স্কটল্যান্ড-বধে নতুন ইতিহাস গড়ে নামিবিয়া-রূপকথা চলছেই
সুপার ১২, আবুধাবি (টস- নামিবিয়া/ বোলিং)
স্কটল্যান্ড ১০৯/৮, ২০ ওভার (লিস্ক ৪৪, গ্রিভস ২৫, ট্রাম্পেলম্যান ৩/১৭, ফ্রাইলিংক ২/১০)
নামিবিয়া ১১৫/৬, ১৯.১ ওভার (স্মিট ৩২, উইলিয়ামস ২৩, লিস্ক ২/১২)
ফলাফলঃ নামিবিয়া ৪ উইকেটে জয়ী
স্বপ্নের সময়ই পার করছে নামিবিয়া। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে এসেই সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়েছে। সেই যাত্রায় হারিয়ে এসেছে নেদারল্যান্ডস ও আয়ারল্যান্ডকে। স্কটল্যান্ডও আগে থেকেই বিশ্বকাপে খেললেও মুল পর্বে এবারই প্রথম। তবে সুপার টুয়েলভের কঠিন গ্রুপে জয়ের জন্য যে ম্যাচে নজর দিবে দুই দল, সেটি এ ম্যাচেই। তবে সবশেষে বিজয়ী যে হবে একটি দলই! ট্রাম্পেলম্যানের ধাক্কা সামলে স্কটিশরা ১০৯ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল নামিবিয়াকে। যা তারা পেরিয়ে গেছে ৫ বল হাতে রেখেই। টানা তিন ম্যাচ হারের পর তাই টানা দ্বিতীয় হারের স্বাদ পেল স্কটল্যান্ড।
এই রানে রুখবার জন্যে স্কটল্যান্ডের শুরুতেই উইকেট দরকার ছিল। সেটি যখন তারা পেল, তখন পেরিয়ে গেছে পাঁচটি ওভার। তাতে অবশ্য রান আসেনি ২৬ এর বেশি। ভ্যান লিঙ্গেন এদিন প্রমোশন পেয়ে ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন, তাকে এদিন শুরুতে খোলসে বন্দী রেখেছেন ড্যাবি-শরিফরা টাইট লাইন-লেংথে বল করে। ১৯ বলে ৮ রানে ছিলেন একসময়, পরের চার বলে এরপর ১০ রান এনে শরিফের বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে ফিরে গেছেন ১৮ রানে। পরপর দুই বলে তার ব্যাট থেকে আসা দুই চারই ছিল পাওয়ারপ্লেতে নামিবিয়ার দুই বাউন্ডারি। পাওয়ারপ্লেতে ২৯ রান আনা নামিবিয়া এরপর দ্রুতগতিতে রান তুলতে না পারলেও নাগালের বাইরে যাচ্ছিলো না আস্কিং রেট, থেকেছে ছয়ের নিচে। কোন পক্ষের জয়ের পাল্লাই তাই ভারী ছিল না খুব একটা।
১০ ওভার শেষে নামিবিয়ার রান ছিল ৫৬। উইলিয়ামস ছয় মেরে যখন লক্ষ্যতাড়ার দিকে এগুচ্ছিলেন, এরপরের বলেই আবার তারই পথ অনুসরণ করে ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে মারতে গিয়ে ওয়াইড লং অফে ধরা খেয়ে ৯ রানে ফিরে যান গ্রিন। তবে ৬ রানের ব্যবধানেই নামিবিয়া দুই উইকেট হারালে কিছুটা চাপে পড়ে যায় তারা। অবশ্য ম্যাচে ফিরে আসলেও স্কটল্যান্ডের জয়ের পুর্বশত হয়ে দাঁড়িয়েছিলো তখন ডাভিড উইসার উইকেট। কিন্ত উইসাকে দর্শকই বানিয়ে দিলেন স্মিট। ৬৭ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর নেমেছিলেন, এরপর উইসা অপর প্রান্তে থেকে দেখলেন, স্মিট চার-ছয় মেরে জয় সহজ করলেন।
