পর্তুগালকে বিদায় দিয়ে সেমিতে ফ্রান্স, এক ম্যাচে দুইবার পেনাল্টি মিস করলেন রামোস
নেশনস লিগের পঞ্চম রাউন্ড শেষে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের। ফ্রান্স সবার আগে ফাইনাল রাউন্ড নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে সেমিফাইনালে ওঠার পথ কঠিন বানিয়ে ফেলেছে স্পেন।
পর্তুগালকে বিদায় করে দিল ফ্রান্স
পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে পরের বছর নেশনস লিগের সেমিফাইনালেউঠে গেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে তাতে।
পর্তুগালে ম্যাচের ৫৩ মিনিটে এনগোলো কান্তের করা গোলে পর্তুগালকে টপকে গেছে ফ্রান্স। আদ্রিয়েন রাবিওর শট পর্তুগাল গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও ঠেকিয়ে দিলেও পরে সামনে এসে পড়েছিল কান্তের। বাকি কাজটা সহজেই সেরেছেন তিনি।
এর আগে ফ্রান্সের হয়ে অ্যান্থনি মার্শিয়াল বারপোস্টে বল লাগিয়েছিলেন, পর্তুগালের হোসে ফন্টও গোল পাননি একই কারণে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ফ্রান্সের রক্ষণে পুরোটা সময় ভীতি ছড়িয়ে গেছেন ঠিকই। কিন্তু প্রথমার্ধে নিজের সেরা সুযোগটা তিনি মেরেছিলেন হুগো লরিসের মাথার ওপর দিয়ে বাইরে। ফ্রান্সের বিপক্ষে টানা ৬ দেখায় জাল খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে ১০২ গোলের ট্যালিটা বাড়ানোর সুযোগ হয়নি রোনালদোর। তবে শেষদিকে হোয়াও মতিনহোকে দিয়েও গোল করাতে পারতেন রোনালদো। কিন্তু তখন মতিনহোর শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন লরিস।
অ্যাওয়ে ম্যাচে সুযোগ তৈরির দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল ফ্রান্সই। প্রথমার্ধে মার্শিয়ালকে দুইবার গোলবঞ্চিত করেছেন প্যাট্রিসিও। কিংসলে কোমানও পর্তুগালকে ভুগিয়ে যাচ্ছিলেন একই তালে।
এ-৩ গ্রুপে ম্যাচ বাকি আর একটি করে। শেষ ম্যাচে পর্তুগাল খেলবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। আর ক্রোয়েশিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে রেলিগেশন হাত থেকে বাঁচার স্বপ্ন দেখা সুইডেন খেলবে ফ্রান্সের বিপক্ষে। ক্রোয়েশিয়া ও সুইডেন- দুইদলই ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শেষ দুইটি স্থানে রয়েছে।
এক ম্যাচে দুইবার পেনাল্টি মিস করলেন রামোস
ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে টানা ২৫ পেনাল্টি থেকে সফল হওয়ার পর সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে আটকে গেলেন স্পেন অধিনায়ক সার্জিও রামোস। একবার নয়, দুইবার পেনাল্টি থেকে তাকে ঠেকিয়ে দিয়েছেন গোলরক্ষক ইয়ান সমার। আর ৮৯ মিনিটে জেরার্ড মরেনোর গোলে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হার এড়িয়েছে স্পেন।
ইউরোপিয়ান দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা জিয়ানলুইজি বুফনের রেকর্ডটা এদিন টপকে গিয়েছিলেন রামোস। ক্যারিয়ারের ১৭৭ তম ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন স্পেন ডিফেন্ডার। কিন্তু মাইলফলক ছোঁয়ার রাতে ভুলে যাওয়ার মতো এক ম্যাচ খেলেছেন রামোস।
ম্যাচের ২৬ মিনিটে রেমো ফ্রয়লারের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। স্পেন দুইটি পেনাল্টি পেয়েছিল পিছিয়ে যাওয়ার পরই। প্রথম দফায় রামোস বল মারতে চেয়েছিলেন বটম কর্নারে, সমার তখন ঝাঁপ দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন তার শট। ৫৭ মিনিটের ওই মিসের পর ৭৯ মিনিটে নিকো এলভেদি বক্সের ভেতর আলভারো মোরাতা ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড মাঠ ছাড়েন। সেখান থেকে পাওয়া পেনাল্টি কিকটি রামোস চিপ শটে জালে জড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সমার তখন বুদ্ধিদীপ্ত সেভে আটকে দিয়েছেন তাকে। শেষ পর্যন্ত ৮৯ মিনিটে ১০ জনের সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মরেনো গোল করে দলকে হারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।
চ্যাম্পিয়নস লিগে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সমার, "কিছুদিন আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলা হয়েছে আমার। তার মানে আমি সার্জিও রামোসের পেনাল্টি সেভের প্রস্তুতি আমার আগেই ছিল। দ্বিতীয় কিকে আমার মনে হচ্ছিল ও চিপ করবে, ব্যাপারটা আমার জন্য ভালোই হয়েছে।"
সমার সঙ্গত কারণেই উচ্ছ্বাসে ভাসতে পারেন। এই ম্যাচে দলের হার এড়িয়ে রেলিগেশন থেকে দলকে বাঁচানোর পথ বাতলে দিয়েছেন তিনি। এর আগে কখনও প্রীতি ম্যাচে পেনাল্টি ঠেকানো হয়নি সমারের। রামোসের বিপক্ষে জোড়া পেনাল্টি সেভ তো ক্যারিয়ারে একটা মাইলফলক ছোঁয়ার মতোই। তবে রামোসের পেনাল্টি মিস নিয়ে স্পেন কোচ লুইস এনরিকের কোনো আক্ষেপ নেই। তৃতীয় আরেকটি পেনাল্টি পেলেও সেটা রামোসকেই নিতে দিতে তিনি, "সার্জিও পেনাল্টি থেকে যতগুলো গোল করেছে সেই সংখ্যাটা অভাবনীয়। ম্যাচে তৃতীয়বার পেনাল্টি পেলেও রামোসই কিক নিত।"
দুই পেনাল্টি মিসের পর পয়েন্ট হারিয়ে এখন বিপদেই পড়ে গেছে স্পেন। নেশনস লিগের সেমিফাইনালে উঠতে হলে শেষ ম্যাচে জার্মানিকে হারাতে হবে লা রোহাদের। গ্রুপের অন্য ম্যাচে একই সময়ে ইউক্রেনকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে জার্মানি। লিরয় সানে করেছিলেন প্রথম গোল, এরপর টিমো ভার্নার জোড়া গোল করে জার্মানির জয় নিশ্চিত করেছেন। ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে সবার ওপরে আছে তারা।