কোহলিদের ১০ উইকেটে উড়িয়ে বাবরদের নতুন ইতিহাস
সুপার ১২, দুবাই (টস- পাকিস্তান/ বোলিং)
ভারত ১৫১/৭, ২০ ওভার (কোহলি ৫৭, পান্ট ৩৯, জাদেজা ১৩, আফ্রিদি ৩/৩১, হাসান ২/৪৪, শাদাব ১/২২ )
পাকিস্তান ১৫২/০, ১৭.৫ ওভার (রিজওয়ান ৭৯*, বাবর ৬৮*, বুমরাহ ০/২২, ভুবনেশ্বর ০/২৫)
ফলাফল: পাকিস্তান ১০ উইকেটে জয়ী
বিশ্বকাপের আগেই রমিজ রাজা ডাক দিয়েছিলেন মাঠের বাইরের দুঃসংবাদগুলোকে শক্তিতে পরিণত করার, সব অপমানের জবাব ব্যাটে-বলে দেওয়ার। পিসিবি সভাপতির ডাকে সাড়া দিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ১০ উইকেটের জয় দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করল পাকিস্তান। বোলিং নিয়ে ভিরাট কোহলির ৫৭ রানের পর শাহীন শাহ আফ্রিদির দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাওয়া ৩ উইকেটে ভারতকে ১৫১ রানে বেঁধে ফেলে পাকিস্তান। জবাবে ২০২১ সালের সবচেয়ে সফল জুটি বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানের হার না মানা ১৫২ রানে ভর করে যেকোনো বিশ্বকাপ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের দেখা পায় পাকিস্তান। সেই সাথে কোহলির দলকে পিষ্ট করে তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে প্রথম ১০ উইকেটের হারের তিক্ততা ফিরিয়ে দিয়ে ১৯৯২ থেকে তাদের বিপক্ষে কোনও বিশ্বকাপ ম্যাচ না জেতার জ্বালা কিছুটা হলেও মোচন করল তারা।
১৫২ রানের লক্ষ্য দুবাইয়ের উইকেটে কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারত। তবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ান জুটি নিজেদের নিয়ে ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। গত প্রায় এক বছর ধরে আস্থার প্রতীক হয়ে থাকা এই জুটিতে ভারত জুজু কাটাতে বদ্ধপরিকর পাকিস্তানের শুরুটা হয় দারুণ। দুজনের কেউই তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে যাননি, ছিলেন হিসেবি কিন্তু কার্যকর। ভালো বলকে দিয়েছেন যথাযোগ্য সম্মান, খারাপ বলে ছেড়ে কথা বলেননি। পাওয়ারপ্লেতে দুজন মিলে তুলে ফেলেন ৪৩ রান।
পাওয়ারপ্লেতে কিছুটা রয়েসয়ে খেলা বাবর এরপর দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে বসেন, একইসাথে প্রান্ত বদলও করেন প্রয়োজনমত। বরুন চক্রবর্তীর করা ১৩তম ওভারে দুই ছয়ে ৪০ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন বাবর। ঐ ওভারে নিজেদের তৃতীয় ১০০ রানের জুটিও পূর্ণ করেন এই জুটি। পরের ওভারে ৪১ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক রিজওয়ান। ভারতের বিপক্ষে এর আগের সর্বোচ্চ শেন ওয়াটসন-ডেভিড ওয়ার্নারের ১৩৩ রানের জুটির রেকর্ডও এরপর ভেঙে দেন এই দুজন। ভারতের বোলারদের কাছে এই দুজনের ব্যাটিংয়ের কোনও জবাবই ছিল না। দুজনেই শেষমেশ অপরাজিত থেকে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে প্রথমবার ১০ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পরে ভারত। এর আগের ৬০ ইনিংসে প্রথম ওভারে বল হাতে নিয়ে ২০ বারই উইকেট নিয়েছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি, যা মধ্যে একবার নিয়েছিলেন ওভারে দুই উইকেট। বড় মঞ্চেও যথারীতি জ্বলে উঠলেন তিনি, দুর্দান্ত ইনসুইংয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে রোহিত শর্মাকে উপহার দেন গোল্ডেন ডাক। নিজের পরের ওভারে আবারও অসাধারণ এক ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কারে লোকেশ রাহুলের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তিনি। উইকেটে এসে সূর্যকুমার যাদব আত্মবিশ্বাসী শুরু করলেও পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে হাসান আলির বলে উইকেটের পিছনে রিজওয়ানের দারুণ ক্যাচে ১১ রানেই ফিরে যান তিনি। পাওয়ারপ্লেতে তিন উইকেট হারিয়ে ঘোর বিপদে পড়া ভারত ৩৬ রান তুলতে সমর্থ হয়।
উইকেটে অবশ্য তখনও ছিলেন ভিরাট কোহলি, যাকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর আগের তিনি ইনিংসে একবারও প্যাভিলিয়নের পথ দেখাতে পারেনি। ঋশাভ পান্টকে সাথে নিয়ে তিনি বিপদ সামলে উঠেছিলেন। উইকেটে থিতু হওয়ার পরের হাসানের করা ১২তম অয়ারে দুই ছয় মেরে হাত খোলার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন পান্ট। ঠিক তার পরের ওভারেই শাদাব খানের গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে তার হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৩৬ বলে ৩৯ রান করে থামেন তিনি। তবে এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের ৪র্থ ইনিংসে ৩য় ফিফটি তুলে নেন কোহলি, ৪৫ বলে।
কোহলির সাথে অপর প্রান্তে থাকা রবীন্দ্র জাদেজা কিছুটা ধুঁকছিলেন। হাসানের ওপর এরপর তিনি চড়াও হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই চার মারার পরে আবারও উড়িয়ে মারতে যান। তবে হাসানের বিচক্ষণ স্লোয়ারে ব্যাটে-বলে সংযোগ করতে না পারায় মোহাম্মদ নাওয়াজের ক্যাচে ১৩ রান করে ফেরেন জাদেজা। শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে আফ্রিদির শিকার হয়ে প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আউট হন কোহলি, তার আগে অবশ্য ৪৯ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করে গিয়েছেন। শেষ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়াকে ফিরিয়ে হারিস রউফ ৭ রান গুনলে ভারত গিয়ে থামে ১৫১ রানে। অনবদ্য বাবর-রিজওয়ান জুটি অবশ্য সেই লক্ষ্যকে ছেলেখেলা বানিয়ে ভারতকে রীতিমত গুঁড়িয়ে দিয়ে বার্তা দিয়ে রাখল- জয় ছাড়া এবার তাদের পরিকল্পনায় কোনও বিকল্প নেই।