে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে। ৫ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখ।

    আক্রমণভাগের ভুলগুলোই আরেকবার ভোগালো ইন্টারকে
    ম্যাচের আগে সবচেয়ে বড় খবর ছিল রোমেলু লুকাকুর না থাকা। গেল কয়েক ম্যাচে গোল পেতেই ভুগতে হয়েছে ইন্টারকে। প্রচুর সুযোগ তৈরি করেও মুড়ি মুড়কির মতো সেগুলো আবার হারিয়েছেও ইন্টার। রিয়ালের বিপক্ষেও শেষ পর্যন্ত ওই একই ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে তাদের।

    রিয়ালের বিপক্ষে শুরুটা দারুণ ছিল ইন্টারের। লুকাকুর জায়গায় ৩-৫-২ ফরমেশনে আক্রমণভাগে মার্টিনেজের সঙ্গী ছিলেন পেরিসিচ। শুরু দশ মিনিটে বেশ কয়েকটি সুযোগও তৈরি করেছিলেন তারা। তবে গোলে প্রথম প্রথম শটটা করেছিলেন মার্টিনেজই। বক্সের ভেতর রামোসকে ফাঁকি দিয়ে দুর্বল শট করেছিলেন কাছের পোস্টে। থিবো কোর্তোয়া উলটো দিকে ঝাঁপ দিয়েও কোনোমতে সেই শট ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

    রিয়ালের বিপক্ষে ইন্টার বারবার বলও হারিয়েছে। সম্ভাবনাময় আক্রমণগুলো তাই অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে নেরাজ্জুরিদের। ৬৪ মিনিটে সমতায় ফেরার পর অন্তত দুইবার এগিয়ে যাওয়ার ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল ইন্টার। তখনও রিয়াল ছিল অনেকটাই অসহায়। মার্টিনেজ বক্সের বাইরে থেকে করা শটে বল মেরেছিলেন বারপোস্টের মাথায়। পেরিসিচও আরেকবার আড়াআড়ি শটে অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করে গেছেন। এর ৫ মিনিট পরই ম্যাচ ছিনিয়ে নেয় রিয়াল।

    বিশ্বস্ত বেনজেমা আর রামোসের সেঞ্চুরি
    চ্যাম্পিয়নস লিগে ১২৩ তম ম্যাচে ৬৭তম গোলের দেখা পেয়েছেন বেনজেমা। যদিও পুরোটাই ছিল ইন্টারের উপহার দেওয়া। কিন্তু বেনজেমা সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকারের মতো বল লুফে নেওয়ার কাজটা সেরেছেন ভালোমতোই। শেষদিকে তিনি রিয়ালের জয়ের ব্যবধান বাড়াতে পারতেন। কিন্তু হান্দানোভিচের ভালো একটি সেভে আর দ্বিতীয় গোলটি পাওয়া হয়নি তার।

    রিয়ালের কিংবদন্তী অধিনায়ক ক্লাবের হয়ে নিজের গোলের সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেছেন ইন্টারের বিপক্ষে। রিয়ালের হয়ে এই ১০০ গোলের ৫৫টিই রামোস করেছেন হেডে। সেঞ্চুরি পূরণের গোলটিও ব্যতিক্রম নয়। বক্সের ভেতর তাকে পাহারায় রাখার কথা ছিল পেরিসিচের। অবশ্য তাকে পাহারায় রাখলেই বা কী! কর্নার থেকে আগেভাগেই লাফ দিয়েছিলেন বাতাসে, কাত করা হেডে দূরের পোস্টে বল জড়িয়েছেন। হান্দানোভিচের কিছুই করার ছিল না তখন। চেয়ে চেয়ে দেখেছেন রামোসের কীর্তি।  

    জিদানের দুই বদলি আর ২০২০ এর স্বস্তি
    কন্তের ইন্টারকে সামলাতে প্রায় পুরো ম্যাচ গেছে জিদানের। কিন্তু আরও একবার কাজের কাজটা জিদান করে দিয়েছেন। এডেন হ্যাজার্ড আর মার্কো আসেনিসিও বেনজেমার সঙ্গে শুরু করেছিলেন আক্রমণভাগে। প্রথম দুইজন তেমন কার্যকরী ছিলেন না। জিদানও বদলির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। ৬৪ মিনিটে এই দুইজনের বদলে রদ্রিগো আর ভিনিসিয়াসকে নামিয়ে দিয়েছিলেন জিদান। দুইজন মিলেই অপয়া ২০২০ কে বিদায় জানিয়েছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগে এই বছর প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে রিয়াল।

    ভিদালের হলো সারা...
    আর্তুরো ভিদাল রিয়ালকে হারিয়ে বার্সেলোনা সমর্থকদের সঙ্গে উদযাপন ভাগাভাগি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা আর হয়নি। স্পেনে ফিরেও নিজেও নিষ্প্রভ এক ম্যাচ কাটিয়েছেন। শুরুর দিকে গোলে একবার ভালো শট করেছিলেন যদিও। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ফিঁকে হয়ে গেছেন তিনিও।  ভিদাল হলুদ কার্ড দেখেছিলেন প্রথমার্ধেই। রদ্রিগোর গোলটাও হয়েছে তার সামনেই। তাকে পাহারায় রাখার কথা ছিল ভিদালেরই।  পরে ৮৭ মিনিটে রাদজা নাইঙ্গোলানের বদলি হয়ে মাঠ ছেড়েছেন।

    এরপর কী?
    আন্তর্জাতিক বিরতির পর চ্যাম্পিয়নস লিগে আবার এই দুইদলই মুখোমুখি হবে সান সিরোতে। ২০১৪ সালে দশম চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পর প্রথমবারের মতো সান সিরোতে খেলতে যাবে রিয়াল। ঘরের মাঠে রিয়ালের কাছে হেরে গেলে আরও একবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে ইন্টারের।