কিলার মিলারে পাশার দান উল্টে লংকা-থ্রিলার জিতল প্রোটিয়ারা
সুপার ১২, শারজাহ (টস- দক্ষিণ আফ্রিকা/ বোলিং)
শ্রীলঙ্কা ১৪০, ২০ ওভার (নিসাঙ্কা ৭২, আসালাঙ্কা ২১, শানাকা ১১, শামসি ৩/১৭, প্রিটোরিয়াস ৩/১৭, নরকিয়া ২/২৭)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪৬/৬, ১৯.৫ ওভার (বাভুমা ৪৬, মিলার ২৩*, মার্করাম ১৯, হাসারাঙ্গা ৩/২০, চামিরা ২/২৭)
ফলাফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে জয়ী
১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা প্রথম দুই বলেই তুলে নিলেন উইকেট, পূর্ণ করলেন হ্যাটট্রিক। চোকার বলেই যাদের বদনাম সেই দক্ষিণ আফ্রিকার হার দেখার জন্যই প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলো দর্শক, শ্রীলঙ্কানদের মাঝে তখন আগাম জয়ের উল্লাস। ঠিক তখনই পাশার দান উলটে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ছিনিয়ে নিয়েছে জয়! লাহিরু কুমারার শেষ ওভারে টানা দুই ছয় মেরে ডেভিড মিলার ম্যাচ কার্যত শেষ করে ফেললে চার মেরে তুলির শেষ আঁচড় দেন কাগিসো রাবাদা। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে স্নায়ু ধরে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকা ছিনিয়ে নেয় ৪ উইকেটের জয়।
শারজাহর পুরনো উইকেটে ১৪৩ রান তাড়া করতে হিসেবী ক্রিকেট খেলাটা জরুরি; দক্ষিণ আফ্রিকাও সেই পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছিল। কিন্তু দুশমন্থ চামিরা চতুর্থ ওভারেই দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও রিজা হেন্ড্রিকসকে ফেরালে পাওয়ারপ্লেতে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলতে পারে ৪০ রান।
এরপর মাঠে যেন ভুলের হিড়িক পড়ে গিয়েছিলো। যেরকম পাগলাটে ছিল শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিং সেরকমই দিক্বিদিকশূন্য ছিল উইকেটের মাঝে দুই ব্যাটসম্যানের দৌড়। বেশ কয়েকবার ভুল বোঝাবুঝি ও ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেলের খোঁজে দৌড় দিয়েও বিপদের মুখ থেকে দুই জন বেঁচে ফেরেন। তাতে অবশ্য শিক্ষা হয়নি, শেষমেশ রান আউট হয়েই ফিরেছেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। দাসুন শানাকা সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভাঙলে এবারও টেম্বা বাভুমার সাথে ভুল বোঝাবুঝিরই মাশুল দিয়েছেন তিনি। টেম্বা বাভুমার সাথে যোগ দিয়ে ফর্মে থাকা এইডেন মার্করামের বাউন্ডারি বের করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। নিয়মিত প্রান্ত বদল করতে থাকলেও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে স্টাম্প খুইয়ে তিনি থামেন ২০ বলে ১৯ রান করে। সেই হাসারাঙ্গাই নিজের শেষ ওভারে এসে প্রথম দুই বলেই ফেরান টেম্বা বাভুমা ও ডুয়েইন প্রিটোরিয়াসকে, পূর্ণ করেন এই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক।
তবে ম্যাচে যে তখনও নাটক বাকি আরও অনেক। দুশমন্থ চামিরার ১৯তম ওভারে কাগিসো রাবাদা ছয় মেরে বসলে শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের সমীকরণ হয়ে দাঁড়ায় ১৫ রান, হাতে ৪ উইকেট। বারবার চাপে ভেঙে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকার সেই বদনাম ঘুচিয়ে মিলার-রাবাদা মিলে শেষ ওভারে ১৯ রান নিয়ে খাদের কিনারা থেকে দলকে উদ্ধার করে এনে দেন নাটকীয় জয়। ‘দ্যা কিলার” নামের সার্থকতার প্রমাণ দিয়ে মিলার রাবাদার সাথে ১৫ বলে ৩৪* রানের অবিশ্বাস্য জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কার মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নেয় প্রোটিয়ারা।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামতে হলে এর আগে শ্রীলঙ্কার শুরুটা মোটেও আশাব্যাঞ্জক হয়নি। আনরিখ নরকিয়ার করা চতুর্থ ওভারে কুশল পেরেরা ফেরার পর ঐ ওভারে আসে মোটে ৩ রান। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ১৩ রান উঠলে শ্রীলঙ্কা পাওয়ারপ্লেতে তোলে ৩৯ রান।
আরেক ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা উইকেটে থিতু হতে সময় নিলেও এদিনও সপ্রতিভ ছিলেন চারিথ আসালাঙ্কা। তবে দুই রান নিতে গিয়ে কাগিসো রাবাদার দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোতে ২১ রানে থামতে হয় তাকেই। পরের ওভারেই রানের খাতা খোলার আগেই তাব্রেইজ শামসির শিকার হয়ে ফেরেন ভানুকা রাজাপাকসা। বিপদ আরও বাড়িয়ে প্রায় একই ভঙ্গিতে শামসিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান আভিশকা ফার্নান্দো। নিজের শেষ ওভারে এরপর শামসি ফেরান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে, সেই সাথে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেটের রেকর্ড লিখেন নতুন করে।
শামসির দুর্দান্ত স্পেলে এক প্রান্তে উইকেট পতনের মিছিলের মাঝেই আরেক প্রান্ত আগলে রেখে এরপর ৪৬ বলে এই আসরে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি পূর্ণ করেন নিসাঙ্কা। তার সাথে যোগ দিয়ে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দাসুন শানাকা যখনই হাত খুলতে শুরু করেন তখনই ডুয়েইন প্রিটোরিয়াসের আঘাতে ফিরে যান তিনি। ১৮তম ওভারে রাবাদার ওপর চড়াও হয়ে নিসাঙ্কা ১৭ রান তুলে নিলেও সেই প্রিটোরিয়াসের কাছেই তাকে থামতে হয় ৫৮ বলে ৭২ রানের অসাধারণ ইনিংসের পরে। তার আগে ঐ ওভারে চামিকা করুনারত্নেকেও ফিরিয়েছেন প্রিটোরিয়াস, প্রমাণ দিয়েছেন আরও একবার নিজের ডেথ বোলিং সক্ষমতার। শেষ ওভারে নরকিয়া চামিরার উইকেট নেওয়ার পরে শেষ বলে লাহিরু কুমারাকে রান আউটে ফেরালে শ্রীলঙ্কা থামে ১৪২ রানে। ম্যাচে যখন শ্রীলঙ্কার জয় অনিবার্য মনে হচ্ছিল তখনই মিলার-রাবাদার ধ্বংসযজ্ঞে শ্রীলঙ্কাকে হতবাক করে সেই রানতাড়া করে শেষ হাসি হেসেছে বাভুমার দল।