• অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর ২০২১
  • " />

     

    নাসুমদের ঘূর্ণিতে মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের স্বপ্নের প্রথম

    নাসুমদের ঘূর্ণিতে মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের স্বপ্নের প্রথম    

    ১৩১ রান করে টি-টোয়েন্টিতে কখনো ডিফেন্ড করতে পারেনি বাংলাদেশ। তার চেয়েও বড় কথা, অস্ট্রেলিয়ার সাথে জয় পায়নি কখনো এই ফরম্যাটে। টেস্ট-ওয়ানডের পর এবার পঞ্চম দেখায় অসিদের হারাল বাংলাদেশ। ১৩১ রানের পুঁজিই যথেষ্টর চেয়ে বেশি বানিয়ে পেল ২৩ রানের জয়। 

    ১৩১ রান করার পর বোলিংয়ে শুরুটাই বাংলাদেশের জন্য হয়েছিল স্বপ্নের মতো। মাহেদী হাসান নতুন বল হাতে নিয়েছেন, প্রথম বলেই বোল্ড অ্যালেক্স ক্যারি। টার্নের জন্য খেলতে গিয়েছিলেন, বলটা সোজা এসে ভেঙে দেয় স্টাম্প। জশ ফিলিপ নাসুমের পরের ওভারে ছয় মারলেন, কিন্তু শেষ হাসি নাসুমের। ফ্লাইটেড বল দিয়েছিলেন, ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড ফিলিপ। টি-টোয়েন্টিতে কোনো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার এই প্রথম স্টাম্পড হলেন। 

    ময়জেস হেনরিক্স নামলেন এরপর, কিন্তু বেশিক্ষণের জন্য নয়। সাকিবের বল সুইপ করতে গিয়ে টেনে আনলেন স্টাম্পে, ১ রানে আউট। ১১ রানে ৩ উইকেট নেই অস্ট্রেলিয়ার। ম্যাথু ওয়েড ও মিচেল মার্শ এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সংগ্রাম করতে থাকা ওয়েড আউট হয়ে গেলেন। নাসুমের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলটা যে কোনো জায়গাতেই পাঠাতে পারতেন, কিন্তু শর্ট ফাইন লেগে সরাসরি মোস্তাফিজকে ক্যাচ তুলে দিলেন। 

    মিচেল মার্শ ছিলেন, আশাও ছিল অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু অ্যাশটন অ্যাগার তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি। এবারও অদ্ভুত আউট, শট খেলতে গিয়ে বেশ পেছনে সরে আসায় হিট উইকেট হয়ে গেছেন। মার্শ ছিলেন হুমকি হয়ে, ফিফটির কাছাকাছি গিয়েছিলেন। এরপরেই টার্নিং পয়েন্ট এনে দিলেন নাসুম। তাকে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন মার্শ, ৪৫ বলে ৪৫ রান করে। নাসুম পেলেন চার উইকেট।

    শেষ দিকে স্টার্ক চেষ্টা করলেও বেশি কিছু করতে পারেননি। স্পিনারদের পর বাকি কাজ সেরেছেন পেসাররা। টার্নারকে তুলে নিয়েছেন মোস্তাফিজ, শরিফুল তুলে নিয়েছেন টাই ও জাম্পাকে। আর স্টার্ককে শেষ বলে বোল্ড করে মোস্তাফিজ করেছেন অলআউট।

    শুরুটা অবশ্য ভালো হয়েছিল বাংলাদেশের। মিচেল স্টার্কের দ্বিতীয় বলেই ছয় মেরেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম, কিন্তু সেই ওভারে আর কোনো রানই নিতে পারেননি। জশ হ্যাজলউড এসে বেঁধে রেখেছিলেন সৌম্য সরকারকে, একদমই হাত খুলে খেলার সুযোগ দিচ্ছিলেন না। সেই চাপ থেকে বেরুতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত আউট সৌম্য। জায়গা বানিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এবারও হ্যাজলউড বল করলেন গায়ে। সেটা কাট করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে আনলেন সৌম্য, ৯ বলে ২ রানের সংগ্রামী ইনিংসটা শেষ হয়ে গেল তার। 

    মিরপুরের স্লথ উইকেটে রানের জন্য শুরু থেকেই সংগ্রাম করেছে বাংলাদেশ। নাঈম অবশ্য এরপর ফ্লিক করে আরেকটি দারুণ ছয় মেরেছেন স্টার্ককে। আগের মতো এবারও গ্যালারিতে বল চলে যাওয়ায় নতুন করে বল আনতে হয়েছে আম্পায়ারদের। নাঈম অবশ্য স্ট্রাইক রোটেট করতে পারছিলেন না, অন্যদিকে সাকিবও রানের জন্য ভুগছিলেন। প্রথম ৬ ওভারে রান উঠে ৩৩। 

    এরপর জ্যাম্পার সোজা বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বাজে এক শটে বোল্ড হলেন নাঈম। মাহমুদউল্লাহ এলেন, কিন্তু রান খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনিও। লাইফও পেয়েছেন একটা, অ্যাশটন অ্যাগারের বলে স্লিপে ক্যাচ মিস হয়েছে তার। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, হ্যাজলউডের বলটা ইনসাইড আউট করতে গিয়ে তুলে মেরেছেন। ডিপ কাভারে ভালো একটা ক্যাচ নিয়েছেন হেনরিকস। অধিনায়ক আউট ২০ বলে ২০ রান করে। 

    সাকিব পরে অ্যাগারকে সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু রিটার্ন ক্যাচ ধরতে পারেননি। নুরুল আউট হয়ে গেছেন দ্রুতই, তবে সাকিব ছিলেন। শেষ পর্যন্ত হ্যাজলউডের স্লোয়ারে ইনসাইড এজ হয়ে আউট হয়েছেন ৩৩ বলে ৩৬ রান করে। শামীম হোসেন আজকে আর কোনো ঝড় তুলতে পারলেন না, স্টার্কের ইয়র্কার তার ইনিংস শেষ করে দিল দ্রুত। শেষ দিকে আফিফ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। স্টার্ককে কাভারের ওপর দিয়ে ও পরে স্কুপ করে দারুণ দুইটি চার মেরেছেন, শেষ পর্যন্ত ইনিংসের শেষ বলে বোল্ড হয়েছেন ১৭ বলে ২৩ রান করে।

    প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টসে জিতে আগে বোলিং নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মিরপুরে সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলে তেমন কোনো পরিবর্তন ছিল না। চোট কাটিয়ে টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। দলে ছিলেন দুইজন স্পিনার শেখ মাহেদী হাসান ও নাসুম আহমেদ। আর মোস্তাফিজের সাথে আরেক পেসার শরিফুল ইসলাম। 

    অস্ট্রেলিয়াও নেমেছিল দুইজন স্পেশালিস্ট স্পিনার নিয়ে- অ্যাডাম জাম্পা ও অ্যাশটন অ্যাগার। সেই সঙ্গে তিন পেসার - মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড ও অ্যান্ড্রু টাই।