দক্ষিণ আফ্রিকার কোচিং স্টাফরা কী করছেন, প্রশ্ন মাশরাফির
একের পর এক বিতর্কে টালমাটাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বোর্ড সভাপতির চাঁছাছোলা কথার পর মাহমুদল্লাহ-মুশফিকের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় বইছে ক্রিকেটারদের নিয়ে। এর মধ্যেই মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রশ্ন তুললেন কোচিং স্টাফ নিয়ে। রাসেল ডমিঙ্গসহ বাকিরা কী করছেন, সেই প;রশ্ন সরাসরি তুলেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ শেষে স্টিভ রোডসের বিদায়ের পর বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ডমিঙ্গো। তার আগেই ফিল্ডিং কোচ হিসেবে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকারই রায়ান কুক, পরে ফিজিও হিসেবে যোগ দিয়েছেন আরেক দক্ষিণ আফ্রিকান জুলিয়ান কালেফিতো। বোলিং কোচ হিসেবে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করে যাওয়া ওটিস গিবসন। ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে আছেন আরেক প্রোটিয়া অ্যাশওয়েল প্রিন্স আর স্পিন পরামর্শক হিসেবে রঙ্গনা হেরাথ।
মাশরাফি বিশেষ করে প্রশ্ন তুলেছেন হেড কোচ ডমিঙ্গোকে নিয়ে। শ্রীলংকার সাথে ম্যাচের দশম ওভারের একটা ঘটনাকে এনেছেন সামনে। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, ‘ম্যাচের ৯.৪ ওভার ৭৯ রানে ওদের যখন ৪ উইকেট ঠিক তখন আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী পানিপানের বিরতি। তার মানে কোচ মাঠের ভিতর আসবে। আমাদের কোচও এসেছিল। তাহলে উনি এসে রিয়াদের সাথে কী কথা বলেছলেন?যদি বলে থাকে তাহলে কি সব দায় রিয়াদের? মানলাম অন ফিল্ড ক্যাপ্টেন কল ইজ ফাইনাল তবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ক্রাঞ্চ মোমেন্টে কি কোচ আলোচনা করেন না? কারণ ক্যাপ্টেন তখন বিভিন্ন বিষয়ে চাপে থাকে। তার প্লান কি জানতে চেয়েছিলো কোচ? আর যদি কথা হয়ে থাকে তাহলে কি কোচের প্রেস হ্যান্ডেল করা উচিত ছিল না?
আফিফসহ মাঝে পার্টটাইমার আনার কারণে অধিনায়কের সমালোচনার জন্য তার পাশে দাঁড়িয়েছেন মাশরাফি, ‘ ১১ নাম্বার ওভার করে মেহেদী যে দলের মুল বোলার। ১২ নাম্বার ওভার করে রিয়াদ সম্ভবত ৫/৬ রান দেয়। ১৩ নাম্বার ওভার করে আফিফ, যে ওভারে ১৫ রান হয়। কিন্তু রিয়াদ যে চিন্তা থেকে আফিফকে বলে এনেছিলো সেটাতেও কিন্তু সুযোগ তৈরি হয়েছিলো।যদি সুযোগ হাতছাড়া না হতো তাহলে আমরা বলতাম দারুন ক্যাপ্টেনসি।ক্যাচ মিসের অযুহাত না দিলেও এটাই সত্য ক্যাচ মিস এই প্রথম হয়নি। আর লিটন দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন। কোনো কোনো সময় ভাগ্যটাও সাথে থাকতে হয়।তাহলে স্রেফ দল সফল না হওয়ার কারণে এই দুজনকে এতোটা তুলোধুনো করা কতোটা ঠিক আমি শিওর না। আর ঠিক এ কারণেই আমার মনে হয়েছে, যদি কোচ এ বিষয়ে রিয়াদের সাথে কথা না বলে থাকে তাহলে তো ব্রেকের সময় দলের টিম বয়কেই মাঠে পাঠিয়ে দেওয়া যায় হাই-হ্যালো করতে। কোচের আর প্রয়োজন কী!