অবশ্য বেরিংটোনের আফসোস থাকতে পারে, ৬ ওভারে যখন লাগত ৩৫ রান, তখন তিনি আগেই দুর্দান্ত বল করা বাঁহাতি স্পিনার ওয়াটের বদলে শরিফকে এনেছিলেন। শরিফের ওভারে ১০ রানের পর গ্রিভস ৮ রান দিলে নামিবিয়ার দরকার ছিল ২৪ বলে ১৭ রান। উইসা এক ছয়ে ১৬ রানে আউট হয়ে গেলেও ২৩ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থেকে ৫ বল হাতে রেখেই জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন স্মিট।
ইনজুরিতে এ ম্যাচে স্কটল্যান্ড মাঠে নামার আগেই হারিয়েছে তাদের অধিনায়ক কোয়েটজারকে, তার বদলে অধিনায়ক হয়ে মাঠে নামার পর বেরিংটনের টসে হার দিয়ে শুরু। সেই যে হারের শুরু! এরপর প্রথম বলেই ইনসাইড এজে বোল্ডে জর্জ মানসিকে হারিয়েছে স্কটল্যান্ড, একে একে সেই ওভারেই মানসির মতো প্যাভিলিয়নের পথে হাটলেন আরও তিন স্কটিশ ব্যাটসম্যান। ট্রাম্পেলম্যান সুইংয়ের দেখা পেয়েছেন শুরু থেকেই, বল ভেতরে ঢুকিয়ে স্কটিশদের জন্য ‘আতঙ্ক’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। বাঁহাতি এই পেসারের গুড লেংথের বলে কিপারের হাতে ম্যাকলয়েড ক্যাচ দেওয়ার পর বেরিংটনও ভেতরে ঢুকা বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েছেন।
শুরুতেই তিন ব্যাটসম্যানকে শূন্য রানে হারিয়ে স্কটল্যান্ড যেন পড়ে গিয়েছিল বিপদের মহাসাগরে! সেখান থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করে গেছেন ক্রস ও কোয়েটজারের জায়গায় সুযোগ পাওয়া ওয়ালেস। তবে নামিবিয়ার বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে স্কটিশদের জন্য রান যেন হয়ে গিয়েছিল ‘দূর সম্পর্কের আত্মীয়’! পাওয়ারপ্লেতে স্কটল্যান্ড যে দুটি চারের দেখা পেয়েছিল, তাতেও আছে ভাগ্যের ছোঁয়া! ২৮ বল পরে স্কটল্যান্ড এজে প্রথম বাউন্ডারির পর দ্বিতীয়টাও পেয়েছে এজে! পাওয়াপ্লের শেষ ওভারে এসে উইসা ওয়ালেসকে এলবিডব্লিউয়ে শিকার করলে স্কটিশদের দুর্দশা বেড়ে যায় আরও! স্কটল্যান্ড সমর্থকদের মনে হয়তো তখন হয়তো আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬০ রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড ভেঙ্গে দেওয়ার ভয় উঁকি দিয়েছিল। কিন্ত সেটা তাড়িয়ে দিয়েছেন ক্রসের সাথে মিলে লিস্ক দারুণ ব্যাটিংয়ে।
পাওয়ারপ্লেতে ২২ রান আনা স্কটল্যান্ড পরের পাঁচ ওভারে ৩৫ রান এনে লড়াকু স্কোরেই চোখ রাখছিল। পরের ওভারেই ফ্রাইলিংকের দারুণ স্লোয়ারে এতক্ষণ এক প্রান্তে পড়ে থাকা ক্রস ৩৩ বলে ১৯ রানে আউট হয়ে গেলেও শেষমেশ স্কটল্যান্ড ১০৯ রানের পুঁজি গড়তে সমর্থ হয়েছিল। তাতে অবদান অবশ্যই লিস্ক ও গ্রিভসের। ৩৯ রানের জুটিতে সঙ্গী ক্রসকে হারালেও লিস্ক ২৭ বলে ৪৪ রান করেই তবে থেমেছেন। মাঝখানে গ্রিভসের সাথে গড়েছেন ৩৬ রানের জুটি। বাংলাদেশের বিপক্ষেও স্কটল্যান্ডের বিপদে সহায় হয়েছিলেন গ্রিভস, এদিনও এ লেগ স্পিনার করেছেন ২৫টি রান। তবে শেষ পর্যন্ত ১০৯ রানের পুঁজিতে নামিবিয়াকে রুখতে ব্যর্থ হয়ে তাকে পরাজিত দলেই থাকতে হলো।