• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুঃস্বপ্ন ফিরিয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডের স্বপ্নের শুরু

    ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুঃস্বপ্ন ফিরিয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডের স্বপ্নের শুরু    

    সুপার ১২, দুবাই (টস- ইংল্যান্ড/ বোলিং)

    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫৫/১০, ১৪.২ ওভার (হেটমায়ার ১৩, রশিদ ২/৪, মঈন ২/১৭, মিলস ১৭/২)

    ইংল্যান্ড ৫৬/৪, ৮/২ ওভার (বাটলার ২৪, রয় ১১, আকিল ২৪/২)

    ফলাফল: ইংল্যান্ড ৬ উইকেট জয়ী


    আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আরেকটি ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ। মাঝখানে পাঁচটি বছর, তবু কারো ভোলার উপায় নেই সেই ‘ফাইনাল’। ইংল্যান্ডের মুঠোয় থাকা বিশ্বকাপ উইন্ডিজদের ছিনিয়ে নেওয়ার স্মৃতি এখনও হয়তো দগদগে ক্ষত হিসেবেই মরগানদের মনে জীবিত। সেই উইন্ডিজদেরই এবার দুঃস্বপ্ন ফিরিয়ে দিল ইংল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের সর্বনিম্ন এবং বিশ্বকাপের তৃতীয় সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ড উপহার দিল মরগানের ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ শেষেও ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে জয় অধরাই ছিল ইংলিশদের কাছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫৫ রানের মামুলি পুঁজি টপকে গিয়ে তারা আজ পেয়েই গেছে সেই জয়ের দেখা। 

    ৫৬ রানের লক্ষ্যতাড়ায় যখন নামে ইংল্যান্ড, কতক্ষণ লাগে সেটাই হয়ে গিয়েছিল তখন দেখার বিষয়। তবে নিজেদের ‘সর্বোচ্চ অনুপ্রেরণা’ জুগিয়ে লড়ার চেষ্টা করে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বলতে গেলে অপরিচিত দৃশ্যেরও দেখা মিলেছে তাই, শর্ট লেগে ছিলেন ফিল্ডার। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের আক্রমণাত্মক মনোভাবকে গুড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই খেলে গেছেন বাটলার-রয়। কিন্ত রামপালের স্লোয়ারে ধোঁকা খেয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রয়। বেইরস্টোও এসে সঙ্গ দিতে পারেন না বাটলারকে। ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে সাজঘরের পথে হাটেন মঈন আলীও। তবু ইংল্যান্ড পাওয়ারপ্লে শেষ করতে পারে ৩৩ রানে। 

    পাওয়ারপ্লে শেষে আকিল হোসেনের ‘অবিশ্বাস্য’ ডাইভিং ক্যাচে এক রানে আউট হয়ে যান লিভিংস্টোনও। ফ্যাবিয়ান এলেনের ইনজুরি সুযোগ করে দিয়েছিল আকিলকে, রিজার্ভ থেকে মুল স্কোয়াডে তাই এসেছেন। প্রথম ম্যাচেই নেমে ৪ ওভার শেষ করেছেন ২৪ রানে দুই উইকেট নিয়ে। এ ম্যাচ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিছু পাওয়ার না থাকলেও আকিল নিশ্চিতভাবেই নিবেন ‘আত্মবিশ্বাস’, ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও দিয়েছেন তার উপর ভরসা রাখার সাহস। 

    অপর প্রান্তে থেকে চার সতীর্থকে ফিরতে দেখলেও বাটলার এক পাশ আগলে রেখে ছিলেন শেষ পর্যন্ত, ২৪ রানে অপরাজিত থেকে মরগানকে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেই ছেড়েছেন মাঠ। ৭০ বলে হাতে রেখে যখন জিতে ইংল্যান্ড, সাত রানে তখন অপরাজিত ছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। এর আগে টসে জিতে বোলিং নিয়ে ইংল্যান্ড কাপ্তান এর চাইতে ভালো শুরুর আশা করতে পারতেন না। যার হাতেই তুলে দিয়েছেন বল, সেই তাকে এনে দিয়েছে উইকেট।

    উইকেটশূন্য থেকে প্রথম ওভার শেষ করলেও পরের ওভার থেকেই শুরু হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুর্দশা। ওকসের স্লোয়ারে মারতে গিয়ে মঈন আলীর পিছু ছুটে গিয়ে নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে লুইস ফিরেন তাদের ইনিংসের একটিমাত্র ছক্কা হাঁকিয়ে। পরের ওভারে মঈনের বলে আরেক ওপেনার লেন্ডল সিমন্স ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে বিগ বাউন্ডারি ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন, ডিপ মিড উইকেটে লিভিংস্টোনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৩ রানে। 

    ৯ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের উপর এরপর ইংল্যান্ডকে চেপে বসতে অসম্মতি জানান হেটমায়ার ও গেইল। তবে তাদের ১৮ রানের ইনিংস সর্বোচ্চ জুটি বেশ বড় হতে পারেনি হেটমায়ারের শট মিডঅনে মরগানকে খুঁজে নিলে। ৯ রানে হেটমায়ারের ফেরার পর মিলস এসে তার প্রথম ওভারে গেইলকেও ফিরিয়ে দিলে ক্যারিবিয়ানরা পাওয়ারপ্লে শেষ করে ৩১ রানে। মঈন পরের ওভারে এসে দুই রান দিয়ে তার বোলিং কোটা শেষ করেন মাত্র ১৭ রান দিয়ে। ১৮ ডটের সে স্পেল ছিল মঈন আলীর চার ওভার স্পেলের মধ্যে সবচেয়ে কম খরুচে। 

    জর্দানও এরপর শামিল হন ইংল্যান্ডের উইকেট উৎসবে। ক্রিজে দুই বাঁহাতির থাকা এড়িয়ে মঈনের স্পিন মোকাবিলার কৌশলে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে পাঠানো ব্রাভো ফিরেন ৫ রানে, আগের বলে দারুণ কাটে চার মেরে পরের বলে একই শটে পয়েন্টে দারুণ ক্যাচের শিকার হয়ে। অপর প্রান্তে ধুঁকতে থাকা পোরানও পরের ওভারে মিলসের বলে উইকেটের পেছনে নয় বলে এক রানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য তখন লড়ে যাওয়ার মতো পুঁজি গড়ার যা আশা ছিল তা দুই বিধ্বংসী পোলার্ড-রাসেল জুটির উপরই। কিন্ত এ দিন যে হবে শুধুই ইংল্যান্ডের! এতক্ষণ উইকেট উৎসবে ‘দর্শক’ হিসেবে থাকা রশিদও এরপর যোগ দেন ‘উইন্ডিজ ধ্বংসযজ্ঞে’। ডানহাতি এ লেগির গুগলি মিস করে শূন্য রানেই বোল্ড হন রাসেল। নিজের পরের ওভারে এসে পোলার্ডকেও ফিরিয়ে দেন তিনি। শেষ উইকেটটাও এরপর তুলে নিয়ে ১৩ বলে ২ রানে ৪ উইকেটের ‘স্বপ্নীল’ স্পেল শেষ করেন! সবার শেষে এসে শেষ করেন সবার চাইতে ভালো হয়ে! ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে পান সেরা বোলিং ফিগারের দেখা। তবে উইন্ডিজদের ‘সর্বনাশ’ ঘটে গিয়েছিল এর আগেই! ফলস্বরুপ তারা পেয়ে গেছে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে প্রথম হারের স্বাদ। তবে দেখার বিষয়, এমন হারের পর তারা তাদের বিশ্বকাপ মিশনে কেমন করে ঘুরে দাঁড়ায়!