'একজন অফ ফর্মের ক্রিকেটারকে জোর করে খেলানো ঠিক নয়'
পর পর দুই ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ এখন মুখোমুখি ওয়েস্ট-ইন্ডিজের। তার আগে ইমরুল কায়েস কথা বললেন দলের অবস্থা, অধিনায়ক-ম্যানেজমেন্টের দায়, এই পরিস্থিতিতে করণীয়সহ আরও অনেক কিছু নিয়ে
ওয়েস্ট ইন্ডিজ মরিয়া থাকবে
দুইটা দলই এখন একটু কোণঠাসা আছে। একদিক দিয়ে আমাদের জন্য সমস্যা হচ্ছে, আমরা ভালো ফর্মে নেই। আবার সবাই জানে ওয়েস্ট ইন্ডজ টি-টোয়েন্টিতে সেরা দলগুলোর একটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা তাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারেনি। অবশ্য তাদের এখন যে অবস্থা, তারাও চাইবে ম্যাচ জেতানোর জন্য। কিছুটা মরিয়াই থাকবে। যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমরা এর আগে হোম-অ্যাওয়েতে হারিয়েছি। ওই সময় তারা কিন্তু প্রোপার টিম হিসেবে ছিল না, যেটা এখন তারা আছে। আমি বলব, বাংলাদেশের এখন যে অবস্থা তাতে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজও অনেক বড় হুমকি হয়ে যেতে পারে। দুইটা দলের অবস্থাই যেহেতু খারাপ, তারপরও দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ। আমাদের জন্য কঠিন একটা ম্যাচই অপেক্ষা করছে।
বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন
আমাদের তো মূল শক্তি হচ্ছে আমাদের স্পিন আক্রমণ। ব্যাপারটা হচ্ছে, ওদের এক থেকে নয় পর্যন্ত সব বিগ হিটার। ওরা স্পিনের বিপক্ষে সহজেই বড় হিট করতে পারে।আমাদের জমোস্তাফিজ যদি খুব ভালো কিছু না করে তাহলে পেসে আমাদের জন্য অঠিন। আবার লুইস ফর্মে আছে। অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা আমাদের চেয়ে ভালো ছিল, ওদের ব্যাটসম্যানরা সেই দুই ম্যাচে ভালো করতে পারেনি। কিন্তু আমাদের বোলাররা যদি সেরকম ভালো কিছু করতে না পারে তাহলে তাদের জন্য কাজটা কঠিন হবে।
স্পিনিং ট্র্যাক হবে বলে মনে হয় না
আমার কাছে মনে হয়, প্রপার স্লো উইকেট থাকলে খেলাটা বাংলাদেশের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাকিব-মাহেদী-নাসুম ভালো কিছু করতে পারলে ওদের কম রানে আটকে রাখা সম্ভব। সমস্যা হচ্ছে, আইসিসির উইকেট পুরোপুরি স্পিনিং ট্র্যাক হয় না। আইপিএলের সময় আমরা দেখেছিলাম শারজায় বল কিছুটা ধরছে। কিন্তু তারা কিন্তু এই ব্যাপারটা ঠিক করে ফেলেছে। আমার কাছে মনে হয় না অতটা স্পিন ট্র্যাক হবে। সেরকম হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য কমফোর্টেবল হবে।
ভুল ধারণা থেকে বের হতে হবে
আমাদের কিছু ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আগে এই ব্যাপারগুলো কিন্তু ছিল না। এই যে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন লাগবে, এটা কিছুদিন থেকে শুনে আসছি। কিন্তু আইসিসি টুর্নামেন্টে দেখলাম সবাই হয় লেফট হ্যান্ড বা রাইট হ্যান্ড দিয়ে ভারি। ভারত-পাকিস্তান এত বড় দল, তাদের দুই দলেই তো ডানহাতি ব্যাটসম্যান ওপেনিং করে। এদের মতো দল যদি এটা করতে পারে, তাহলে আমাদের সমস্যা কোথায়? আমরা যতদিন এই ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তা করব, যে ডানহাতি-বাঁহাতি লাগবে বা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে বাঁহাতি স্পিনার বল করতে পারবে না ততদিন ভালো কিছু হবে না। হয়তো এই ম্যানেজমেন্ট এগুলো নিয়ে এভাবে ভাবছে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট তো এই ম্যানেজমেন্টের আগেও অনেকে ছিল। তখন তো আমরা এরকম দেখিনি।
অফ ফর্মে থাকা একজনকে খেলানো ঠিক নয়
আমি আগেই বলেছি, একটা ব্যাটসম্যান (লিটন) যখন অফ ফর্মে থাকে তখন তাকে টানা খেলিয়ে যাওয়া দলের সঙ্গে তার জন্যও খারাপ। এখন তার টেকনিক্যাল সমস্যা না থাকলেও মানসিকভাবে সে অনেক বেশি পিছিয়ে থাকে। এই সময়ে তাকে বিশ্রাম দিতে হবে। তার জায়গায় কেউ আসলে পারবে না সেই চিন্তা ঠিক নয়। এখানে গোঁ ধরে থাকা ঠিক নয়। সুযোগ দেওয়া না হলে আরেকজনের সঙ্গেও এ ক্ষেত্রে অবিচার করা হয়।
হুট করে কেন শরিফুলকে নামানো হলো?
একটা নতুন ছেলেকে যখন আপনি খেলাবেন তখন প্রথম থেকে কেন তাকে তৈরি করলেন না? তাকে তো আপনার অনুশীলন ম্যাচে খেলানো উচিত। বুঝতে হবে সে ভালো কিনা। সমস্ত ম্যাচে আপনি খেলালেন তাসকিনকে, কিন্তু মূল ম্যাচে নামিয়ে দিলেন শরিফুলকে। আমি শরিফুলের বিপক্ষে বলছি না। কিন্তু আপনি শুরু থেকে একজনকে না খেলিয়ে হুট করে নামিয়ে দেওয়া প্রসেস না। আমি জানি না, তাসকিন চোটে আছে কি না। যদি না থাকে তাহলে না খেলানোয় অবাক হয়েছি।
ম্যানেজমেন্ট কেন দায়িত্ব নেবে না?
সব দায়িত্ব খেলোয়াড়দের না। একটা দল মানে ফ্যামিলি, সেখানে খেলোয়াড় ছাড়াও কোচিং স্টাফসহ অনেকে থাকে। ম্যাচ জেতার পর শুধু খেলোয়াড়কেই কেন আসতে হবে? তারা মাঠে খেলছে, হারার পর মানসিকভাবে হতাশ থাকে, নানান রকম কথা তাদের কানে আসে। সবাই জানে আময়া আবেগী, সবাই আশা করে দল জিতবে। এই সময়ে যদি সামনে প্লেয়ারদের পাঠিয়ে দেন তাহলে ভালো কিছু হবে না।। ওই সময়ে যদি কোচিং স্টাফের কেউ দায়িত্ব না নেয় তাহলে কখন নেবে? আপনি ফিল্ডিং নিয়ে প্রশ্ন তুললে ফিল্ডিং কোচকে আনলেন না কেন? আপনার ডেথ ওভারে বা শুরুতে বোলিং ভালো হচ্ছে না, তখন বোলিং কোচ কেন আসবে না? সব কেন খেলোয়াড়দের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে?