• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি পাঠের শিক্ষা দিয়ে স্কটল্যান্ডের দুর্দান্ত জয়

    বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি পাঠের শিক্ষা দিয়ে স্কটল্যান্ডের দুর্দান্ত জয়    

    গ্রুপ পর্ব, আল আমেরাত (টস- বাংলাদেশ/ বোলিং)

    স্কটল্যান্ড ১৪০/৯, ২০ ওভার (গ্রিভস ৪৫, মানসি ২৯, ক্রস ১১, মাহেদি ৩/১৯, সাকিব ২/১৭, তাসকিন ১/২৮)

    বাংলাদেশ ১৩৪/৭, ২০ ওভার (মুশফিক ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ২৩, সাকিব ২০, উইল ৩/২৪, গ্রিভস ২/১৯, ওয়াট ১/১৯)

    ফলাফল: স্কটল্যান্ড ৬ রানে জয়ী 


    টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বর দল হলেও বাংলাদেশকে ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনির সাথে এক কাতারেই রাখার পর কিছুটা তোপের মুখে পড়েছিলেন স্কটল্যান্ড কোচ। তবে কোচের কথার মূল্য রেখে প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশকে রুখে দিয়ে ৬ রানের দারুণ জয় দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করল স্কটল্যান্ড। ৫৩-৬ থেকে ক্রিস গ্রিভসের দারুণ ৪৫ রানের ইনিংসে বাংলাদেশকে ১৪১ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেওয়ার পরে সেই গ্রিভসের ২ উইকেট ও ব্র্যাডলি উইলের ৩ উইকেটে বহুদিন মনে রাখার মত জয় পেয়েছে স্কটল্যান্ড।  

    ১৪১ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ৫ রানে ফিরে যান সৌম্য সরকার। এক ওভার পরেই বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে জর্জ মানসির হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্র্যাড উইলের বলে ৫ রানেই ফেরেন লিটোন দাস। উইকেটে এসে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম থিতু হতে সময় নিলে পাওয়ারপ্লে শেষে বাংলাদেশ তোলে ২৫ রান। 

    দুজনেই রানের গতি বাড়াতে মরিয়া হয়েছিলেন। ৯ম ওভারে মাইকেল লিস্ককে দুই ছয় মেরে হাত খোলেন মুশফিক, ঐ ওভারে আসে ১৮ রান। তবে অপর প্রান্তে ধুঁকতে থাকা সাকিব এরপর ফিরে যান লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার ক্রিস গ্রিভস আক্রমণে এলেই। তার প্রথম বলেই মিড উইকেটের ওপর দিয়ে বল মাঠাছাড়া করতে গেলে ক্যালাম ম্যাক্লয়েডের দারুণ ক্যাচের শিকার হয়ে সাকিব ফেরেন ২৮ বলে ২০ রান করে। মার্ক ওয়াটের আঁটসাঁট বোলিংয়ে অস্থির হয়ে ওঠা মুশফিক এরপর সেই গ্রিভসকেই স্কুপ করতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন ৩৬ বলে ৩৮ রান করে। শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় ৫৭ রান। 

    উইকেটে এসে সপ্রতিভ আফিফ অবশ্য হাত খুলে খেলতে গিয়ে মার্ক ওয়াটের ৫০তম আন্তর্জাতিক শিকার হয়ে ফেরেন ১২ বলে ১৮ রান করে। পরের ওভারের প্রথম বলেই উইলের বল মাঠছাড়া করতে গিয়ে ম্যাক্লয়েডের দারুণ ক্যাচে ফেরেন নুরুল হাসানও। পরের বলেই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বিশাল ছয় মেরে আশার পালে হাওয়া লাগালেও এক বল পরেই ছয় মারতে গিয়ে আবারও ম্যক্লয়েডের ঠান্ডা মাথার ক্যাচে ফেরেন ২২ বলে ২৩ রান করে। শেষ ওভারে ২৪ রান দরকার ছিল। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন-মাহেদি হাসান চেষ্টা করলেও স্নায়ু ধরে রেখে সাফিয়ান শরিফ দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। 

    এর আগে টসে জিতে বোলিং নিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা হয় মনমত। দ্বিতীয় ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমান মেইডেন দিলে তার পরের ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই কাইল কোয়েটজারকে ফেরান মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তবে উইকেটে নবাগত ম্যাট ক্রসকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে এগিয়ে যান জর্জ মানসি। পাওয়ারপ্লেতে আর কোনও উইকেট না হারিয়ে স্কটল্যান্ড তোলে ৩৯ রান। 

    পাওয়ারপ্লের পরে অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে সেই জুটির দুজনকেই ফেরান মাহেদি হাসান। ক্রসকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ১১ রানে ফেরানোর দুই বল পরেই দারুণ এক আর্ম বলে ২৩ বলে ২৯ রানে থাকা মানসির স্টাম্প উপড়ে ফেলেন মাহেদি। অপর প্রান্তে ডট বল দিয়ে চেপে বসা সাকিব এরপর পান উইকেটের দেখা। ১১তম ওভারে আফিফ হোসেনের ঠান্ডা মাথার ক্যাচে রিচি বেরিংটনকে ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেটের তালিকায় লাসিথ মালিঙ্গাকে স্পর্শ করেন সাকিব। এক বল পরেই মাইকেল লিস্ককে ফিরিয়ে সেই রেকর্ড একার করে নেন তিনি, ১০৮তম উইকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়ে যান তিনি। পরের ওভারেই মাহেদি এসে ক্যালাম ম্যাক্লয়েডের স্টাম্প উপড়ে ফেললে ঘোর বিপদে পরে স্কটল্যান্ড। 

    এরপর অবশ্য উইকেটে আসা দুই ব্যাটসম্যান মার্ক ওয়াট ও ক্রিস গ্রিভস প্রতি আক্রমণে যান। ৩৩ বলে ৫১ রান তুলে এই জুটি স্কটল্যান্ডকে ১০০ এর ওপারে নিয়ে যায় ১৭তম ওভারে। তবে পরের ওভারে আক্রমণে এসেই সেই জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। লং অফে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১৭ বলে ২২ রান করেন ওয়াট। অন্য প্রান্তে থাকা গ্রিভসের অবশ্য তাতে কোনও ছন্দপতন হয়নি, ঐ ওভারেই এর পর মারেন দারুণ দুটি চার ও একটি ছয়। শেষ ওভারে অবশ্য মোস্তাফিজের কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে গ্রিভস থামেন ২৮ বলে ৪৫ রান করে। পরের বলেই দুর্দান্ত ইয়র্কারে অপর প্রান্তে থাকা জন ডেভির স্টাম্প উপড়ে ফেলেন মোস্তাফিজ। উইকেটে এসে এরপর সাফিয়ান শরিফ দারুণ এক ছয় মারলেন স্কটল্যান্ড গিয়ে থামে ১৪০ রানে। সেই শরিফই শেষ ওভারে ২৪ রানের লক্ষ্য রুক্ষা করায় দিনশেষে দারুণ জয় পায় স্কটল্যান্ড। টানা দুই সিরিজ জয়ের পরে উড়তে থাকা বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্টের কপালেও যে এই হারে ভাঁজ পড়বে তা নিয়েও সন্দেহের খুব একটা জায়গা নেই।