• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    বাজে পরিকল্পনা ও ক্যাচিং ব্যর্থতার খেসারত দিয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ

    বাজে পরিকল্পনা ও ক্যাচিং ব্যর্থতার খেসারত দিয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ    

    সুপার ১২, শারজা (টস- শ্রীলংকা/ বোলিং)

    বাংলাদেশ ১৭১/৪ ২০ ওভার (নাঈম ৬২, মুশফিক ৫৭, কারুনারত্নে ১২/১)

    শ্রীলংকা ১৭২/৫ ১৮.৫ ওভার (আসালাঙ্কা ৮০, রাজাপাকসে ৫৩, সাকিব ১৭/২)

    ফলাফলঃ শ্রীলংকা ৫ উইকেটে জয়ী


    সেই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিল দুদল। তখনকার শ্রীলংকার সাথে বাংলাদেশের তফাতটাও স্পষ্ট ৬৪ রানের সে জয়-পরাজয়ের ব্যবধানে। তবে দুদলের মধ্যে এখন খুব একটা তফাত আছে বলতে পারবেন না। মাঠে তা ফুটে উঠলেও তবু বিজয়ী দলের নাম এবারও বাংলাদেশ নয়! নাঈমের ফিফটির পর বিশ্বকাপে মুশফিকের প্রথম ফিফটিতে ১৭২ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সেটি ডিফেন্ড করতে গিয়ে আসালাঙ্কার ব্যাটে কিছুটা চাপে পড়লেও সাকিব ম্যাজিকে বাংলাদেশ জয়ের খুব বেশি দূরে ছিল না। কিন্ত সেই আসালাঙ্কা ও রাজাপাকসের দারুণ ব্যাটিংয়ের সাথে ক্যাচ মিসের মাশুল গুণে বাংলাদেশ সুপার টুয়েলভ শুরু করলো হার দিয়েই। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টোটা! প্রথম ইনিংস শেষে সবাই তো ভেবেছিলেন এমনটাই!

     

    ইনিংস ব্রেকে মুশফিক বলেছিলেন, যেমন আশা করেছিলেন তার থেকে ভালো ছিল পিচ এবং সেজন্য শ্রীলংকাকে রুখা এতটাও সহজ হবে না। প্রথম ওভারেই শ্রীলংকার অন্যতম ভরসা কুসাল পেরেরাকে নাসুম বোল্ড করে ফিরিয়ে দিলে তখন মনে হচ্ছিল তা খুব একটা কঠিনও হবে না। কিন্ত আসালাঙ্কার তাতে বরং আপত্তি ছিল বেশ, নাসুমের এক ওভারেই মারেন দুই ছয়। দুই ওভারে ১০ রান তোলা শ্রীলংকার স্কোর পাঁচ ওভার শেষে দাঁড়ায় ৩৯/১। তবে তখনও অপর প্রান্তে থাকা নিসাঙ্কা নিশ্চুপ ছিলেন ১১ বলে ৭ রানে, এরপর আক্রমণে যোগ দেন তিনিও, মাহেদীর উপর চড়াও হয়ে চার-ছয়ে আনেন মোট ১৫ রান। 

     

    পাওয়ারপ্লে শেষে ৫৪ রান তুলে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলংকা। মুস্তাফিজ এসে ১৩ রানের খরুচে ওভার বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাহেদী এসে ৪ রানের ওভার করে গেলে পরের ওভারে সাকিব এসে ঘুরে দাঁড়ানো শ্রীলংকাকে ফেলে দেন গর্তে। ২৪ রানে সেট হয়ে থাকা নিসাঙ্কাকে ফেরান বোল্ড করে, আভিস্কাও এসে তার ফ্লাইটে ধোঁকা খেয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। রাজার মুকুটে যুক্ত হয় আরেকটি পালক, সাকিব বনে যান বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। পরের ওভারে সাইফুদ্দিনের স্লোয়ারের ফাঁদে পড়ে খাড়া ক্যাচ তুলে হাসারাঙ্গাও ফিরে গেলে লংকানরা পড়ে ভীষণ চাপে। কাপ্তান মাহমুদুল্লাহ সে সুযোগে কয়েকটি ওভার কাভার করিয়ে নিতে চান। 

     

    নিজে এসে পাঁচ রান দিলেও আফিফ এসে দিয়ে দেন ১৫ রান। অবশ্য সুযোগ তৈরি হয়েছিল, লিটন সহজ ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি। রাজাপাকসে যেন পেয়ে যান ‘জন্মদিনের উপহার’! ততক্ষণে ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেছেন আসালাঙ্কা, এরপর মাহমদুল্লাহর পরপর দুই বলে হাঁকান দুই ছক্কা। বাংলাদেশের জন্য আতঙ্কে পরিণত হওয়া আসালাঙ্কার ক্যাচ অবশ্য উঠে গিয়েছিল ৬৭ রানে থাকা অবস্থায়, সেবারও সেটি মুঠোয় বন্দী করতে পারেননি লিটন দাস। পরের ওভারে সাইফুদ্দিনের ওভারে দুই ছয় ও এক চারে মোট ২২ রান এলে বাংলাদেশের থেকে ম্যাচ প্রায় ছিটকেই যায়। শেষমেশ রাজাপাকসে ২৮ বলে ৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ফিরে গেলেও ৮০ রানে অপরাজিত থেকে সাত বল হাতে রেখেই জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন আসালাঙ্কা।

