সুযোগ হাতছাড়ার ভূতুড়ে এক ম্যাচে আবার 'হৃদয়' জিতলেন মাহমুদউল্লাহরা
সুপার ১২, শারজাহ (টস- বাংলাদেশ/ বোলিং)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪২/৭, ২০ ওভার (পুরান ৪০, চেজ ৩৯, হোল্ডার ১৫*, শরিফুল ২/২০, মাহেদী ২/২৭, মোস্তাফিজ ২/৪৩ )
বাংলাদেশ ১৩৯/৫, ২০ ওভার (লিটন ৪৪, মাহমুদউল্লাহ ৩১*, সৌম্য ১৭, হোল্ডার ১/২২, আকিল ১/২২, রামপল ১/২৫)
ফলাফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ রানে জয়ী
শেষ বলে গড়ানো রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে স্নায়ু ধরে রেখে ৩ রানের জয় নিয়ে টুর্নামেন্টে ফিরে আসল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোলিং নিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা দারুণ হলেও পুরানের ৪০ রানের ঝড়ের পর জেসন হোল্ডারের ৫ বলে ১৫* রানের ক্যামিওতে ১৪২ রানের সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের শুরুটা হতাশাজনক হলেও লিটন দাস ম্যাচে রেখেছিলেন দলকে। শেষ দিকে হাত খুলতে হলেও ৪৪ রানে তিনি ফেরার পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ২৪ বলে ৩১* রান করলেও আন্দ্রে রাসেলের দারুণ শেষ ওভারে শেষ হাসি হাসে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরাই।
১৪৩ রানের লক্ষ্য শারজাহর পিচে মুহূর্তের মধ্যেই কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ইনজুরি বা শারজাহতে এই লক্ষ্যতাড়া-কারণ যাই হোক, এদিন মোহাম্মদ নাঈমের সাথে সাকিব আল হাসানকে ওপেন করানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ফাটকাটা মোটেও কাজে আসেনি। আন্দ্রে রাসেলের ৪র্থ ওভারে আগের বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েই নাঈম বেঁচে গেলেও বাঁচেননি সাকিব, ৯ রানেই জেসন হোল্ডারের ক্যাচে ফিরতে হয় তাকে। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে হোল্ডারের নিরীহ বল স্টাম্পে ডেকে এনে নাঈমও ফিরলে বাংলাদেশ তুলতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমান ২৯ রান।
এদিন চারে নামা সৌম্য সরকার এরপর লিটন দাসের সাথে জুটি বেঁধে বিপদ সামলানোর চেষ্টা করছিলেন। তবে আকিল হোসেনের বলে চার মারার পরের বলেই ব্যাটের কানায় লেগে ক্রিস গেইলের মুঠোয় বল চলে গেলে ১৩ বলে ১৭ রান করে থামেন তিনি। উইকেটে এসে এরপর ক্ষণস্থায়ী ইনিংস শেষে সেই স্কুপ খেলতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম।
এক প্রান্ত আগলে রেখে নিয়মিত প্রান্ত বদল করে যাচ্ছিলেন লিটন। লিটন বাউন্ডারির খোঁজে হন্যে হয়ে উঠলেও মাহমুদউল্লাহ তার সাথে যোগ দিয়ে পাচ্ছিলেন বাউন্ডারির দেখা। শেষ দুই ওভারে লিটনকে তাই হাত খুলতেই হত। ব্রাভোর করা ১৯তম ওভারের শেষ বলে ছয়ের খোঁজে শট খেললেও লং অনে হোল্ডারের লম্বা হাত ফাঁকি দিতে পারেননি, ফেরেন ৪৩ বলে ৪৪ রান করে। শেষ ওভারে ১৩ রান দরকার হলে রাসেলের দারুণ বোলিংয়ে মিসফিল্ডিং সত্ত্বেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়ে যায় ৩ রানের জয়।
