• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    ডি ককের 'ক্ষমা প্রার্থনা', বললেন অংশ নেবেন প্রতিবাদে

    ডি ককের 'ক্ষমা প্রার্থনা', বললেন অংশ নেবেন প্রতিবাদে    

    ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যাপারে অবশেষে মুখ খুলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার-ব্যাটার কুইন্টন ডি কক। হাঁটু গেড়ে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে শামিল না হওয়ায় সতীর্থ এবং ভক্তদের কাছে ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। জানিয়েছেন, পরবর্তী ম্যাচগুলোতে এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে হাঁটু গেড়ে বসবেন।

    ‘আমি আমার সতীর্থ এবং দেশের সমর্থকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে শুরু করতে চাই। আমি কখনোই এটিকে নিজের ব্যক্তিগত বিষয় বানাতে চাইনি। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার গুরুত্ব আমি বুঝতে পারি, এবং খেলোয়াড় হিসেবে উদাহরণ সৃষ্টি করার দায়িত্ববোধও অনুধাবন করতে পারি’,বিবৃতির শুরুতে জানান কুইন্টন। 

    পরবর্তী ম্যাচগুলোতে এই প্রতিবাদে সামিল হবার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদে যদি অন্যরা এ ব্যাপারে শিক্ষা পায়, জীবন নিয়ে উপলব্ধি তাদের আরও ভালো হয়, তবে আমি স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গেই এই প্রতিবাদে অংশ নেব’।

     

    কুইন্টন ডি ককের বিবৃতির বাকি অংশের অনুবাদ পড়ে নিন এখান থেকে-


    ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে না নেমে কোনভাবেই আমি কাউকে অসম্মান করতে চাইনি, বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলের কাউকে তো অবশ্যই নয়। অনেকে হয়তো বুঝতে পারছেন না যে মঙ্গলবার সকালে ম্যাচের আগে আমাদের এ ব্যাপারে আচমকাই জানানো হয়েছিল।

    আমার কারণে যে মনোকষ্ট, বিভ্রান্তি ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, সে জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

    এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমি এতদিন চুপ ছিলাম। আমি উপলব্ধি করছি এ বিষয়ে আমার কিছুটা ব্যাখা দেওয়া প্রয়োজন।

    যারা এখনোও জানেন না তাদের জন্য, আমি মিশ্র বর্ণের এক পরিবারের সন্তান। আমার সৎ বোনেরা ভিন্ন বর্ণের, আর আমার সৎ মা একজন কৃষ্ণাঙ্গ। কালোদের জীবন অস্তিত্ব আমার জন্ম থেকেই গুরুত্ব বহন করে আসছে, শুধুমাত্র কোন আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের কারণে নয়। 

    মানুষে মানুষে অধিকার এবং সমতা যে কোন ব্যক্তিবিশেষের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    সবার সমান অধিকার আছে- এমন শিক্ষা নিয়েই আমি বড় হয়েছে, এবং সেগুলো প্রয়োজনীয়।

    আমার মনে হয়েছে আমার অধিকার খর্ব হচ্ছে যখন বলা হয়েছে এই প্রতিবাদে আমাদের ঠিক এই নিয়ম মেনেই শামিল হতে হবে।

    গতকাল রাতে বোর্ডের সঙ্গে আবেগপ্রবণ এক সাক্ষাতের পর তাদের উদ্দেশ্য আমাদের কাছে আরো ভালোভাবে বোধগম্য হয়েছে বলেই মনে করছি। এটাই আফসোস, বিষয়টি আগে পরিষ্কার হলে ম্যাচে যা হয়েছে তা এড়ানো যেত।

    আমি জানি আমাকে উদাহরণ রেখে যেতে হবে। আমরা যেটা ভালো মনে করছি সেটা বুঝে সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা আমাদের বোর্ড থেকে দেওয়া হয়েছিল।

    আমি নিজের বিশ্বাস নিজের কাছেই রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং নিজের পরিবার-দেশের জন্য হয়ে খেলার গৌরবের কথা চিন্তা করি।

    আমি বুঝতে পারিনি কেন এই প্রতীকী উপায়ে আমাকে প্রমাণ করতে হবে, যেখানে প্রতিদিন, সবধনের মানুষের সঙ্গে আমি চলি, তাদের থেকে শিখি এবং ভালোবাসি। কোন ধরনের আলোচনা ছাড়াই যখন এভাবে কিছু করতে বলা হয়, আমার মনে হয়েছে এভাবে এই প্রতিবাদ তার অর্থ হারায়। আমি যদি বর্ণবাদী হতাম, আমি চাইলেই হাঁটু গেড়ে বসতাম এবং এ ব্যাপারে মিথ্যা বলতাম, যেটা ভুল এবং কোনভাবেই এটি সহনশীল একটি সমাজ গঠনে কোন ভূমিকা রাখে না।

    যারা আমার সঙ্গে বড় হয়েছে, আমার সঙ্গে খেলেছে- তারা জানে আমি কেমন মানুষ।

    ক্রিকেটার হিসেবে এমন কোন বাজে নাম নেই যেটা বলে আমাকে ডাকা হয়নি। ‘অথর্ব’, ‘নির্বোধ’, ‘স্বার্থপর’, ‘অপরিণত’ আরো কত কিছু। তাতে আমি কষ্ট পাইনি। কিন্তু একধরণের ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমাকে বর্ণবাদী বলাটা আমাকে প্রচণ্ড কষ্ট দিয়েছে।

    এটা আমার পরিবারকে কষ্ট দিয়েছে। আমার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে কষ্ট দিয়েছে।

    আমি বর্ণবাদী নই, আমার মনের গভীরতা থেকে আমি এটা জানি। এবং যারা আমাকে চেনে তারাও জানে

    আমি লেখক নই। তবুও আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমি কতটা ব্যথিত এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ‘ব্যক্তিগত ব্যাপার’ বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য।

    বিষয়টি এমন নয়।

    মিথ্যে বলব না, আমি অবাক হয়েছিলাম এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে এরকম একটা নির্দেশনা আসা যেটা আমাদেরকে মানতেই হবে, তাও কঠোর এক শর্তের সঙ্গে। আমার মনে হয়না এ ব্যাপারে আমিই একা এমন বোধ করেছি।   

    আমাদের ক্যাম্প হয়েছে, সেশন হয়েছে। আমাদের জুম মিটিং হয়েছে। আমরা জানি কোথায় আমরা দাঁড়িয়ে। আমরা সংঘবদ্ধ।

    আমি আমার প্রত্যেক সতীর্থকে ভালোবাসি, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ক্রিকেট খেলতে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।

    আমার মনে হয় এটা সবার জন্য ভালো হত যদি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এ বিষয়ে আমরা একটা সমাধানে পৌঁছাতাম।

    আমরা আমাদের কাজে মনোনিবেশ করতে পারতাম, আর সেটা দেশের জন্য ক্রিকেট ম্যাচ জেতা।

    সবসময়ই কোন না কোন নাটক হয় যখনই আমরা বিশ্বকাপ খেলতে আসি। এটা ঠিক নয়।

    আমি শুধু আমার দলের সতীর্থদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, বিশেষ করে আমার ক্যাপ্টেন টেমবাকে [বাভুমা]। মানুষ হয়তো বুঝতে পারে না, কিন্তু সে চমৎকার একজন নেতা।

    যদি সে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা দল আমাকে নেয়, আমি আমার দেশের হয়ে আবার ক্রিকেট খেলতেই সবচেয়ে আনন্দবোধ করবো।