বাঁচামরার ম্যাচে ওমানকে হারিয়ে টিকে রইল বাংলাদেশের আশা
গ্রুপ পর্ব, আল আমেরাত (টস- বাংলাদেশ/ ব্যাটিং)
বাংলাদেশ ১৫৩, ২০ ওভার (নাইম ৬৪, সাকিব ৪২, মাহমুদউল্লাহ ১৭, বিলাল ৩/১৮, ফায়াজ ৩/৩০, কলিমউল্লাহ ২/৩০)
ওমান ১২৭/৯, ২০ ওভার ( জতিন্দর ৪০, প্রজাপতি ২১, নাদিম ১৪*, মোস্তাফিজ ৪/৩৬, সাকিব ৩/২৮, মাহেদি ১/১৪)
ফলাফল: বাংলাদেশ ২৬ রানে জয়ী
বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ওমানের বিপক্ষে ২৬ রানের জয় দিয়ে সুপার-১২ এর দৌড়ে টিকে থাকল বাংলাদেশ। মোহাম্মদ নাইম-সাকিব আল হাসানের ৮০ রানের জুটিতে ভর করে ওমানের সামনে ১৫৪ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। বিলাল খান ও ফায়াজ বাটের ৩ উইকেটে উজ্জীবিত ওমান জতিন্দর সিংয়ের ৪০ রানের ইনিংসে রানতাড়ায়ও সঠিক পথেই ছিল। মোস্তাফিজুর রহমানের ৪ ও সাকিবের ৩ উইকেটে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ হাসি হাসে বাংলাদেশই।
১৫৪ রানের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরে যান আকিব ইলিয়াস। তবে ঐ ওভারে ৫টি ওয়াইড দিয়ে বসেন মোস্তাফিজ। পরের ওভারে সেই মোস্তাফিজই কাশ্যপ প্রজাপতির ক্যাচ ফেলে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে। সুযোগ পেয়ে দুই ওপেনার হাত খুলে খেলতে শুরু করলে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে আবারও মোস্তাফিজকে আক্রমণে ফেরানো হয়। সুযোগ তৈরি হলেও জতিন্দর সিংয়ের আকাশে ভাসানো বল ফ্লাডলাইটের আলোয় হারিয়ে ফেলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তবে ঐ ওভারেই ১৮ বলে ২১ রানে থাকা প্রজাপতিকে ফিরিয়ে নিজের ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করেন মোস্তাফিজ। ঐ দুই উইকেট সত্ত্বেও পাওয়ারপ্লেতে ৪৭ রান তুলে ফেলে ওমান।
অপর প্রান্তে জতিন্দর সপ্রতিভ হলেও উইকেটে এসে ওমান অধিনায়ক জিশান মাকসুদ ধুঁকতে থাকেন। দুই ওভার দারুণ বল করার পর নিজের তৈরি করা চাপের ফল তৃতীয় ওভারে গিয়ে পান মাহেদি। অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথের বল দিলে তা আকাশে ভাসিয়ে দেন জিশান। আগের ক্যাচ মিসের শাপ মোচন করে মোস্তাফিজ দারুণ এক ক্যাচ ধরলে ১৭ বলে ১২ রান করে ফেরেন জিশান।
এরপরেই রানের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে গেলে চাপে পড়েন জতিন্দর। সেই চাপেই সাকিবের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৩৩ বলে ৪০ রান করে থামেন। রানতাড়ায় এরপর পুরোপুরি খেই হারিয়ে ফেলে ওমান। সাইফ উদ্দিনের শিকার হয়ে সন্দ্বীপ গৌদ ফেরার পর নিজের শেষ ওভারে এসে টানা দুই বলে আয়ান খান ও নাসিম খুশিকে ফেরান সাকিব। পরের ওভারে মোস্তাফিজ এসেও হানেন জোড়া আঘাত, ফেরান কলিমউল্লাহ ও ফায়াজ বাটকে। শেষ ওভারে মোস্তাফিজ ১২ রান গুনলেও ২৬ রানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারে বিলাল খানের বলে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পরের বলেই ইয়র্কারে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরে যান লিটন দাস। এদিন তিনে নামা মাহেদি হাসান এরপর দিক্বিদিকশূন্য শট খেলে ফায়াজ বাটের দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচের শিকার হয়ে ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই। উইকেটে এরপর আসা সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আর কোনও বিপদ ঘটতে দেননি মোহাম্মদ নাইম; পাওয়ারপ্লে শেষে বাংলাদেশ তুলতে পারে ২৫ রান।
পরের ওভারেই ফিরতে পারতেন নাইম। ফায়াজের বাউন্সার মাঠছাড়া করতে গেলে বাউন্ডারিতে থাকা জতিন্দর সিং সহজ ক্যাচ ফেলে দিলে বেঁচে যান নাইম, ঐ বলে পেয়ে যান ছয়ও। পরের ওভারে আরও একবার সরাসরি মোহাম্মদ নাদিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান নাইম। তবে সুযোগ কাজে লাগিয়ে এরপর সাকিবের সাথে শক্ত জুটি গড়ে তোলেন তিনি। ১২তম ওভারে দুজনে মিলে দুই চার ও এক ছয়ে ১৭ রান নিয়ে গিয়ার পাল্টানোর ইঙ্গিত দেন। প্রথমে কিছুটা ধুঁকলেও স্পিনাররা আক্রমণে এলে ছন্দে ফেরেন সাকিব। তবে ১৪তম ওভারে আকিব ইলিয়াসের দারুণ সরাসরি থ্রোতে রান আউটের শিকার হয়ে তাকে থামতে হয় ২৯ বলে ৪২ রান করে।
সাকিবের বিদায়ের পরে হঠাৎই খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। উইকেটে এসেই পরের ওভারেই জিশান মাকসুদের বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এদিন ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে উঠে আসা নুরুল হাসান। ১৭তম ওভারে আক্রমণে এসে এরপর জোড়া আঘাত হানেন কলিমউল্লাহ। তাকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে আফিফ হোসেন ফেরার পরে থামেন নাইমও। সহজ ক্যাচ মিসের পসরা সাজিয়ে বসা ওমান ফিল্ডাররা তাদের জুজু ভেঙে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ নিয়ে ৫০ বলে ৬৪ রানের ইনিংসের পর থামান নাইমকে। ১৯তম ওভারে আক্রমণে এসে ফায়াজও হানেন জোড়া আঘাত। এদিন আটে নামা মুশফিকুর রহিম উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পরের বলেই বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়ে প্রথম বলেই ফেরেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। শেষ ওভারে বিলাল খান এসেও দারুণ ইয়র্কারে মাহমুদউল্লাহর স্টাম্প উপড়ে ফেলার পর শেষ বলে মোস্তাফিজুর রহমানকে ফেরান, বাংলাদেশ তাই গিয়ে থামে ১৫৩ রানে।