• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    আসিফ আলীর শেষের ম্যাজিকে আফগানদের স্বপ্ন ভেঙে তিনে তিন পাকিস্তানের

    আসিফ আলীর শেষের ম্যাজিকে আফগানদের স্বপ্ন ভেঙে তিনে তিন পাকিস্তানের    

    সুপার ১২, দুবাই (টস-আফগানিস্তান/ ব্যাটিং)

    আফগানিস্তান ১৪৭/৬, ২০ ওভার (নাবি ৩৫, নাইব ৩৫, ইমাদ ২/২৫)

    পাকিস্তান ১৪৮/৫ (বাবর ৫১, ফখর ৩০, মুজিব ১/১৪)

    ফলাফলঃ পাকিস্তান ৫ উইকেট জয়ী


    এই আসিফ আলীকে নিয়েই কত আলোচনা! যে আসিফ আলী আরও একবার জেতালেন পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের জয়ে এই মূহুর্তে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়তো তাকে দলে নেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই, বিশেষ করে নির্বাচক। সুযোগ তাকে দিয়েছে পাকিস্তান, কিন্ত বিশ্বাসের প্রতিদান পারফরম্যান্সে দিতে ব্যর্থই হয়েছেন। বাদ পড়ে এরপর আবার বিশ্বকাপে তাকে ফেরানোয় হয়েছে সমালোচনা! কিন্ত যে কারণে তাকে নেওয়া, ‘ছক্কা’ হাঁকানোর বিশেষ ক্ষমতার সাথে ফিনিশিং দক্ষতা বিশ্বকাপে দেখিয়ে দিয়ে আরও একটি ম্যাচ ‘ফিনিশ’ করেই মাঠ ছাড়লেন। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের পর এ ম্যাচেও দেখিয়েছেন হিটিং পাওয়ার, দুই ওভারে যখন পাকিস্তানের লাগত ২৪ রান, এক ওভারেই চার ছয় হাঁকিয়ে এক ওভার হাতে রেখেই পাকিস্তানকে জয়ের বন্দরে পৌছিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তানের অলরাউন্ড অ্যাটাকের মুখে বিপদে পড়া আফগানিস্তান ১৪৮ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল, তাতে দুর্দান্ত স্পিনত্রয়ীতে পাকিস্তানকে চাপে ফেললেও শেষমেশ তারা হেরে গেছে ৫ উইকেটে।

    মুজিব এ ম্যাচেও শুরুটা করেছিলেন ভালো। ইনফর্ম রিজওয়ানকে ৮ রানেই ফিরিয়ে দিয়েছেন, অবশ্য তাতে নাভিনের বাউন্ডারি লাইনে নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচেরও অবদান আছে। মুজিব তার কোটা পূর্ণ করেছেন টানা বোলিং করেই। আর কোন উইকেট নিতে পারলেও রান দিয়েছেন মাত্রই ১৪। তবে রিজওয়ানের ফেরার পর ফখর জামান এসে নাবির উপর চড়াও হয়েছেন। এরপর জানাত ও নাবিন তাকে কিছুটা শান্ত রাখতে পেরেছেন, কিন্ত অপর প্রান্তে থাকা বাবর আজম শুরুতে ধীর খেললেও পরে রানের চাকা সচল রাখার কাজটা করে গেছেন। পাওয়ারপ্লেতে ৩৮ রান আনা পাকিস্তান ১০ ওভার শেষে হাতে ৯ উইকেট রেখে ৭২ রান তুলে ফেলে জয়ের দিকেই চোখ রাখছিল। তবে তাদের ‘আসল পরীক্ষা’ বাকি তখনও, রশিদ খানের যে পুরো চার ওভারই বাকি ছিল! 

     

    রশিদ এসেই পাকিস্তানিদের মনে ভয়ের সঞ্চার করেছেন, আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে ফেললেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান বাবর। তবে পরের ওভারে নাবির বলে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে না পেরে ৩০ রানে ফিরেছেন ফখর। রশিদের বলে ব্যাটাররা ভুগলেও আফগানিস্তানের উইকেটের ছিল বড় প্রয়োজন! ফখরের ফেরার পর হাফিজ রশিদের গুগলিতে টপ এজে ১০ রানে ফিরে গেলেও অপর প্রান্তে ‘সেট’ বাবর আফগানদের জন্য হয়ে উঠেছিলেন চিন্তার কারণ। রশিদের বলে সুবিধা করে উঠতে পারেননি বাবরও, তবে রশিদ যখন বাবরকে শেষমেশ প্যাভিলিয়নের পথ ধরালেন, তখন পাকিস্তানের তিন ওভারে লাগে ২৬ রান। ৩ ওভারে ১৪ রান দিয়ে রশিদ ১৭তম ওভারে বোলিংয়ে এসে যে দিয়ে দেন ১২টি রান! অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক রশিদের বল সীমানা ছাড়া করেন। বাবরও আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্যাচ তুলে ফেলেন পয়েন্টে। কিন্ত নাবিন সহজ ক্যাচটিই ফেলে দেন, তবে রশিদের শেষ বলে মারতে গিয়ে বাবরকে বোল্ড হয়ে ৪৭ বলে ৫১ রানে ফিরতেই হয়ে অবশেষে। নাবিন এসে মালিককে ফেরানোর সাথে দুই রানে ওভার শেষ করে আফগানিস্তানকে ম্যাচে ফেরালেও আসিফ আলীর ব্যাটে শেষ ওভার করার সুযোগ আর হয়নি তার!

    আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানের ভালোই যোগসূত্র রয়েছে। আফগান দলের অনেকেই শরণার্থী হিসেবে বেড়ে উঠেছেন পাকিস্তানেই, সেখানেই কেউ কেউ ক্রিকেটের প্রেমে পড়ছেন। পাকিস্তানের ক্রিকেট অনুসরণ করে বেড়ে উঠা নাবি-আসগরদের জন্য তাই পাকিস্তানের সাথে খেলাটা স্বপ্নের মতোই! পাকিস্তানের সাথে আফগানদের ক্রিকেটের প্রতি আবেগ মিলে এই ম্যাচটাকে ঘিরে বেশ উত্তেজনাই তৈরি করেছিলো! আর শাহিন যখন বল হাতে ছুটেন, তখন উত্তেজনার আগমন অনিবার্যই! শাহিন শুরুটা করেছেন ৩ রানের ভালো ওভার করে। আফগানদের ব্যাটিংয়ের মুলমন্ত্র ‘আক্রমণ আর আক্রমণ’ এর ধারা মেনে গেছে তারা! পাওয়ারপ্লে শেষে ৪৯ রান তুলতে পারলেও অবশ্য হারিয়ে ফেলেছিল ৪ উইকেট।

    জাজাই এদিন শূন্য রানেই ইমাদের স্পিনের বিরুদ্ধে বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ফিরেছেন, তার সঙ্গী শাহজাদও ৮ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন শাহিনের বলে মিডঅনে ধরা খেয়ে। ১৩ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। আফগানিস্তানের এমন বিপদ সামলানোর জন্যই আসগর আফগান! তিনিও এসে বসে থাকেননি, শুরুতে কিছুটা সময় নিয়ে পরে ছক্কা-চার মেরেছেন। তবে এরপর ১০ রানে হারিসের পেসে দ্বিধায় পড়ে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে এসেছেন, একই রানে গুরবাজও হাসান আলীর বলে ক্যাচ তুলে ফিরে যান। আসগরের উইকেট হারানোর পর খাদের কিনারা থেকে আফগানিস্তানকে তুলার জন্য আসগরেরই ছোট ভাই কারিম জানাতকে আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনিও কিছুটা সময় ক্রিজে কাটিয়ে ১৭ বলে ফিরে যান ১৫ রানে। নাবি ও নাজিবুল্লাহ চেষ্টা করেছেন সে ধাক্কা সামলে উঠার। কিন্ত আগের বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে শাদাবের পরের গুগলিতেই পরাস্ত হয়ে ২২ রানে নাজিবও ফিরে গেলে আফগানিস্তান ৭৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে। তখন তাদের শক্তির জায়গা- বোলারদের জন্য লড়ে যাওয়ার মতো কিছু একটা পুঁজি গড়াটাই মুল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। 

    গুলবাদিন নাইব ও নাবি সময় নিয়েছেন, এরপর ঝড় তুলেছেন শেষের দিকে। সবমিলিয়ে পাওয়ারপ্লেরর পরের ৯ ওভারে আফগানিস্তান আনতে পেরেছিল মোটে ৪৪ রান। ১৭ ওভার শেষেও তাদের স্কোর ছিল ১০৪, ২০ ওভার শেষে তা ১৪৭ নেওয়াতে যা অবদান এই দুজনেরই। ১৭তম ওভারে হাসানের কাছ থেকে ২১ রান নেওয়ার পর হারিসও ১৫ রান দেন, সেই ১২ বলে নাবি-নাইব হাঁকান ছয় বাউন্ডারি। কিন্ত শেষ ওভারে কোন বাউন্ডারি না দিয়েই শাহিন ৭ রানে ওভার শেষ করলে আফগানিস্তানকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ১৪৭ রানের সংগ্রহেই। যে অবস্থায় ছিলেন, সেখান থেকে এই সংগ্রহেই নাবির খুশি না হয়ে উপায় নেই! কিন্ত পাকিস্তানকে চেপে ধরলেও ম্যাচশেষে তার হাসিমুখে মাঠ ছাড়ার সুযোগটা হলো না! তবে নিঃসন্দেহেই বাকিদের সতর্ক বার্তাই দিয়ে রাখলো আফগানিস্তান!