• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    ডি-কক ধাক্কা সামলে ডুসেন-মার্করামে পোলার্ডদের খাদের কিনারায় ঠেলে দিল প্রোটিয়ারা

    ডি-কক ধাক্কা সামলে ডুসেন-মার্করামে পোলার্ডদের খাদের কিনারায় ঠেলে দিল প্রোটিয়ারা    

    সুপার ১২, দুবাই (টস- দক্ষিণ আফ্রিকা/ বোলিং)

    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪৩/৮, ২০ ওভার (লুইস ৫৬, পোলার্ড ২৬, প্রিটোরিয়াস ৩/১৭, নরকিয়া ১/১৪

    দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪৪/২, ১৮.২ ওভার (মার্করাম ৫১, দুসেন ৪৩, আকিল ১/২৭)

    ফলাফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে জয়ী


    বিশ্বকাপ শুরুর আগে খেলোয়াড় থেকে বিশ্লেষকদের মধ্যে খুব কমেরই ফেবারিটের তালিকায় জায়গা পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন শুরুর কথা কেউ হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি। দুই ম্যাচ হার দিয়ে শুরু করলেও পোলার্ড-রাসেলদের হারের ধরনটাই ছিল দৃষ্টিকটু। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ক্রিজে টিকে থাকাটা দরকার ছিল, সেদিন কেউ পারেনি। আজ সিমোন্স থেকে গেছেন একেবারেই খোলসে বন্দী। প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে আজ ১৪৩ রানেই থেমে গেছে ক্যারিবিয়ানরা। দক্ষিণ আফ্রিকাও এ ম্যাচে এসেছিল এক ম্যাচ হেরে, হেনড্রিকসের চতুর ব্যাটিংয়ের পর মার্করামের দারুণ ঝড়ো ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া লক্ষ্য তারা সহজেই তাড়া করে পেয়ে গেছে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের দেখা। 

    অবশ্য ব্যক্তিগত কারণে এ ম্যাচ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ডি কককেও পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। তার উপর ১৪৪ রানের লক্ষ্যতাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা খেয়ে যায় তারা। রাসেলের দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোতে ৩ রানে ফিরতে হয় বাভুমাকে। তবে ডি ককের অনুপস্থিতি খুব একটা বুঝতে দেননি রেজা হেনরিকস। দক্ষিণ আফ্রিকা পাওয়ারপ্লেতে যদিও ৪২ রানের বেশি আনতে পারেনি। তবু সিঙ্গেল-ডাবলসের পাশাপাশি সুযোগেই বাউন্ডারি খুঁজে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন হেনড্রিকস। এরপর আরেকটি দুর্দান্ত ফিল্ডিং প্রদর্শনীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে ফিরে আসে। হেটমায়ারের অসামান্য ডাইভিং ক্যাচে হেনড্রিকসকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় ৩০ বলে ৩৯ রানে। 

    ১০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ৬৬, দুসেন তখন ছিলেন ২৬ বলে ১৯ রানে। দুসেন স্লো ব্যাটিং করলেও মার্করাম আস্কিং রেট নাগালের বাইরে যেতে দেননি। টানা তিন ডাবলের পর ওয়ালশকে মারার পরে পোলার্ডকে মারেন আরেকটি ছয়, সেই দুই ওভারে ২৭ রান এলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচ থেকে বলতে গেলে ছিটকেই যায়। ক্যারিবিয়ানদের মুমুর্ষ আশা এরপর জীবিত হয় ব্রাভোর ১ রানের ওভারে। রামপালের পরের ওভারে মার্করাম আবার ছক্কা হাঁকান, সে ওভারে মোট ১১ রান এলে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সমীকরণ হয়ে যায় একেবারেই সহজ- ৩০ বলে ৩৩ রান। ব্রাভোর পরের ওভারে পরপর দুই বলে দুসেন দুই চার মারলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় শুধু সময়ের ব্যপারই হয়ে দাঁড়ায়। মার্করাম ২৬ বলে ফিফটির পথে এগিয়ে নিয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকা, ১০ বল হাতে রেখেই তাই তারা জিতে যায়।

