পাপুয়া নিউ গিনিকে উড়িয়ে সুপার-১২ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ
গ্রুপ পর্ব, আল আমেরাত (টস- বাংলাদেশ/ ব্যাটিং)
বাংলাদেশ ১৮১/৭, ২০ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৫০, সাকিব ৪৬, লিটন ২৯, মরেয়া ২/২৬, ভালা ২/২৬, রাভু ২/৪০)
পাপুয়া নিউ গিনি ৯৭, ১৯.৩ ওভার (ডরিগা ৪৬*, সোপার ১১, হিরি ৮, সাকিব ৪/৯, তাসকিন ২/১২, সাইফউদ্দিন ২/২১)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৮৪ রানে জয়ী
চার রানের জয় পেলেই বাংলাদেশের সুপার-১২ নিশ্চিত হত। তবে ম্যাচের আগে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা ব্যক্ত করা সাকিব আল হাসান খেললেন চ্যাম্পিয়নের মতই, বাংলাদেশকে এনে দিলেন ৮৪ রানের জয়। সাকিবের ৪৬ রানের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লার ঝড়ো ৫০ রানের সাথে শেষ দিকে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের ৬ বলে ১৯* রানের ক্যামিওতে বাংলাদেশ পায় ১৮১ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ। জবাবে সাকিবের ৪ উইকেটে বিধ্বস্ত পাপুয়া নিউ গিনি বাংলাদেশের সামনে নতি শিকার করে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ যাত্রা শেষে ফিরেছে শূন্য হাতেই।
১৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় পাওয়া পাপুয়া নিউ গিনির জন্য হয়ত ছিল শুধুই স্বপ্ন। আর তাদেরকে ১৭৭ এর মধ্যে আটকে রাখতে পারলেই বাংলাদেশের সুপার-১২ নিশ্চিত হয়ে যেত। সেই লক্ষ্যে বল হাতে নিয়ে তৃতীয় ওভারেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে লেগা সিয়াকাকে ফেরান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এরপর যেন তাসের ঘরের মত লুটিয়ে পরে পাপুয়া নিউ গিনির ব্যাটিং লাইনআপ। পরের ওভারেই তাসকিন আহমেদের বলে উইকেটের পিছনে নুরুল হাসানের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে ফিরে যান অধিনায়ক আসাদ ভালা। আক্রমণে এসেই সাকিব হানেন জোড়া আঘাত, ক্যাচ না পড়লে পেতে পারতেন আরও একটি উইকেট। প্রথম বলেই চার্লস আমিনিকে ফেরানোর পরে সিমোন আতাইকে ফেরালে পাওয়ারপ্লেতে পাপুয়া নিউ গিনি তুলতে পারে মোটে ১৭ রান।
নিজের তৃতীয় ওভারে এরপর মাত্র এক রান দিয়ে সাকিব ফেরান সেসে বাউকে। পরের ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই মাহেদী হাসানের শিকার হয়ে ফিরে যান আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা নরম্যান ভানুয়া। নিজের শেষ ওভারে এসে হিরি হিরির দুর্ভোগের অবসান ঘটান সাকিব। চার ওভারের কোটা পূর্ণ করার পর তার ফিগার ছিল: ৪-০-৯-৪! এরপর চ্যাড সোপার-কিপলিন ডরিগার ২৫ রানের জুটি কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বড়সড় লজ্জার হাত থেকে দলকে বাঁচালেও এরপর সাইফ উদ্দিনের শিকার হয়ে সোপার থামেন ১১ রানে। সোপার ফিরলেও ডরিগা এক প্রান্ত আগলে রেখে স্রোতের বিপরীতে লড়ে যান। এর মাঝেই অবশ্য রান আউট হয়ে ফিরে যান কাবুয়া মরেয়া। ডরিগা ৩৪ বলে ৪৬ রানে অপরাজিত থাকলেও শেষ ওভারে তাসকিনের শিকার হয়ে ডেমিয়েন রাভু ফিরলে বাংলাদেশ পায় বড় জয়, সেই সাথে নেট রান রেটের বিশাল উন্নতিতে নিশ্চিত করে ফেলে সুপার-১২।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। লেগ সাইডের বাউন্ডারিতে থাকা একমাত্র ফিল্ডারকে খুঁজে নিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই কাবুয়া মরেয়ার শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান মোহাম্মদ নাইম। উইকেটে আসা সাকিব আল হাসানকে নিয়ে এরপর বিপদ সামলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান লিটন দাস। পাওয়ারপ্লেতে আর কোনও উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ৪৫ রান।
এদিন ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও ভালো শুরুকে আরও একবার বড় ইনিংসে রুপ দিতে ব্যর্থ হন লিটন। আসাদ ভালা আক্রমণে এসেই প্রথম বল ভাসিয়ে দিলে স্লগ সুইপ করে সরাসরি বাউয়ের হাতে তুলে দিয়ে ২৩ বলে ২৯ রান করে ফেরেন লিটন। এদিন এরপর নিজের জায়গায় নামলেও মুশফিকুর রহিমের দুঃসময়ের অবসান ঘটেনি। ব্যাটে-বলে দারুণ সংযোগ হলেও সরাসরি ডিপ স্কয়ারে ক্যাচ দিয়ে ৫ রানেই ফিরে যান তিনি। এরপর পাঁচে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ। সাকিবকে অপর প্রান্তে কিছুটা ক্লান্ত মনে হলে তিনিও বাউন্ডারির খোঁজ করতে থাকেন। ১৪তম ওভারে ভালাকে এক হাতেই ছয় মারার এক বল পরেই আবারও বাউন্ডারির খোঁজে তুলে মারেন। লং অনে চার্লস আমিনি দুর্দান্ত ক্যাচ নিলে ৩৭ বলে ৪৬ রান করেই থামতে হয় সাকিবকে।
সাকিব ফেরার পর যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চ্যাড সোপারের করা ১৮তম ওভারে চার মেরে ২৭ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন,যা টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত দ্রুততম। ঐ ওভারে আফিফ হোসেনের সাথে জুটি বেঁধে দুই ছয় ও এক চারে নেন ১৯ রান। তবে পরের ওভারেই ডেমিয়েন রাভুর ফুল টস মাঠছাড়া করতে গিয়ে ঐ সোপারের ক্যাচেই থামেন ২৮ বলে ৫০ রান করে। ঐ ওভারের শেষ বলেই রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান নুরুল হাসান। পরের ওভারে চার মারার পরে শেষ বলে মরেয়ার আঘাতে ১৪ বলে ২১ রান করে থামেন আফিফ। শেষ ওভারে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন টানা দুই ছয় এক চারে শেষ করলে বাংলাদেশ গিয়ে থামে টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ১৮১ রানে।