• ইউয়েফা নেশনস লিগ
  • " />

     

    ইউয়েফা নেশন্স লিগ: মুকুটের শেষ লড়াইয়ে কারা, কীভাবে

    ইউয়েফা নেশন্স লিগ: মুকুটের শেষ লড়াইয়ে কারা, কীভাবে    

    মিলানের সান সিরোতে আজ রাতে স্পেন-ইতালি ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে ইউয়েফা নেশনস লিগের সেমিফাইনাল। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল এবার সেমিফাইনালে উঠতে না পারলেও বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়নদের সামনে থাকছে ইউরোপীয় আন্তর্জাতিক ডাবলের হাতছানি। ইউয়েফা নেশনস লিগের এবারের আসরে কোন দল কীভাবে সেমিফাইনালে উঠলো, কোথায় ফাইনাল হবে আর ইউরোপে এই টুর্নামেন্টের আসলে ভূমিকা কী সেটাই সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।

    কেন এই নেশনস লিগ?

    ইউয়েফা ইউরোর মত টুর্নামেন্ট থাকতে নেশনস লিগ আয়োজনের কারণ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, জাগাটাও অস্বাভাবিক নয়। টুর্নামেন্টটার গুরুত্ব নিয়ে যেমন অনেকেই সন্দিহান থাকেন তেমনই টুর্নামেন্টটার কাঠামো নিয়েও অনেকের মনে থেকে যায় বেশ প্রশ্ন। আপনার যদি মনে হয়ে থাকে এই টুর্নামেন্ট খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ নয় তাহলে আপনার ধারণা কিঞ্চিত ভুল।

    ইউয়েফা নেশনস লিগের শীর্ষ দলগুলোর মাঝে যেই দুটি দল ইউরোপ থেকে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নিতে পারেনি তারা বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারের প্লেঅফে খেলার সুযোগ পাবে। তাই দল গুলোর মধ্যে বাড়তি তাগিদ থাকে নেশনস লিগে ওপরের দিকে থাকার। আর সেই তাগিদ থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও যেন কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ দর্শকদের উপহার দেওয়া যায় সেটাই ছিল ইউয়েফার লক্ষ্য।

    একইসাথে যেহেতু এটি টুর্নামেন্ট তাই শিরোপার পাশাপাশি অংশগ্রহণ ও অবস্থানের ভিত্তিতে সব দলের জন্যই থাকে মোটা অংকের পুরস্কার। চ্যাম্পিয়ন দল ৭.৫ কেজি রুপালি একটি ট্রফির পাশাপাশি পায়  ১০.৫ মিলিয়ন ইউরো আর রানার-আপ, তৃতীয় ও চতুর্থ দল যথাক্রমে পায় ৯,৮ ও ৭ মিলিয়ন ইউরো।

     

    সেমিফাইনালে কারা ও কীভাবে?

    এবারের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে রেকর্ড টানা ৩৭ ম্যাচ ধরে অপরাজিত ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি। সাথে আছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, স্পেন ও বেলজিয়াম। প্রথম সেমিফাইনালে সান সিরোতে ইউরো সেমিফাইনালের পুনর্মঞ্চায়ন হবে আজ ইতালি ও স্পেনের ম্যাচ দিয়ে। আগামীকাল দ্বিতীয় সেমিফাইনালে জার্মানির অ্যালিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম।১০ই অক্টোবর জুভেন্টাস স্টেডিয়ামে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের পর ১১ই অক্টোবর সান সিরোতে হবে ফাইনাল। জুন মাসে এই ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে পিছিয়ে এই মাসে অবশেষে মাঠে গড়াচ্ছে টুর্নামেন্টের শেষ অধ্যায়। 

    গ্রুপ ১ থেকে নেদারল্যান্ডসকে টপকে ১২ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম হয়ে সেমিফাইনালে পা রেখেছে ইতালি। গ্রপ ২ থেকে এবারের ইউরো সেমিফাইনালিস্ট ডেনমার্ককে টপকে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে জয়ী হয়েছে বেলজিয়াম। গ্রুপ ৩ থেকে বর্তমান নেশনস লিগ চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালকে টপকে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। আর জার্মানিকে টপকে গ্রুপ ৪ থেকে ১১ পয়েন্ট নিয়ে জয়ী হয়ে সেমিফাইনালে পা রেখেছে স্পেন। 
     

    কী ভাবছে চার সেমিফাইনালিস্ট?

    সান সিরোতে ফাইনাল হওয়ায় ইতালিয়ানদের সামনে ঘরের মাঠে এই শিরোপা তোলার জন্য থাকবে বাড়তি অনুপ্রেরণা। সেই পথে ইউরোর পরে আরও একবার স্পেনের সাথেই সেমিফাইনালে টক্কর দিতে হবে ইউরো চ্যাম্পিয়নদের। কোচ রবার্তো মানচিনি স্বীকারও করেছেন যে পুরো ইউরোতে তাদের সবচেয়ে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে স্পেনের বিপক্ষেই। তবে আন্তর্জাতিক যেকোন শিরোপা জয়ে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের কোনও বিকল্প নাই সেটাও মানছেন তিনি, “ইউরোর পরে এই শিরোপা জিততে পারলে বিষয়টা দারুণ হবে। কাজটা মোটেও সহজ হবে না কারণ প্রতিটা ম্যাচই বলতে গেলে আসলে অনেক কঠিন।” 

    ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হেরে শূন্য হাতে ফিরতে হলেও এবার যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয় সেই লক্ষে নিজেদের উজার করে দেবেন বলেই দাবি স্পেন কোচ লুইস এনরিকের, “ এইস শিরোপা হাতে তুলতে আমরা মুখিয়ে আছি। ইতালির মাঠে ইতালিয়ান দর্শকদের সামনে ইউরো চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে আমরা চাপ সামলে কী করতে পারি সেটাই আমাদের দেখাতে হবে।”

    ওদিকে আরও একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পুনর্মঞ্চায়ন হবে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের ম্যাচের মধ্য দিয়েই। ম্যাচে যে তাই বাড়তি উত্তেজনা থাকবে সেটা মেনে নিয়েছেন ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম, “ এই দুই দেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগেই ছিল। আর রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পর তো তা পেয়েছ বাড়তি মাত্রা। 

    তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, শিরোপার দিকেই শুধু চোখ বেলজিয়ামের। র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল বেলজিয়াম সেই ১৯২০ অলিম্পিকের পর আরও কোনও আন্তর্জাতিক সাফল্যের দেখা পায়নি। বেলজিয়াম যে তাই কতটা উদ্দীপিত সেটাই জানালেন মিডফিল্ডার অ্যাক্সেল উইটসেল, “আপনি এই টুর্নামেন্টকে বিশ্বকাপ বা ইউরোর সাথে তুলনা করতে পারেন না। কিন্তু একই সাথে এই শিরোপার গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায়ও নেই। শীর্ষ সারির চার দল লড়বে এই শিরোপার জন্য। আমরা যদি তাই এই শিরোপা ঘরে নিয়ে ফিরতে পারি তাহলে তা আমাদের জন্য অসাধারণ এক সাফল্যই হবে।”