জর্ডান-ওকসের পর বিধ্বংসী বাটলারে উড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া
সুপার ১২, দুবাই (টস- ইংল্যান্ড/ বোলিং)
অস্ট্রেলিয়া ১২৫/১০, ২০ ওভার (ফিঞ্চ ৪৪, অ্যাগার ২০, জর্দান ৩/১৭, ওকস ২/২৩)
ইংল্যান্ড ১২৬/২, ১১.৪ ওভার (বাটলার ৭১, রয় ২২, অ্যাগার ১/১৫)
ফলাফলঃ ইংল্যান্ড ৮ উইকেট জয়ী
টি-টোয়েন্টির বিশ্বমঞ্চে এ দুই দলের লড়াই দেখা যায় না খুব একটা। সর্বশেষ ২০১০ সালে দেখা হয়েছিল দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার। এবার দুইয়ে দুই জয় নিয়ে এসে দুদল মুখোমুখি হয়েছে, কিন্ত ম্যাচটা হয়ে গেছে পুরোপুরি একপেশেই! তবু ম্যাচে উপভোগ্য উপকরণের কমতি ছিল না। বাটলার যখন ব্যাট করেন, তখন তার একেকটা শটে যে আপনার চোখ জুড়িয়ে যেতেই বাধ্য! লক্ষ্য তাড়ায় নেমে তার ৩২ বলে ৭১ রানের ইনিংসে ইংল্যান্ড ৫০ বল হাতে রেখেই জিতে গেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদেরও কিছু করার মতো পুঁজি ছিল না। জ্র্ডান-ওকসে দিশেহারা হয়ে এরপর ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া আটকে গেছে ১২৫ রানেই। ৮ উইকেটে জিতে ইংল্যান্ড এখন এক পা দিয়েই রাখল সেমিফাইনালে! আর অস্ট্রেলিয়ার জন্য সমীকরণটা হয়তো আরও জটিল হলো!
ইংল্যান্ড কত দ্রুত শেষ করতে পারে, আর অস্ট্রেলিয়া কতক্ষণ রুখতে পারে, ১২৬ রান লক্ষ্যতাড়ায় ইংলিশরা নামার আগে সমীকরণ হয়ে গিয়েছিল এরকমই। এ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সমীকরণ থেকে জয় সরে গেলেও নেট রান রেটের হিসাবে এগিয়ে থাকার জন্য অজিদের ম্যাচটা দীর্ঘায়িত করাতেই লাভ ছিল। কিন্ত বাটলার-রয়ের ছিল ভিন্ন পরিকল্পনা। তবে আগের ম্যাচেই ফিফটি হাঁকানো রয় ২০ বলে ২২ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে বাটলার বোলারদের জন্য এক আতঙ্কের নাম! এদিন ফিরেছেন তিনি চেনা ছন্দে। বাটলারের বিধ্বংসী রুপে অস্ট্রেলিয়া হয়ে পড়েছিলো অসহায়! ২৫ বলেই ফিফটি পূর্ণ করেছেন। পাওয়ারপ্লেতেই ইংল্যান্ড তুলে ফেলে ৬৬ রান। জাম্পার বলে এলিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে রয় ফেরার পর মালানও ৮ রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন। কিন্ত বাটলার তার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেছেন, বেইরস্টো এসে তাতে যোগ দিয়েছেন। বাটলরাকে ৩২ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলেই থামতে হয়েছে। ইংল্যান্ড যে ১২৫ পেরিয়ে গেছে ১১.৪ ওভারেই।