নাসুমকে শুরুতে বল করিয়ে পরে না আনার জন্যও কোচের দিকে আঙুল তুলেছেন মাশরাফি,’ ম্যাচের আগে উইকেট শুধু ক্যাপ্টেন এসেস করে না পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট সাথে থাকে। তাহলে টিম করার সময় চিন্তা করেছে উইকেট স্লো হবে যে কারণে তাসকিনকে বসিয়ে নাসুমকে খেলানো হলো।কিন্তু নাসুমকে পাওয়ার প্লের পর বোলিং করানো হলো না কারণ দুজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান উইকেটে। তাহলে আগেই চিন্তা করা উচিত ছিলো শ্রীলংকার টপ অর্ডারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বেশি। তার উপর মাঠের একপাশে মাত্র ৫৬ গজ। যখন নাসুমকে নেওয়া হয়েছে তাহলে ব্রেকের সময় কোচ রিয়াদকে কি বলেছে যে নাসুম দলের মুল বোলার ওকে ব্যাক করো। কারণ ঐ নাসুমই ব্রেকটা পরে দিয়েছে ততক্ষনে ম্যাচ প্রায় শেষ। তাহলেওই সময় কোচ কি বসে বসে কোন প্ল্যান না করে শুধু খেলা দেখেছে। আবারও বলছি সিদ্ধান্ত রিয়াদ নিবে কিন্তু ওকে তো হেল্প করতে হবে কারণ মাঠে ক্যাপ্টেন কখনও কখনও অসহায় হয়ে পড়ে।আর ঠিক তখনই টিম ম্যানেজমেন্ট কে টেকঅফ করতে হয়। অন্যান্য দলে তো তাই দেখি।
ক্যাচ মিস নিয়েও ফিল্ডিং কোচের দিকে আঙুল তুলেছেন মাশরাফি, ‘লিটনের ক্যাচ মিসের কোনো এক্সকিউজ দিব না এমনকি লিটন নিজেও দিবে না। তবে ক্যাচ মিস খেলার একটা অংশই। কিন্তু ফিল্ডিং কোচের কাছে কি এ বিষয় গুলো নিয়ে জানতে চাওয়া হয়? ক্যাচ মিস কি এই প্রথম হল? ।২০১৯ বিশ্বকাপের পর ম্যানেজমেন্ট এর প্রায় সবাই চাকরি হারিয়েছে স্রেফ বর্তমান ফিল্ডিং কোচ ছাড়া। তাহলে আমরা বিশ্বকাপে বা তারপর কি সেরা ফিল্ডিং সাইড হয়ে গিয়েছি? ’
পুরো দক্ষিণ আফ্রিকান স্টাফকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন, ‘এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার যেখানে সাউথ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচ গুলো একসাথে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে।এদের বাদ দেওয়া আরও বিপদ কারণ চুক্তির পুরো টাকাটা নিয়ে চলে যাবে। তাহলে কী দাঁড়াল? তারা যতোদিন থাকবে আর মন যা চাইবে তাই করবে? হেড কোচ এক এক করে নিজ দেশের সবাইকে আনছে এরপর যারা অস্থায়ী ভাবে আছে তাদেরও সরাবে আর নিজের মতো করে ম্যানেজমেন্ট সাজাবে।তাও মেনে নিলাম কিন্তু রাসেল(হেড কোচ)ম্যানেজমেন্ট এর জন্য যেভাবে স্টেপআপ করে মূল দলের জন্য তাহলে লুকিয়ে কেন? কেন তামিম, মুশফিক,রিয়াদ ভালো থাকেনা।এটা ঠিক করা কি তার কাজ না?
তারপরও দায় খেলোয়াড়দেরকেই নিতে হয়/হবে।এটাই স্বাভাবিক কারণ মাঠে তারাই খেলে কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে খেলোয়ারদেরকে সেরকম পরিবেশ করে দিতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে তাদের বিপদে কেউ পাশে না থাকুক অন্তত টিম ম্যানেজমেন্ট থাকবে।’
মাশরাফির মন্তব্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয়েছিল বোলিং কোচ গিবসনের কাছে। তিনি বলেছেন, ‘দলের বাইরে কে কী বলল এটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা শুধু নিজেদের কাজ নিয়েই ভাবছি।’