টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চমক হতে পারেন যে ১৪ জন
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা নামতে চলেছে ১৭ অক্টোবর। ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি ম্যাচ শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপের আমেজও টের পাওয়া যাচ্ছে। তারকারা আরও একবার মাতাবেন বিশ্বমঞ্চ, পাঁচ বছর পর আরও একবার স্বাদ মিলবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ রোমাঞ্চের। প্রতিষ্ঠিত তারকাদের পারফর্ম্যান্সের জন্য দর্শকরা হয়ত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তবে বিশ্বকাপে সেসব তারকাদের ভিড়ে নিজেদেরকে মেলে ধরতে মুখিয়ে থাকবে বেশ কিছু উঠতি তারকা, যাদের অনেকেই হয়ত খেলছেন বেশ কিছুদিন ধরেই, আবার কারও হয়ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদার্পণের পর বেশি দিন অতিবাহিত হয়নি। বিশ্বকাপে নজর কাড়তে পারে এরকম কিছু খেলোয়াড়দের পারফর্ম্যান্সের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনাই হবে এখানে।
জশ ইংলিস (অস্ট্রেলিয়া)
ইংল্যান্ডের লিডসে জন্ম নিলেও অস্ট্রেলিয়াতেই তার বেড়ে ওঠা। সেই সুত্রে অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে চড়ানোর সৌভাগ্য এবার হয়ে যেতে পারে। অভিষেক না হওয়া সত্ত্বেও জায়গা করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। আরেক উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ম্যাথিউ ওয়েডের নিদারুণ ফর্মের কারণেই অভিষেকটা হয়ত হতে যাচ্ছে বিশ্বমঞ্চেই। ২০২০-২১ বিগ ব্যাশে তিনি ১৬ ইনিংসে ব্যাট করে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৪১৩ রান, গড় ছিল ৩৪.৪১। উইকেটকিপিংয়েও যে তিনি সিদ্ধহস্ত তার প্রমাণ ১৩টি ডিসমিসাল। শুধু বিগ ব্যাশেই নয়, এরপর অনুষ্ঠিত ২০২১ ভাইটালিটি ব্লাস্টেও কেটেছে রানপ্রসবা মৌসুম। ১৪ ম্যাচে ২টি সেঞ্চুরি সহ ৪৮.২৭ গড়ে ৫৩১ রান করে তিনিই ছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক, স্ট্রাইক রেট ছিল ১৭৫.৮২! দুর্দান্ত ফর্ম বিশ্বকাপেও টেনে নিয়ে যেতে পারলে অস্ট্রেলিয়া হয়ত তাদের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের সমস্যার সমাধান পাবে।
লিয়াম লিভিংস্টোন (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ডের হয়ে ৮টি টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ হয়েছে লিয়াম লিভিংস্টোনের। তাতেই নিজেকে তুলে ধরেছেন ১৬৭.৪৭ স্ট্রাইক রেটে ২০৬ রান করে, যার মধ্যে আছে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই বিধ্বংসী সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের দ্রুততম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিয়ান এর আগে ২০২০-২১ বিগ ব্যাশেও নিজেকে চিনিয়েছেন ১৪ ম্যাচে ১৩৩.৯৬ স্ট্রাইক রেটে ৪২৬ রান করে। ২০২১ ভাইটালিটি ব্লাস্টে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও ৫৫.৮০ গড়ে করেছেন ২৭৯ রান, স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪৭.৬১। আইপিএলের আরব আমিরাত অধ্যায়ে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। তবে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে চড়ালে যে আবারও রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে পারেন তার প্রমাণ তিনি দিয়ে আসছেন বেশ কয়েকদিন ধরেই।
আনরিখ নরকিয়া (দক্ষিণ আফ্রিকা)
২৭ বছর বয়সী এই ডানহাতি পেসারের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শুরুটা বলতে গেলে কিছুটা সাদামাটাই হয়েছে। ১১ ম্যাচে ৯ উইকেট পেলেও বেশিরভাগ ম্যাচই তিনি খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর শ্রীলঙ্কাতে। সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে তিনি কতটা কার্যকর তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন আইপিএলে তার আগুনঝরা বোলিংয়ে। আরব আমিরাতে হওয়া ২০২০ আইপিএলে ১৬ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের ৪র্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ৮.৩৯ ইকোনমি নিয়ে সেবার তবু ছিলেন কিছুটা খরুচে। এবার ভারতে হওয়া আইপিএলের প্রথমার্ধে খুব একটা সুযোগ না মিললেও আরব আমিরাত অধ্যায়ে একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন সব ম্যাচেই। ৮ ম্যাচ খেলেই মাত্র ৬.১৬ ইকোনমি রেটে পেয়েছেন ১২ উইকেট। নিয়মিত ১৪৫কিমি+ গতিতে বল করতে পারার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণের ধারালো এক অস্ত্র হিসেবেই বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষদের নাস্তানাবুদ করতে পারেন।
হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য তারকায় ঠাসা দল দাঁড় করিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের পরীক্ষিত টি-টোয়েন্টি তারকাদের ভিড়ে তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন তাদের লেগ স্পিনার হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র। ২৬টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে তিনি ২১.০৮ গড়ে নিয়েছেন ২৩ উইকেট। ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান প্রথম দেখায় কিছুটা আনকোরা মনে হলেও তার পেছনে সাদামাটা শুরুর প্রভাবটাই বেশি। এই বছরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ৫ ম্যাচে মাত্র ১১.৬৬ গড়ে ১২ উইকেট নিয়ে তিনি নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন, হয়েছেন সিরিজ সেরাও। এর আগের বিশ্বকাপজয়ী দলে স্যামুয়েল বদ্রির যে ভূমিকা ছিল তা পালন করার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে তার। ক্যারিবিয়ান এই লেগ স্পিনার তাই লেগব্রেক-গুগলির জাল বিছিয়ে বিশ্বমঞ্চেও নিজেকে চেনাতে পারেন।
নাভিন উল হক (আফগানিস্তান)
২০১৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখলেও আফগানিস্তানের এই ডানহাতি পেসার টি-টোয়েন্টি প্রথম খেলেছেন ২০১৯ সালে, সেই বাংলাদেশের বিপক্ষেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের পর থেকেই যেন ছুটছেন তিনি। ৮ ম্যাচে ৬.৯৬ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১৩ উইকেট, গড় মাত্র ১৫। নিজেকে অন্য উচ্চতায় অবশ্য নিয়ে গিয়েছেন সদ্য সমাপ্ত ২০২১ ভাইটালিটি ব্লাস্টে। ১৪ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে তিনি হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ইকোনমি সেখানে ৮.৬৭ হলেও উইকেট তুলে নেওয়াতে তিনি যে পারদর্শী তার প্রমাণ তার ১২.১ স্ট্রাইক রেট।
বরুন চক্রবর্তী (ভারত)
ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কাতে সম্পূর্ণ ভিন্ন দল পাঠানোর সুবাদে ভারতের হয়ে অভিষেকের সুযোগ পান কর্ণাটকের এই রহস্য স্পিনার। এর আগেও স্কোয়াডে থাকলেও ইনজুরি ও ফিটনেস জনিত কারণে অভিষেকের সুযোগ না মিললেও শ্রীলঙ্কাতে সিরিজের তিন ম্যাচেই খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ২ উইকেট নিলেও তার ইকোনমি ছিল মাত্র ৫.৩০। দলের আরেক স্পিনার রাহুল চাহার ঐ সিরিজে দুই ম্যাচেই মাত্র ৫.২৫ ইকোনমি রেটে ৪ উইকেট পেলেও আইপিএলে তার পড়তি ফর্মের কারণে একাদশে হয়ত ঠাই মিলবে বরুনের। আইপিএলের আমিরাত অধ্যায়ে ৭ ম্যাচের সবকটিতেও তার ইকোনমি ছিল ৭ এর নিচে, সাথে উইকেট নিয়েছেন ১১টি। আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত ২০২০ আইপিএলেও ১৩ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে তিনি ছিলেন কলকাতার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী, ৬.৮৪ ইকোনমি রেট নিয়ে ছিলেন তাদের সবচেয়ে কিপটে বোলারও। আরব আমিরাতের রেকর্ডের জন্য তাই হয়ত একাদশে জায়গা করে নেওয়ার দৌড়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবেন এই স্পিনার।
গ্লেন ফিলিপস (নিউজিল্যান্ড)