প্রতিপক্ষ দল বদলেছে, কিন্ত বোলিংয়ে নেমে পাওয়ারপ্লেতে ইংল্যান্ডের দাপুটে পারফর্ম্যান্সে কোন হেরফের ঘটেনি! ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশের পর অস্ট্রেলিয়াও আজ ভুগেছে ইংল্যান্ড বোলিং অ্যাটাকের সামনে। ওকস-জর্দান মুভমেন্ট পেয়েছেন, তাদের বোলিংয়ে দিশেহারা হয়ে পড়া অস্ট্রেলিয়া পাওয়ারপ্লেতেই হারিয়ে ফেলে ৩টি উইকেট। ওয়ার্নার সুইং মোকাবিলার প্রচেষ্টায় সামনে এগিয়েও ব্যাটের কানায় লাগিয়ে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন ১ রানেই। স্মিথ এসেও একই রানে ফিরে গেছেন জর্দানের বলে বেশ বাইরের বলে পুল করতে গিয়ে, ব্যাটের আগায় লেগে তবু বল পাড়ি দিয়েই দিচ্ছিল মিড অনকে, কিন্ত ওকস এক হাতে লাফ দিয়ে নেন দুর্দান্ত এক ক্যাচ। ম্যাক্সওয়েলকে তাই পাওয়ারপ্লেতেই নামতে হয়েছে ব্যাট হাতে, কিন্ত ছয় রান করে তিনিও ফিরে গেছেন ওকসের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে।
অন্যপাশ থেকে একের পর একজনের আসা-যাওয়া দেখছিলেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। সেই প্রথম ওভারে আদিল রশিদকে তিনি মেরেছিলেন এক চার, এরপর পাওয়ারপ্লেতে আর কোন বাউন্ডারিই মারতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। প্রথম বাউন্ডারির ৩৫ বল পর অস্ট্রেলিয়া পেয়েছিল দ্বিতীয় বাউন্ডারির দেখা। ২১ রানে পাওয়ারপ্লে শেষ করা অজিদের ক্রিজে টিকে থেকে বিপদ কাটিয়ে উঠাটাই তখন জরুরি হয়ে পড়েছিল। আদিল রশিদের গুগলি পড়তে না পেরে স্টইনিস রানের খাতা খুলার আগেই ফিরে গেলে ওয়েড এসে মেরেছিলেন দ্বিতীয় বাউন্ডারিটা। এরপর ফিঞ্চকে কিছু সময় সঙ্গ দিয়ে ওয়েড চেষ্টা করে গেছেন ইনিংস গড়ে তোলার। কিন্ত লিভিংস্টোনের বলে ওয়েডও ১৮ রানে ফিরে গেলে অস্ট্রেলিয়া তাদের পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ফেলে ৫১ রানে। লিভিংস্টোন এ ম্যাচে প্রথমবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে চার ওভারের কোটা পূর্ণ করেছেন, তাতে দিয়েছেন মাত্র ১৫ রান।
অফস্পিনের বিরুদ্ধে দেড়শোর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা ‘ভয়ঙ্কর’ ফিঞ্চের সামনে এ ম্যাচে মঈনকে আনেননি মরগান। তবে বাকিদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ফিঞ্চ সুবিধা করে উঠতে পারেননি। ১৪ ওভার শেষ অস্ট্রেলিয়ার রান যখন ৫৭ ছিল, তখন তিনি ৩৬ বলে ২৫ রানে। এরপর মিলসকে দুটির পর জর্দানকে এক চার মেরেছেন। কিন্ত এই যা, শেষমেশ ফিরে গেছেন ৪৯ বলে ৪৪ রানে। সাত রানে নিজের তিন ওভার শেষ করে ১৭তম ওভারে এসে ওকস দিয়ে দেন ১৬ রান, সে ওভারেই ইনিংসের প্রথম ছয়ের পরের বলেও ছক্কা হাঁকান অ্যাগার। অতিরিক্ত মিলিয়ে ওই ওভার থেকে ২০ রান আসার পর মিলসের ওভার থেকে অস্ট্রেলিয়া ১৫ রান নিয়ে নেয়। শেষের দিকে কামিন্সের দুই ছয়ের পর স্টার্কের আরেক ছয়ে শেষ পর্যন্ত ১২৫ এ পৌছাতে পারে। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে রুখার জন্যে যা যথেষ্ট প্রমাণিত করতে ‘অবিশ্বাস্য’ কিছুরই দরকার ছিল!