এর আগে এদিন শারজাহর মন্থর পিচে মাহমুদউল্লাহর বোলিংয়ের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ বোলাররা। তৃতীয় ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমানের শিকার হয়ে ফিরে যান আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ফিফটি পাওয়া এভিন লুইস। এদিন ওপেন করার সুযোগ পেলেও অপর প্রান্তে ধুঁকতে থাকেন ক্রিস গেইল। সেই চাপেই মাহেদী হাসানের আর্ম বলে স্টাম্প খুইয়ে পঞ্চম ওভারে ফিরে যান তিনিও। আঁটসাঁট বোলিংয়ে কাবু ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাই পাওয়ারপ্লেতে তুলতে পারে ২৯ রান।
পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই এদিন অভিষিক্ত রসটন চেজকেও ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মাহেদী, ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিলেও ফিরতি ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি তিনি। তবে পরের বলেই প্রতি আক্রমণের নেশায় মত্ত শিমরন হেটমায়ারকে ফিরিয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পান তিনি। এর আগে হ্যামস্ট্রিং ধরে মাঠ ছারায় সাকিব আল হাসানকে নিয়ে শঙ্কা জাগ্লেও দশম ওভারে আক্রমণে আসেন তিনি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুর্দশা আরও বাড়ে তাসকিন আহমেদের করা ১৩তম ওভারে। হঠাৎই কোনও এক অজানা কারণে মাঠ ছেড়ে যান কাইরন পোলার্ড মাঠ ছেড়ে যান। ঠিক পরের বলেই চেজের সজোরে মারা শট অপর প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দেওয়ার আগে তাসকিন পা লাগালে ডায়মন্ড ডাকের শিকার হয়ে ফেরেন আন্দ্রে রাসেল। পরের ওভারে ভাগ্যের চাকা ঘুরে গিয়ে এবার অবশ্য বেঁচে যায় ক্যারিবিয়ানরাই। সাকিবের বলে মাহেদী অত্যন্ত সোজা ক্যাচ ফেলে দিয়ে তিনি আরও একবার সুযোগ দেন সেই চেজকেই। পরের বলেই উইকেটে নবাগত নিকোলাস পুরানকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখে বিচক্ষণতার সাথে লেগ স্টাম্পের বাইরে বল করেন সাকিব। তবে এই দিন নুরুলের অনুপস্থিতিতে উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব পাওয়া লিটন দাস সেই সুযোগ নিতে পারেননি।
নাটকীয় দুই ওভার শেষে মোস্তাফিজের করা ১৫তম ওভারে ১৪ রান নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জীবন পেয়ে পুরান এরপর বাংলাদেশি স্পিনারদের জীবন বিষিয়ে তোলেন। সাকিব-মাহেদীদের ওপর চড়াও হয়ে ৩টি ছয় আসে তার ব্যাট থেকে। ছুটতে থাকা পুরান ২২ বলে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস শেষে এরপর থামেন শরিফুল ইসলামের বলে ডিপ কাভারে মোহাম্মদ নাঈমের হাতে ক্যাচ দিয়ে। দারুণ অফ কাটারে স্টাম্প খুইয়ে পরের বলেই ফেরেন ৪৬ বলে ৩৯ করা চেজ। দারুণ ওভার করা শরিফুল ঐ ওভারে পেতে পারতেন আরও একটি উইকেট, উইকেটে আসা জেসন হোল্ডারের সহজ ক্যাচ আফিফ হোসেন ফেলে দিলে তাকে হতাশ হয়েই ফিরতে হয় তাকে। শেষ ওভারে প্রথম বলেই ডোয়াইন ব্রাভোকে মোস্তাফিজ ফেরালেও হোল্ডার তুলে নেন টানা দুই ছয়। উইকেটে ফেরা পোলার্ডও শেষ বল মাঠছাড়া করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পায় ১৪২ রানের সংগ্রহ। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে সেই সংগ্রহই দিনশেষে যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায় পোলার্ডদের জন্য।