২৪ বছর বয়সী এই ডানহাতি কিউই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখার সাথে সাথেই হয়ে উঠেছেন সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান। ২৫টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ১৪৯.৭০ স্ট্রাইক রেটে এক সেঞ্চুরি সহ করেছেন ৫০৬ রান। ২০২১ সালে যেন হয়ে উঠেছেন আরও ভয়ঙ্কর। সিপিএলে ১০ ম্যাচে ৩১.৭৫ গড়ে করেছেন ২৫৪ রান। সেখানে স্ট্রাইক রেট অবশ্য তার তুলনায় কিছুটা কম- ১২৮.২৮। ২০২১ ভাইটালিটি ব্লাস্টে নিজেকে অবশ্য নিয়ে গিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়- ১২ ম্যাচে ৫৫.৫৫ গড়ে করেছেন ৫০০ রান, তাও ১৬৩.৩৯ স্ট্রাইক রেটে। আইপিএলের দ্বিতীয় অধ্যায়ে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ হলেও বলার মত তেমন কিছু করতে পারেননি। তবে ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে এই বছরের ফর্ম ধরে রেখে যে নিজের বিস্ফোরক সত্ত্বা অচিরেই ফিরে পাবেন তা নিয়ে সন্দেহের খুব একটা জায়গা নেই বললেই চলে।
আভিশকা ফার্নান্দো (শ্রীলঙ্কা)
২৩ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান খুব একটা আশাব্যাঞ্জক না হলেও তিনি যে শ্রীলঙ্কার অন্যতম উঠতি তারকা তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বড় মঞ্চ পেলেই যে তিনি জ্বলে ওঠেন তার প্রমাণ তিনি রেখেছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপে মাত্র ৪ ম্যাচ খেলেই, যার মধ্যে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও যে দক্ষ হয়ে উঠছেন তার প্রমাণ আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত ২০২১ এসএলসি ইনভিটেশনাল লিগে ৬ ম্যাচে ৩০.৮০ গড়ে ১৫৪ রান। স্ট্রাইক রেট ১২০.৩১ হলেও বড় শট খেলার সক্ষমতার প্রমাণ রেখে মেরেছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০টি ছয়। বাংলাদেশের সাথে সদ্য সমাপ্ত প্রস্তুতি ম্যাচে ৭৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও ৪২ বলে ৬২* রানের ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে চাপেও স্নায়ু ধরে রাখার ক্ষমতা রাখেন তিনি। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নিজের নামের প্রতি হয়ত সুবিচার করবেন তিনি।
আফিফ হোসেন ধ্রুব (বাংলাদেশ)
২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজে অভিষেক হওয়ার পরে এই অলরাউন্ডার খেলে ফেলেছেন ২৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি, ১২৩.৫০ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৭৩ রান। ২০১৭-১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ৪৬ গড়ে ২৭৬ রান করে ছিলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। যতটা আশা দেখিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রেখেছিলেন তার প্রমাণ হয়ত কয়েকটি ম্যাচে দিয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের জন্য একেবারেই প্রতিকুল পিচেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২২.৪৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন সিরিজের ৩য় সর্বোচ্চ ১০৯ রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাউন্ডারি বের করতেই যেখানে হুমড়ি খেয়ে পরছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, সেখানে ৩ ছয়ে ১৪৮.৪৮ স্ট্রাইক রেটে ৩৩ বলে ৪৯ রান করে লড়ে গিয়েছিলেন একাই। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টই কাপেও নিজের বড় শট খেলার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে ৯ ম্যাচে ১৪৬.৮৭ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ১৮৮ রান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব একটা হাত না ঘুরালেও রাজশাহী কিংসের হয়ে অভিষেকেই যে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তা তার বোলিংয়ের ক্ষমতারও পরিচায়ক। বিশ্বমঞ্চে নিজেকে আগেও প্রমাণ করেছেন, বড়দের মঞ্চেও এবার তাই তার পালা ডানা মেলে ওঠার।
ব্রেন্ডন গ্লোভার (নেদারল্যান্ডস)
জোহানেসবার্গে জন্ম নেওয়া এই ডানহাতি পেসার খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ এর হয়েও। বিশ্বকাপ খেলার লোভেই নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটাও হয়েছে দুর্দান্ত। ১৯টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে পেয়েছেন ২৮ উইকেট, যার সবকটিই এসেছে ২০১৯ পঞ্জিকাবর্ষে। এক পঞ্জিকাবর্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডও এটি। ২০১৯ সালে আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ৮ ম্যাচে মাত্র ৫.৮৯ ইকোনমি রেটে ১৬ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি, হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। সেই টুর্নামেন্টে নেদারল্যান্ডসের জয়ের নেপথ্য নায়কও ছিলেন তিনি। ফাইনালে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। আরব আমিরাতের কন্ডিশনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তাই খুব একটা বেগ তাকে পেতে হবে না। সেই সাথে বড় ম্যাচে পারফর্ম করার সক্ষমতাও তার আছে। বিশ্বকাপে গ্লোভার জলে উঠলে ভালো কিছু করার ব্যাপারে ডাচরা আশাবাদী হতেই পারে।
গেরহার্ড এরাসমাস (নামিবিয়া)
নামিবিয়ার অধিনায়ক এই ডানহাতি অলরাউন্ডার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অঙ্গনে পা রেখেছিলেন ২০১৯ সালে। এরপর থেকেই দলের সবচেয়ে বড় পরিচালিকাশক্তি হয়ে পেয়েছেন অধিনায়কত্ব। ২২টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ৩৪.৭৯ গড়ে করেছেন ৫২২ রান, সেটাও ১৪০.৭০ স্ট্রাইক রেটে। সেই সাথে অফ স্পিনে মাত্র ৫.১২ ইকোনমি রেটে পেয়েছেন ১২ উইকেট। ২০১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ৯ ম্যাচে ১৩৭.৪৩ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ২৬৮ রান, যা ছিল টুর্নামেন্টের ২য় সর্বোচ্চ। সেই সাথে ৬.৫৭ ইকোনমি রেটে ৪ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। দলকে এই আরব আমিরাতের কন্ডিশনে লড়েই তুলেছেন মূল পর্বে। মূল টুর্নামেন্টেও বড় কিছু করতে তাই মুখিয়ে থাকবেন এরাসমাস।
জর্জ মানসি (স্কটল্যান্ড)
হেনরি জর্জ মানসি-স্কটল্যান্ডের এই বাঁহাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেই অর্থে নতুন মুখ নয়। তবে এতটা পরিশীলিত তিনি ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন না বলা চলে। ৪৩টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ২৯.৪২ গড়ে করেছেন ১১১৮ রান। টি-টোয়েন্টির জন্য তিনি যে আদর্শ, তার ১৫৩.৩৬ স্ট্রাইক রেট তারই পরিচায়ক। বড় মঞ্চেও তার নির্ভরযোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ২০১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ৮ ম্যাচে ১৪১.৮১ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ২৩৪ রান, যা স্কটল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ। স্কটল্যান্ডের এই বিস্ফোরক ওপেনারের কাছে আরব আমিরাতের কন্ডিশন তাই অপরিচিত নাই। কোয়ালিফায়ারের ফর্ম যদি মূল টুর্নামেন্টেও নিয়ে আসতে পারেন তাহলে তার ব্যাটে যে চার-ছয়ের পসরা বসবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
ডেমিয়েন আপা রাভু (পাপুয়া নিউ গিনি)
পাপুয়া নিউ গিনির ক্রিকেটে বড় নাম হয়ত আসাদ ভালা, টনি উরা। তবে বিশ্বকাপে নজর কাড়তে পারে তাদের মিডিয়াম পেসার ডেমিয়েন রাভু। এখন পর্যন্ত ১৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে মাত্র ১০.৬৬ গড়ে নিয়েছেন ২৪ উইকেট, ইকোনমি রেট মোটে ৫.৬৬। আরব আমিরাতের উইকেটে যে পেসাররা কিছুটা হলেও সুবিধা করতে পারে তার প্রমাণ আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীদের পরিসংখ্যান। সেই আরব আমিরাতেই নিজেকে প্রমাণও করেছেন রাভু। ২০১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ৮ ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ ১২ উইকেট নিয়েছেন তিনি, সেটাও মাত্র ৫.১০। বিশ্বমঞ্চে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে আরও একবার যে নিজের সবটুকু ঢেলে দিবেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
জতিন্দর সিং (ওমান)
ওমানের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত ২৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ২৭.৮৮ গড়ে করেছেন ৬৯৭ রান। তবে নিজেকে তিনি আলাদা করে চিনিয়েছিলেন ২০১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে। টুর্নামেন্ট এর ৩য় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার পথে ৯ ম্যাচে ১৩৪.১৭ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ২৬৭ রান। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১টি ছয়ও এসেছিল তার ব্যাট থেকে। নিজ দেশেই যেহেতু খেলবেন তাই আবারও জ্বলে উঠতে পারেন তিনি, হয়ত দলকে নিয়ে যেতে পারেন সুপার ১২ এও।