    তার আগে টস হারা বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করতে বাধ্য ছিল, তবে মাহমুদুল্লাহরও পছন্দ ছিল সেটিই। আর ওপেনিংয়ে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ এদিন শুরুটা করেছিল দুর্দান্তভাবে। আগে ব্যাট করতে চাওয়া বাংলাদেশের যা দরকারও ছিল। শারজায় পাওয়ারপ্লেতে এগিয়ে থাকাদেরই যে ম্যাচ শেষ এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। লিটন-নাঈম এদিন সতর্ক থেকে ছিলেন আগ্রাসী। নিয়মিত হারে স্ট্রাইক রোটেটে মনযোগী হওয়ার পাশাপাশি সুযোগেই তুলে নিয়েছেন বাউন্ডারি। বাউন্ডারিবিহীন দুই রানে প্রথম ওভার শেষ করলেও পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারের আগের প্রত্যেক ওভারেই বাংলাদেশ পেয়েছে বাউন্ডারি। 

    পাওয়ারপ্লের শুরু আর শেষ ওভার মিলিয়ে ৫ রান এলেও মাঝের চার ওভারে এসেছে ৩৬ রান। শেষের ওভারে লিটন দাসের উইকেট না হারালে বাংলাদেশের ইনিংসের ভিত্তিটা আরও মজবুত হতো। তবু পাওয়ারপ্লেতে এই পারফর্ম্যান্সে বাংলাদেশ খুশি না হয়ে উপায় নেই। কিন্ত ভালো শুরু পেলেও সেখান থেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই প্রয়োজন ছিল তখন। সাকিব এসে শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী মনোভাবে। ৪১ রানে পাওয়ারপ্লে শেষ করা বাংলাদেশ পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই আসালাঙ্কার বল থেকে নাঈম-সাকিবের তিন চারে তুলে নিয়েছিল ১৪ রান। কারুনারত্নের স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে সাকিব পরের ওভারে ১০ রানে ফিরে গেলেও এরপর মুশফিক এসে রানের চাকা সচল রেখেছেন। 

    নাঈম তাকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন, শারজার ধীরগতির পিচেও মুশফিক ছিলেন ‘অসাধারণ’। বাংলাদেশ ইনিংস প্রথম দুই ছক্কার মার দেখেছে তারই সৌজন্যে। এরপর নাঈমও দেখিয়েছেন তার আগ্রাসী রুপ। কুমারার সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়েছিলেন, এরপর ১৪তম ওভারে কুমারার উপর চড়াও হয়েছেন। চার মেরে ৪৪ বলে পূর্ণ করেছেন ফিফটি, বাংলাদেশও সে ওভারে একশো ছাড়িয়ে গেছে। কুমারার পরে হাসারাঙ্গার পরের ওভারেও এসেছে ১১ রান। শ্রীলংকার মুল অস্ত্র হাসারাঙ্গা ছিলেন বাংলাদেশের ভয়ের কারণ, কিন্ত অফ ফর্মে থাকলেও স্পিনে দুর্দান্ত মুশফিকের কাছে হাসারাঙ্গাই উল্টো হয়ে পড়েছিলেন অসহায়। এ দুজনের অবদানে ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১১৮। যার অর্থ শারজার পিচে এভারেজ স্কোর ছাড়িয়ে অনেক বেশি লক্ষ্য দাঁড় করানোর সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশ। 

    ৬২ রানে বিনুরার কাটারে ক্যাচ তুলে দিয়ে নাঈম ফিরে গেলেও মুশফিক তখনও ক্রিজে ছিলেন, কাট-আপার কাটে চতুরতার সাথে গ্যাপ খুঁজে নিয়ে অসহায়ই বানিয়ে ছাড়ছিলেন লঙ্কানদের। আফিফ এসে ৭ রানে রান আউট হয়ে ফেরার আগে মুশফিক বিশ্বকাপে তার নিজের প্রথম ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেন ৩২ বলে, সেই সাথে বাংলাদেশও দেড়শো পূর্ণ করে। মুশফিকের সাথে মাহমুদুল্লাহর ৫ বলে ১০ রানের লিটল ক্যামিওতে বাংলাদেশে শেষমেশ গিয়ে থামে ১৭১ রানে। অপরাজিত থেকে মুশফিক গিয়ে থামেন ৫৭ রানে। লিটল মাস্টারের সে ‘ক্লাসি’ ইনিংসের বদৌলতে প্রথম ১০ ওভারে ৭২ রান তুলা বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে তুলতে পারে ৯৯ রান।

    শারজায় শ্রীলংকার বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাট করতে নামছে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য বলেছেন, টসে জিতলে তিনি ব্যাটিংই নিতেন। বাংলাদেশের একাদশে আছে একটি পরিবর্তন। তাসকিন আহমেদের জায়গায় এসেছেন নাসুম আহমেদ। আর শ্রীলংকায় চোটের জন্য বাইরে চলে গেছেন মাহিশ থিকসানা, তার জায়গায় এসেছেন বিনুরা ফার্নান্দো।