    দুবাইয়ের এই পিচে ভালো স্কোর কত হতে পারে, সেটা নিশ্চিত না হতে পারায় বাভুমা টস জিতে অপরপক্ষের উপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন লক্ষ্য দেওয়ার দায়িত্ব। ইংল্যান্ডের মতো এদিন দক্ষিণ আফ্রিকাও শুরু করেছিল অফ স্পিন দিয়ে। এবারও তাতে ফেঁসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মার্করামের প্রথম দুই ওভারে এক মেডেনে মোট ৪ রানের মাঝখানে রাবাদাও এক রানে তার ওভার শেষ করেছেন। তিন ওভারে মতার ৬ রানে চাপে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্ত পরের ওভারে এলেমেলো বোলিংয়ে লুইসের হাতে রাবাদা চার-ছয় খেলে সেই চাপ কিছুটা দুরীভত হয়ে যায়। অপর প্রান্তে যদিও সিমন্স তখন ভুগছিলেন ১১ বলে ৪ রানে। লুইসের তাই আক্রমণের পথ বেছে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। মার্করামের ওভারে পরপর তিন বলে তিন বাউন্ডারিতে মোট আসে ১৮ রান। তিন ওভার শেষে ৯ বলে ১ রানে থাকা লুইস পাওয়ারপ্লে শেষে তার স্কোর নিয়ে যান ২২ বলে ৩৫ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাওয়ারপ্লে শেষ করতে পারে ৪৩ রানে। 

    পাওয়ারপ্লের পরেও যদিও লুইসের সঙ্গী সিমোন্স কিছুতেই কিছু করতে পারছিলেন না, নরকিয়া-মাহরাজ-শামসিদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে পুরো ইনিংসেই ভুগেছেন। তবে সেভাবে ঝুঁকি নিয়ে শট খেলার চেষ্টাও করতে দেখা যায়নি সিমোন্সকে। স্ট্রাইক রোটেটে চেষ্টায়ও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। ১৩ বলে ৪ রানে জীবন পেয়েছিলেন উইকেটের পিছনে ক্লাসেনের ক্যাচ মিসে। শেষমেশ.তার ৩৫ বলে ১৬ রানের সে ‘অদ্ভুত’ ইনিংসের সমাপ্তি ঘটেছে রাবাদার লেগ কাটার মিস করে বোল্ড হয়ে।

    সিমোন্সের ধীরগতির ব্যাটিং পুষিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছেন লুইস। ৩২ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর বিধ্বংসী হওয়ার ইঙ্গিত দিলেও মাহরাজের বলে স্কোয়ার লেগে রাবাদার হাতে ধরা খেয়ে তাকে থামতে হয়েছে ৫৬ রানে। পোরান এসেও আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছেন শুরু থেকেই, তবে টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ৭ বলে ১২ রানে পোরান আউট হওয়ার পর পোলার্ডের সাথে গেইলও সময় নিয়েছেন। তবে গেইলও পারেননি ১২ রানের বেশি করতে। গেইলের পর প্রিটোরিয়াস ২৬ রানে আম্পায়ারের পেছনে থেকে দুসেনের দুর্দান্ত লো ক্যাচে ফিরিয়েছেন পোলার্ডকেও। রাসেল, হেটমায়াররাও একে একে ফিরে গেছেন। রাবাদা-নরকিয়া-প্রিটোরিয়াসের চতুর ও ক্ল বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ সাত ওভারে নিতে পারে মাত্র ৫৩ রান। শেষমেশ তারা ১৪৩ রানের পুঁজি গড়তে সমর্থ হয়। যা ডিফেন্ড করতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্বকাপে তাদের সেমিফাইনালের আশাও এখন দুরাশার পথে!